ছবি : সংগৃহীত
আমাদের সবার জীবনেই এমন একটি সময় আসে, যখন আমরা কিছু কথার সম্মুখীন হই। যেমন- আমাকে দিয়ে কিছু হবে না, আর পারছি না। জীবনের উঁচু নিচু পথ পাড়ি দিতে গিয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলি। প্রত্যেক সফল মানুষের জীবনের একটি অংশ জুড়ে রয়েছে ব্যর্থতা। কিন্তু তাদের সফলতার রহস্য হলো, প্রবল ধৈর্যের সাথে ইচ্ছা শক্তি।
অনেকেই খুব অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়েন বা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। ধৈর্যের পরীক্ষা সাধারণত বন্ধ দরজার ভেতরেই ঘটে থাকে। ধৈর্য না থাকলে দীর্ঘমেয়াদী কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। আপনার ধৈর্য যদি কম হয়ে থাকে তাহলে তা কয়েকটি উপায়ে ধীরে ধীরে অনুশীলনের মাধ্যমে বৃদ্ধি করতে পারেন। চলুন জেনে নিই ধৈর্য বাড়ানোর এই কৌশল যেগুলো আপনার জীবনকে অনেকটাই সহজ করবে।
১. আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। জীবনে চলার পথে নানা রকম সমস্যা আসবে। পরিস্থিতি সবসময় আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্যহারা হলে চলবে না। আপনি কোনো কিছু নিয়ে বিরক্ত বা হতাশ হলে, সময় দিন। হাল ছাড়বেন না। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ভেঙে পড়া যাবে না। নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। নিজের সাথে কথা বলুন ও বোঝান। চোখ বন্ধ করে বড় বড় নিশ্বাস ছাড়ুন। সম্ভব হলে ইয়োগা বা মেডিটেশন করুন। এতে মানসিকভাবে স্বস্তি পাবেন।
২. ভালো শ্রোতা হওয়ার চেষ্টা করুন
ভালো বক্তা হওয়ার মতো ভালো শ্রোতা হওয়াও একটা অসাধারণ গুণ। ধরুন, কেউ আপনাকে খুব আগ্রহ নিয়ে কোনো ঘটনা বলছে কিংবা তার আনন্দ, কষ্টের কথাগুলো ভাগাভাগি করতে চাইছে। কিন্তু আপনি তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা দূরে থাক, কোনো আগ্রহই প্রকাশ করছেন না। এতে আপনার ধৈর্যহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। অন্যের কথা শোনার চেষ্টা করুন। বিষয় যাই হোক না কেন, সে কী বলছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। ভালো শ্রোতা হয়ে উঠুন। ধৈর্য বৃদ্ধি করার আরেকটি সহজ উপায় হলো ভালো শ্রোতা হওয়া।
আরো পড়ুন : প্রিয়জনের মন ভালো হবে যা করলে
৩. ধৈর্য না হারিয়ে মেনে নিতে শিখুন
যে পরিস্থিতি আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে তা মেনে নিতে শিখুন। এটি আপনার ধৈর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে প্রতিদিনের বিভিন্ন ঝামেলা সহজে এড়াতে পারবেন। নিজের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করুন। অধিকাংশ সময় আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলি। কারণ আমাদের সবকিছু দ্রুত পরিবর্তন করার প্রবণতা থাকে। সবকিছু নিজের মতো করে পেতে চাই। কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে সমঝোতা করতে হবে। আপনি সব পরিবর্তন করতে পারবেন না। বরং সেগুলো গ্রহণ করতে শিখুন।
৪. নিশ্বাসের ব্যায়াম করুন
নিশ্বাসের ব্যায়াম আপনাকে দুইভাবে উপকার করতে পারে। প্রথমত, আপনার লক্ষ্য ঠিক রাখবে। আর দ্বিতীয়ত, আপনার স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে আপনি সহজে ধৈর্যশীল হয়ে উঠতে পারেন। কোনো রকম অভিযোগ ছাড়া জীবনের মুহূর্তগুলো উপভোগ করুন।
৫. নোট বা ডায়েরি লিখুন
যেকোনো বিষয় ডায়েরিতে লিখে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি আপনার কাজে মনোযোগী হতে সাহায্য করবে। আপনি নিয়মিত ডায়েরি সারাদিনে কাজের কথা লিখতে পারেন। আবার ছোট ছোট গল্প লিখতে পারেন। এগুলো আপনার ধৈর্য বাড়াতে সাহায্য করবে।
৬. সহানুভূতিশীল হোন
কোনো বিষয় নিয়ে শুরুতেই অধৈর্য হবেন না। অন্যের ওপর প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে নিজে একবার ভাবুন। কেন এমন হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার কোথাও কোনো ভুল আছে কিনা দেখুন। এছাড়া তার জায়গায় আপনি থাকলে কী করতেন। এভাবে ভাবলে অনেক জটিল সমস্যাও সহজে সমাধান করা যায়। মনে রাখবেন, সহানুভূতিশীলটা বড় একটি গুণ। এতে আপনার ধৈর্যধারণ ক্ষমতাও বাড়বে।
৭.একসঙ্গে একাধিক কাজ না করা
কখনো একসঙ্গে অনেকগুলো কাজ করবেন না। এতে আপনি কোনো কাজেই মনোযোগ দিতে পারবেন না। ফলে কাজের চিন্তায় অস্থিরতা কাজ করবে। সময়ের কাজ সময়ে করতে না পেরে অধৈর্য হয়ে পড়বেন। তাই একসঙ্গে অনেক কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। একটি শেষ করে অন্যটিতে মনোযোগ দিন।
৮.সময় ব্যবস্থাপনা
দৈনন্দিন জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যবস্থাপনা। যদি আপনি সঠিকভাবে তা প্রয়োগ করতে পারেন। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে শিখুন। তা না হলে আস্তে আস্তে অনেক কাজ জমে যাবে। কিন্তু, সেগুলো করার জন্য হাতে সময় কম থাকে। তখন কাজের অতিরিক্ত চাপে অধৈর্য হয়ে পড়বেন। তাই আপনাকে সময় ধরে কাজ করায় পারদর্শী হতে হবে। এর ফলেই ধৈর্য রাখা সম্ভব। সময়কে ঠিকমতো গুছিয়ে নিতে পারলে আপনার দ্বারা সবই সম্ভব।
আমরা সবাই ধৈর্যশীল হওয়ার কথা বলি। কিন্তু, অধৈর্যের কারণ নিয়ে কথা বলি না। কী কী কারণে আপনি সহজে অধৈর্য হয়ে যাচ্ছেন, সেগুলো খুঁজে বের করুন। ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য ইচ্ছাশক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিজের ইচ্ছা আর চেষ্টা-ই আপনাকে ধৈর্যশীল করে তুলতে পারবে।
এস/ আই. কে. জে/