ছবি: সংগৃহীত
সকালে ঘড়ির অ্যালার্ম বাজার ঠিক আগেই ঘুম ভেঙে যায়—এমন অভিজ্ঞতা কী আপনার হয়েছে? অনেকেই ভেবে বসেন, হয়তো ঘুমের মধ্যেই সময় ধরার একধরনের বিশেষ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে!
আসলে ব্যাপারটা একেবারে অলৌকিক নয়—বরং বিজ্ঞানসম্মত কারণেই এমনটা হয়ে থাকে। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব স্লিপ মেডিসিন-এর বিশেষজ্ঞ ডা. আন্দ্রেয়া মাতসুমুরা দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে বলেছেন, আমাদের শরীর ও মনের মধ্যে এমন কিছু স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কাজ করে, যার ফলে অ্যালার্মের আগেই চোখ খুলে যেতে পারে। তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন তিনটি সম্ভাব্য কারণে।
১. শরীরের ঘুম-জাগরণের নিজস্ব ঘড়ি
আপনার ঘুম যদি প্রতিদিন একই সময়ে হয় এবং ঘুমের পর নিজেকে সতেজ মনে হয়, তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনার ‘সার্কাডিয়ান রিদম’ ঠিকঠাক কাজ করছে।
ডা. মাতসুমুরা বলেন, ‘যদি নিয়মিত ৭ ঘণ্টার বেশি ঘুমান এবং জেগে উঠে নিজেকে সতেজ মনে হয়, তবে বুঝবেন আপনার ঘুমচক্র একেবারে সঠিক পথে আছে।’
মানবদেহের এ ঘড়ি আলো ও অন্ধকারের সঙ্গে সংবেদনশীল। সন্ধ্যায় মেলাটোনিন নিঃসরণ শরীরকে ঘুমের সংকেত দেয়, আর সকালে সূর্যের আলোয় ঘুম ভাঙে। তাই সঠিক আলো-অন্ধকারের পরিবেশ এবং ঘুমের রুটিন বজায় রাখলে, অ্যালার্ম ছাড়াই ঘুম ভাঙা অস্বাভাবিক নয়।
২. অজান্তে উদ্বেগ কাজ করে
পরের দিন কোনো জরুরি কাজ বা ভ্রমণ থাকলে মনের ভেতরে এক অজানা চাপ কাজ করতে পারে। এ উদ্বেগ শরীরে কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা ঘুমের মধ্যে জেগে ওঠার সংকেত পাঠায়।
ডা. মাতসুমুরা বলেন, ‘এ মানসিক প্রস্তুতি দেহকে অ্যালার্মের আগেই জাগিয়ে দেয়।’ অনেক সময় মনে না থাকলেও রাতে একাধিকবার জেগে ওঠাও এ চাপের লক্ষণ হতে পারে।
৩. মনকে আপনি নিজেই প্রশিক্ষিত করেছেন
এটিকে অবিশ্বাস্য মনে হলেও অনেকে সত্যিই এমনভাবে নিজেদের অভ্যস্ত করে ফেলেন, যাতে তারা ঠিক সময় মতো ঘুম থেকে উঠে যান—অ্যালার্ম ছাড়াই।
ডা. মাতসুমুরা বলেন, স্নায়ুবিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কে ‘ম্যানিফেস্টেশন’ বা ইচ্ছাশক্তির প্রভাব সত্যিই কাজ করতে পারে।
এটি একধরনের মানসিক প্রস্তুতি বা আত্মবিশ্বাস, যেটিকে স্নায়ুবিজ্ঞানীরা বলেন, ‘মনস্তাত্ত্বিক সময় নির্ধারণের ক্ষমতা’। অনেকটা খেলোয়াড়দের মতো, যারা আগেভাগেই মানসিকভাবে নিজের সাফল্য কল্পনা করেন।
যদি নিয়মিত অ্যালার্মের আগেই ঘুম ভাঙে এবং আপনি ক্লান্ত বোধ না করেন, তাহলে চিন্তার কিছু নেই—আপনার শরীর নিজের ছন্দে কাজ করছে। তবে যদি উদ্বেগ, ঘুম ভাঙা ও ক্লান্তির সমস্যা হয়, তাহলে ঘুমের সময় ঠিক রাখা, স্ক্রিন টাইম কমানো এবং আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন