শুক্রবার, ২৪শে জানুয়ারী ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১১ই মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লবণাক্ত জমিতে সবজি চাষে ভাগ্য বদল কৃষকের

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:৫৩ অপরাহ্ন, ২৩শে জানুয়ারী ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

লবণাক্ত জমিতে সবজি চাষ করে প্রায় ২ শতাধিক চাষি বদলেছেন নিজেদের ভাগ্যের চাকা। বরগুনার তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের সওদাগরপাড়া প্রায় এক যুগ আগেও লবণাক্ততার কারণে ধান চাষে লোকসানের মুখে থাকা গ্রাম এখন পরিচিতি পেয়েছে ‘সবজি গ্রাম’ নামে। ফেলে রাখা এসব জমিতে বছরজুড়ে এখন সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন ধরনের সবজি ফলাচ্ছেন তারা। বর্তমানে এখান থেকে বছরে প্রায় ৭ কোটি টাকার সবজি বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথমে স্থানীয় কৃষক শাহাদাত মাতুব্বরের উদ্যোগে শুরু হয় সবজি চাষ। তার সফলতা দেখে ধীরে ধীরে গ্রামের অধিকাংশ চাষিই সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বর্তমানে প্রায় ৬৫০ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে শিম, করলা, শসাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন তারা। তাদের দেখাদেখি বর্তমানে এ গ্রামের প্রায় ৮০ ভাগ জমিতেই এখন সবজি চাষ হয়। এতে একদিকে চাষিদের অর্থনৈতিক জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। অপরদিকে বেকার অনেকেরই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

তালতলীর সবজি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চলছে কৃষকদের ব্যস্ততা। যতদূর চোখ যায় শুধু শিম গাছ। বেট কেটে মাটি উঁচু করে মাচা পদ্ধতিতে বিশেষ পরিচর্যায় লাগানো প্রতিটি গাছেই ঝুলছে প্রচুর ফুল ও শিম। চাষিদের পাশাপাশি অনেক বেকার নারী-পুরুষ দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে শিম তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সব জমিতে এক ধরনের সবজি চাষ করায় বোঝার উপায় নেই কোনটি কার জমি। সাধারণ মানুষ না বুঝলেও যার যার জমিতে কাজ করছেন সবাই। প্রতিদিন শিম তোলার পর বস্তায় ভরে স্থানীয় পাইকারদের মাধ্যমে বিক্রির জন্য পৌঁছে যায় বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

স্বামীর সঙ্গে সবজি চাষে সমানভাবে কাজ করছেন নুরজাহান বেগম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগে ধান চাষ করতাম। ধান চাষে তেমন লাভ হয়নি। গ্রামের একজনকে সবজি চাষ করতে দেখে ৫০ হাজার টাকায় জমি কিনে সবজি চাষ শুরু করি। এ বছর এক মৌসুমে সবজি ক্ষেত থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকার করলা ও শসা বিক্রি করেছি। এখন ক্ষেতে শিম গাছ আছে। প্রতিদিন বিকেলে পাইকাররা দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে শিম বিক্রি করেন। সপ্তাহ অন্তর তারা বিক্রির টাকা আমাদের বুঝিয়ে দেন। বর্তমানে সবজি চাষ করে আগের তুলনায় ভালোই লাভবান হচ্ছি।’

একই গ্রামের চাষি নাজনীন বেগম বলেন, ‘একসময় ধান চাষ করলেও আয় কম ছিল। সবজি চাষে লাভ দেখে জমি কিনে শিম ও অন্য সবজি চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার বড় ছেলে মাস্টার্স পাস করেছেন। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে।’

আরও পড়ুন: ভোলার চরাঞ্চলে সবজির ব্যাপক ফলন, দামেও খুশি কৃষক

আরেক চাষি মো. আব্দুল মান্নান ফকির বলেন, ‘এলাকায় প্রথমে তিনজন সবজি চাষ শুরু করেন। তাদের দেখে পার্শ্ববর্তী অনেকেই চিন্তা করলাম, সবজি চাষে লাভ আছে। ধান চাষে তেমন কোনো লাভ নেই। পরে আমার জমিতে ধানের পরিবর্তে সবজি চাষ শুরু করি। এ বছর একটি সবজি ক্ষেত থেকে প্রায় ৭ লাখ টাকা বিক্রি হবে। বর্তমানে সওদাগর পাড়ার প্রায় সব চাষিই ধান চাষ বাদ দিয়ে সবজি চাষ করতে শুরু করেছেন।’

বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সিএম রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে জানান, লবণাক্ত জমিতে মাটি কেটে উঁচু করে সবজি চাষে এই গ্রাম এখন সাফল্যের উদাহরণ। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এখানকার চাষিরা বছরে কোটি টাকার সবজি বিক্রি করছেন। সওদাগরপাড়া গ্রামের এই সাফল্য অন্য অঞ্চলের চাষিদেরও অনুপ্রাণিত করছে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় এখানকার সবজি চাষিরা ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, ‘বরগুনার তালতলী উপজেলার সবজি গ্রাম একটি মাইলফলক। বিশেষ করে এখানে শ্রমিকদের মধ্যে নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার বেশি। গত বছর মরিচের আবাদ থেকে তারা উচ্চমূল্য পাওয়ায় এ বছর শিমের আবাদ করেছেন। তারা প্রতিটি ফসলই সম্মিলিত চাষ করেন। তাই তাদের সফলতা বেশি।’

তিনি বলেন, ‘এই সবজি গ্রাম থেকে আমরা আশা করছি বরগুনা সারাদেশে একটি মডেল হিসেবে দেখা দেবে। কারণ এত বড় সম্মিলিত সবজি চাষ সারাদেশে আমার জানামতে আর কোথাও নেই। আমরা কৃষি বিভাগ এ ধরনের কাজকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে সব সময় তাদের সঙ্গে আছি।’

এসি/কেবি

সবজি চাষ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন