প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)
আপনি কি উচ্চতা কম থাকায় দুশচিন্তায় ভুগছেন? আপনার জন্য রয়েছে দারুণ সুখবর! একাধিক গবেষণা জানাচ্ছে, তুলনামূলক কম উচ্চতার মানুষেরাই বেশি দিন বাঁচেন। আর এর বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যাও দিয়েছেন গবেষকেরা।
ইতালীয় মিলিটারিতে চাকরি করা সৈন্যদের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, যাদের উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি বা এর কম, তারা তাদের চেয়ে বেশি উচ্চতার সৈন্যদের চেয়ে ২ বছর ৮ মাস বেশি বেঁচেছেন। এই সৈন্যরা সবাই ১৮৬৬ থেকে ১৯১৫ সালের ভেতর জন্ম নিয়েছেন। এ গবেষণায় গবেষকেরা ওজন বা বিএমআইকে (বডি মাস ইনডেক্স) আমলে নেননি।
বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের গড় আয়ু
২০১৭ সালে পরিচালিত এ গবেষণা ৩ হাজার ৯০১ জন বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের ওপর পরিচালিত হয়। তারা সবাই ১৯৪৬ সাল থেকে ২০১০ সালের ভেতর খেলেছেন। এই খেলোয়াড়দের ২ ভাগে ভাগ করা হয়। এক ভাগের গড় উচ্চতা ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি। আরেক ভাগের গড় উচ্চতা ৬ ফুট। প্রথম দলের গড় আয়ু ছিল ৭৬ বছর। দ্বিতীয় দলের ৭৮ বছর ৩ মাস।
উল্লেখ্য, জীবনযাপন পদ্ধতি, ধূমপান বা অ্যালকোহল আসক্তি, ক্রনিক রোগ (ক্যানসার, হৃদ্রোগ, অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, জিনগত প্রভাব, স্থূলতা) ইত্যাদির প্রভাবে কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা গেছে।
এখন প্রশ্ন হলো, এই জরিপগুলো কি কেবলই কাকতালীয় ঘটনা, নাকি আসলেই উচ্চতা বেশি হওয়ার সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে?
আরো পড়ুন : শুধু পানি দিয়েই হবে ত্বকচর্চা!
বিশেষ ধরনের জিন
এফওএক্সও থ্রি (FOXO3) নামের একধরনের জেনোটাইপ আছে, যা উচ্চতা ও দীর্ঘজীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষণায় দেখা গেছে, এই জিনের প্রভাবে কম উচ্চতার মানুষেরা দীর্ঘজীবী হন। ৫ ফুট ২ ইঞ্চির কম উচ্চতা যাদের, তাদের ওপর এই জিনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এমনকি নারী–পুরুষনির্বিশেষে ৫ ফুট ২ ইঞ্চির চেয়ে কম উচ্চতা যাদের, তাদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হারও সবচেয়ে কম।
কম উচ্চতার মানুষেরা কেন তুলনামূলকভাবে দীর্ঘজীবী?
জিনগত প্রভাব ছাড়াও কম উচ্চতার মানুষদের দীর্ঘজীবী হওয়ার পেছনে বিজ্ঞানীরা কয়েকটি কারণ দেখিয়েছেন।
লম্বা মানুষদের কোষের সংখ্যা কম উচ্চতার মানুষদের তুলনায় কয়েক ট্রিলিয়ন বেশি। তাদের ত্বকে ফ্রি–র্যাডিকেলের প্রভাব ও কোলাজেন ভেঙে যাওয়ার হারও বেশি। ফলে অধিক উচ্চতার মানুষদের ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে সহজেই। আর এ কারণেই কম উচ্চতার মানুষদের ত্বকে বয়স ধরা পড়ে কম।
কম উচ্চতার মানুষদের হাড় অন্যদের তুলনায় ছোট। শরীরের ভেতরকার অঙ্গপ্রত্যঙ্গও আকারে ছোট। তারা তুলনামূলকভাবে কম খাবার খান। তাদের খাবারকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হয় কম। তাদের পক্ষে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। যাদের উচ্চতা বেশি, তাদের হাড়ক্ষয়, জয়েন্টে ব্যথাসহ হাড়জনিত সমস্যায় ভোগার হারও বেশি। উচ্চতা যাদের বেশি, তাদের জন্য শরীর সুস্থ রাখা বেশি চ্যালেঞ্জিং।
২০১৬ সালে উচ্চতার সঙ্গে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বিষয়ে ১৪ হাজার ৪৪০ পুরুষ ও ১৬ হাজার ৩৯০ নারীর ওপর একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। তাদের সবাই মার্কিন নাগরিক, বয়স ২৫-এর বেশি। এ গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ইঞ্চি উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২ দশমিক ২ শতাংশ করে বাড়ে। আর নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
২০১৩ সালে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭০১ জন মার্কিনির ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মেনোপজের পর নারীদের থাইরয়েড, স্তন, ওভারি, কোলনসহ প্রায় সব ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। এমনকি লম্বা নারীদের ভেনাস থ্রম্বোইম্বোলিজম (ভিটিই) বা শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে নানা জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার হারও বেশি। গবেষকেরা ধারণা করছেন, লম্বা পা ও লম্বা শিরার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে।
সূত্র: হেলথলাইন
এস/ আই.কে.জে