ছবি- সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে ছয় মাস হয়ে গেছে। কিন্তু দেশের অর্থনীতি এখন পর্যন্ত সঠিক পথ খুঁজে পায়নি। রপ্তানি খাত ছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচকে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে।মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে চলে গিয়েছে। ব্যাংক ঋণ ও এলসি সমস্যার কারণে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
কর্মজীবী বহু শ্রমিক বেকার হচ্ছে। প্রতিশ্রুত বৈদেশিক সহায়তা মিলছে না, বরং অনেক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বড় প্রকল্পের কাজগুলো বন্ধ রয়েছে। ছোট ছোট প্রকল্পের কাজগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও কমছে। হচ্ছে না কোনো নতুন প্রকল্প।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর নানামুখী সংকটে অর্থনীতির কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ছে।সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও স্পষ্ট হয়ে পড়ছে। ফলে শুরুতে অর্থনীতির সূচকগুলোর যে ধীর গতি ছিল, তা এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতি এখন যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে আগামী বাজেটের হিসাব-নিকাশ মেলাতে অনেক কাটছাঁট করতে হবে। বিশেষ করে রাজস্ব আয়ের বড় রকমের ঘাটতি হয়েছে এবং প্রত্যাশিত বৈদেশিক সহায়তা না পাওয়ায় সরকারের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে। এই শঙ্কা কাটাতে চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে ভ্যাট বাড়ানোর মতো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। তবে গণচাপে সেই সিদ্ধান্তও কিছুটা সংশোধন করতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ সহায়তা বন্ধ করা, মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যার ফলে আগামী দিনগুলোতে আর্থিক বিশৃঙ্খলা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের এই শঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, গত কয়েক মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে রয়ে গেছে। গত মাসের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বাড়তি মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে নীতিনির্ধারণী সুদহার বাড়ানোর দিকেই ঝুঁকছেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। তবে ঋণের সুদহার বাড়লে তা বেসরকারি খাতের সংকট আরও বাড়িয়ে দেবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে বাংলাদেশে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া গেছে ৩ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কম। গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে ৪ দশমিক ০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল। রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি শুধু যে বৈদেশিক সহায়তা কমেছে তাই নয়, সরকারের রাজস্ব আয়ও কমছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা কম। কমছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, সরকারের আয়ের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও কমে গেছে। এমনকি রপ্তানিমুখী অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতেও কমছে বিনিয়োগ। বৈশ্বিক ও দেশের অভ্যন্তরীণ নানা কারণে গত ছয় মাসে ইপিজেডগুলোতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২২ শতাংশ কমেছে।
ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা নানামুখী সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে জনগণ মুদ্রাস্ফীতির চাপে পিষ্ট হচ্ছে।সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অর্থনীতি এখন উল্টো পথে চলছে। অন্যদিকে এমন পরিস্থিতিতে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, ‘নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না’। তিনি যথার্থই বলেছেন। এদেশে এখন দ্রুত গণতান্ত্রিক সরকার দরকার। এমন পরিস্থিতি থেকে জনগণকে মুক্তি দেয়া হোক।
আই.কে.জে/