সোমবার, ৩১শে মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা টিকার সুরক্ষা এখনও অটুট

স্বাস্থ্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৬:০৪ অপরাহ্ন, ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫

#

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

পুরনো করোনা টিকার সুরক্ষা ফিকে হলেও এখনও অটুট রয়েছে। এ কারণে নতুন ভাইরাস মানুষে সংক্রমিত হলেও তা কখনওই মহামারী বা অতিমারীর চেহারা নেবে না।

নতুন এক ধরনের করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব ইতিমধ্যেই জানান দিয়েছেন চীনের গবেষকরা। সেই এইচকেইউভি৫-কোভ২ প্রসঙ্গে ‘সেল’ জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই করোনা নিয়ে  আলোচনা সারা দুনিয়ায়। নতুন চীনা ভাইরাসের ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী কৌতূহল ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পর্বে বিশ্বজোড়া টিকাকরণের কল্যাণে নতুন ভাইরাসের এই অতিমারী সৃষ্টির আশঙ্কা প্রায় নেই।

বিশেষজ্ঞরা অভয় দিয়ে বলছেন, এখনই এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগার কোনও কারণ নেই। প্রথমত, এই ভাইরাসের অস্তিত্ব এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র বাদুড়ের শরীরেই চিহ্নিত, মানুষে সংক্রমণের কোনও নজির এখনও পর্যন্ত নেই। আর দ্বিতীয়ত, বিশ্বজুড়ে যে টিকাকরণ-যজ্ঞ চলেছে করোনা পর্বের সময়ে, তাতে এই নতুন ভাইরাস মানুষে সংক্রমিত হলেও তা কখনওই মহামারী বা অতিমারীর চেহারা নেবে না। কারণ, পুরনো টিকার সুরক্ষা ফিকে হলেও অটুট রয়েছে এখনও।

নভেল করোনাভাইরাসের মতো এইচকেইউভি৫-কোভ২ ভাইরাসটির অস্তিত্বও মিলেছে বাদুড়ের শরীরে। এবং সেটিরও সন্ধান মিলেছে সেই চীনের উহানেরই গবেষণাগারে। আবার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নভেল করোনাভাইরাস যেভাবে শরীরের অ্যাঞ্জিয়োটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম-২ বা এসিই-২ রিসেপ্টরকে আঁকড়ে ধরেই সংক্রমণটা ঘটায়, এইচকেইউভি৫-কোভ২ ভাইরাসও তেমন করেই শরীরে গেঁথে সংক্রমণ ঘটায়।

আশার কথা হলো, করোনাভাইরাসের তিন পুরোনো রূপ সার্সকোভ, মার্সকোভ এবং নভেল করোনাভাইরাস বা সার্সকোভ২-এর মতো মানুষে সংক্রণের উপযোগী ‘হোস্ট সুইচিং’ লক্ষ্য করা যায়নি এইচকেইউভি৫-কোভ২–এর। অর্থাৎ, সংক্রমণটি এখনও সীমিত বাদুড়ে শরীরেই।

তবে আগামী দিনে জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে মিউটেশনের জেরে যে মানুষে সংক্রমণ ঘটানোর বৈশিষ্ট্য অর্জন করবে না এইচকেইউভি৫-কোভ২, সে কথাও হলফ করে এখনই বলা যায় না বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। যদিও সে ক্ষেত্রেও করোনা-টিকার ইমিউনিটি অনেকটাই মানুষের কাজে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পর্ণালী ধর চৌধুরী বলেন, ‘অতিমারী পর্বে সারা দুনিয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ কোভিড ভ্যাকসিন নিয়েছেন। ভারতসহ বিভিন্ন দেশে অন্তত ৯০ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনা গিয়েছিল। তাই আগামী দিনে এইচকেইউভি৫-কোভ২ কোনোভাবে যদি মানুষে সংক্রমণ ঘটানোর চেষ্টা করে, তা প্রতিহত করার জন্য কিন্তু ওই পুরোনো টিকার সুবিধা পাওয়া যাবে। কারণ নতুন ভাইরাসটির সঙ্গে মার্সকোভের অনেক মিল রয়েছে।’

সম্ভাব্য সংক্রমণ এড়াতে করোনা-টিকার কাজে আসার কথা বলছেন ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সৌরীশ ঘোষও। তিনি বলেন, ‘সার্সকোভ২, মার্সকোভের মতোই এইচকেইউভি৫-কোভ২ ভাইরাসও মার্বেকোভাইরাস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। একই ভাবে সেটি এসিই-২ রিসেপ্টরে হামলা চালিয়েই সংক্রমণ বাঁধায়। তাই আগামী দিনে কোনোভাবে যদি নয়া এই ভাইরাস মানুষকে আক্রমণ করতে আসেও, তখন করোনা টিকার সুরক্ষা কাজে আসবে। কারণ, ওই টিকার জোরে মানুষ অনেকটাই সুরক্ষিত এই গোত্রের ভাইরাস থেকে।’ তার পর্যবেক্ষণ, সে জন্যই ২০২২ সালের পর নভেল করোনাভাইরাসের একের পর এক নতুন প্রজাতি ও উপপ্রজাতি হামলা চালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে, খুব বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়নি এবং হলেও খুব একটা অসুস্থ হয়ে পড়েনি।’

আর এক ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদারও একমত হয়ে বলেছেন, ‘বাদুড়ের শরীরে মেলা অনেক ভাইরাসের মধ্যে এটি একটি নমুনামাত্র। এই মুহূর্তে যেহেতু ‘স্পিল ওভার’ বা ‘স্পিসিস ব্যারিয়ার ব্রেকিং’-এর মাধ্যমে নতুন ভাইরাসটির মানুষে কিংবা অন্য প্রাণীতে চলে আসার খবর নেই, তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। আর এর প্রকৃতি যেহেতু সাম্প্রতিক অতিমারী তৈরি করা ভাইরাসের সঙ্গে অনেকটাই অভিন্ন, করোনার টিকাগুলোও তাই এর বিরুদ্ধেও কাজে আসবে।’ 

তবে তিনি মনে করেন, এআই বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন এই সব সম্ভাব্য সংক্রমণ মোকাবিলার আগাম চ্যালেঞ্জ সামলাতে উন্নত টিকা তৈরির কাজ হাতে নেওয়া উচিত বিজ্ঞানীদের।

সূত্র : এই সময়

কেসি/কেবি


করোনা টিকা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন