ছবি: সংগৃহীত
মোছাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। বয়স চল্লিশের কোঠায়। সড়ক দুর্ঘটনায় অটো রিকশাচালক স্বামী মো. আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুর পর অন্যের জমিতে কাজ করেই তিন সন্তান নিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন। পাশাপাশি ভেড়া পালন শুরু করেন। শুরুতে দুয়েকটি ভেড়া থাকলেও এখন তার ১৫টি ভেড়া রয়েছে। তার সঙ্গে দুই ছেলে সালাম ও সোলেমানও ভেড়ার দেখভাল করেন। শুরুতে কষ্ট করলেও এখন তিনজনের আয় দিয়ে সংসার চালিয়ে সঞ্চয়ও গড়েছেন কিছু। এখন রাবেয়া স্বাবলম্বী।
শুধু রাবেয়া-ই নয়, গাইবান্ধায় ভাঙন কবলিত যমুনা চরের প্রায় সকল নারী-পুরুষের একই গল্প। ভেড়া পালন সংসারের চাহিদা মিটিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে তারা।
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের চর সিধাইয়ের তেমনই একজন স্বাবলম্বী নারী সাবিনা বেগম (৩৫)। কৃষক স্বামীসহ অভাবের সংসারে চার সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ ছিল খুবই কষ্টের।
তিনি বলেন, আমাকে বিনামূল্যে একটি ভেড়া দেওয়া হয়। সেখান থেকে ২০ থেকে ২২টি ভেড়া বিক্রি করেছি। এখন ভেড়ার সংখ্যা ১২টি। প্রতি বছর ভেড়া বিক্রি করে তার আয় লাখ টাকার বেশি। একটি ছোট ভেড়ার দাম ৩ হাজার ও বড় ভেড়া ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার প্রায় ৩০টি পরিবার ভেড়া পালন করে সচ্ছলতা এনেছে। জানা গেছে, উপজেলার কড়াইবাড়ী চরের ছকিনা বেগম (৫৫), মল্লিকা বেগম (৬৫), কোহিনুর বেগম (৪০), নার্গিস আক্তার (৩২) ও মর্জিনা বেগম (৬০) ভেড়া পালনে দেখেছেন সাফল্যের মুখ। ভেড়া পালন করেই চলছে তাদের সংসার।
মোল্লার চরের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান জানান, গাইবান্ধার তিস্তা যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বুকজুড়ে ১৬৫টি চর রয়েছে। গাইবান্ধার, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জসহ চার উপজেলার এসব চরে অন্তত ৩ লাখ মানুষ বাস করে। বিশেষ করে তিস্তাসহ তিন নদীর দুর্গম চরাঞ্চল কাপাসিয়া, বেলকা, তারাপুর, হরিপুর। গাইবান্ধার মোল্লারচর, কামারজানি, এ্যাড়েন্ডাবাড়ি, উড়িয়া ও কঞ্চিপাড়া। সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, কামালেরপাড়া, সাঘাটা সদরসহ অন্তত ১৩টি ইউনিয়ন দুর্গম চরাঞ্চল।
চরাঞ্চলের বাসিন্দা ও উপকার ভোগী শিল্পি বেগম বলেন, এসব এলাকার প্রায় ৩ লাখ মানুষ তাদের জীবন-জীবিকা যাপনে চাষাবাদ ও গবাদি পশুসম্পদের ওপর নির্ভর করে। তারা সারা বছর কোনো না কোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করে বুক উঁচু করে বাস করে। বিয়েসহ অন্যান্য বিপদ কাটে গরু ছাগল হাঁস মুরগি বিক্রি করে। তারপরেও তারা সুখী মানুষ।
তিনি বলেন, ‘আমি একটি ভেড়া পেয়েছি। তার অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমি এখন পাঁচটি ভেড়ার মালিক হয়েছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফ্রেন্ডশিপ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়ের গবেষণার নতুন সফলতা হিসেবে স্থানীয় নারীদের উন্নতজাতের ভেড়া দিয়েছেন। যেমন উচু, তেমন লম্বা। দেখতে বেশ সুন্দর। অল্প সময়ে অনেক বড় হওয়ায় তাদের আনন্দের সীমা নাই।
আরও পড়ুন: তিতির পেলে বেকারত্ব দূর করেছেন রাজবাড়ীর যুবক রুবেল
এসি/ আই.কে.জে