শুক্রবার, ১৪ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোরআন, বাইবেলে বর্ণিত নুহের (আ.) নৌকার সন্ধান পাওয়া গেছে?

ধর্ম ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৩:৩৬ অপরাহ্ন, ১লা মার্চ ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

নুহ (আ.) প্রাচীন নবীদের একজন। কোরআনে তার আলোচনা ৪২ জায়গায় এসেছে। তার আমলে নৌকার কাহিনিকে সবচেয়ে বেশি চর্চিত ধর্মীয় কাহিনিগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বলা হয়ে থাকে, এ কাহিনি শোনেননি, এমন লোক পৃথিবীতে খুব কম আছেন।

মুসলমান, খ্রিষ্টান ও ইহুদিরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে নুহ (আ.) এমন একটি নৌকা বানিয়েছিলেন, মহাপ্লাবনের সময় যেটিতে আশ্রয় নিয়ে মানুষ ও পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করেছিল।

মহাপ্লাবনের পর বিশাল আকৃতির সেই নৌকার পরিণতি ঠিক কি হয়েছিল? সেটির অস্তিত্ব কি এখনও টিকে আছে? যদি টিকে থাকে, তাহলে নৌকাটি ঠিক কোথায় রয়েছে? এমন নানা প্রশ্ন শত শত বছর ধরে মানুষের মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে অনুসন্ধানও কম চালানো হয়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুসন্ধান চালানো হয়েছে তুরস্কের আরারাত পর্বতে, যেটির উচ্চতা পাঁচ হাজার মিটারের বেশি। কারণ, মহাপ্লাবনের পর এই পর্বতেই নুহের (আ.) নৌকা নোঙর ফেলেছিল বলে খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে উল্লেখ আছে। 

বিভিন্ন সময় সেখানে নুহের (আ.) নৌকা খুঁজে পাওয়ার দাবি করেন অনেকে। সম্প্রতি গবেষকদের একটি দল দাবি করেন, তুরস্কে তারা পাঁচ হাজার বছর আগের বিশাল একটি নৌকার ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন। এটি নুহের (আ.) নৌকার ধ্বংসাবশেষ বলে ধারণা করছেন তারা। বিবিসি, এনডিটিভি ও জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

তুরস্কের আরারাত পর্বতের দুরুপিনার সাইটে খননকাজ চালিয়ে অন্তত পাঁচ হাজার বছরের পুরনো বিশাল আকৃতির একটি নৌকার ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন বলে সম্প্রতি দাবি করে প্রত্নতত্ত্ববিদদের একটি দল। এটি নুহের (আ.) নৌকার ধ্বংসাবশেষ বলেই ধারণা করছেন তারা। ‘মাউন্ট আরারাত অ্যান্ড নোয়াহস আর্ক রিসার্চ টিম’ নামের ওই গবেষক দলটি ২০২১ সালে কাজ শুরু করে।

আমেরিকার অ্যান্ড্রুস ইউনিভার্সিটির সঙ্গে ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং আরি ইব্রাহীম চেচেন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা যৌথভাবে দলটি গঠন করেন।

যেখানে নৌকার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২২ সালে সেখানকার অন্তত ত্রিশটি শিলা ও মাটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর এক বছর ধরে সেগুলোর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়।

পরীক্ষার প্রাথমিক ফলাফলে নমুনাগুলোর মধ্যে কয়েক হাজার বছরের পুরনো কাদামাটির উপকরণ, সামুদ্রিক উপকরণ ও সামুদ্রিক খাবারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন গবেষকরা।

বাইবেল ও মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কোরআনে নুহের (আ.) নৌকা বানানোর প্রেক্ষাপট ও মহাপ্লাবনের প্রায় একই ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। মহাপ্লাবনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বাইবেলের আদি পুস্তক ‘দ্য বুক অব জেনেসিসে’ বলা হয়, আদমের (আ.) মৃত্যুর অনেক বছর পর পৃথিবীর মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গিয়ে হানাহানি ও অন্যান্য খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

তাদেরকে সঠিক পথে ফেরানোর জন্য সৃষ্টিকর্তা নুহকে (আ.)  পাঠিয়েছিলেন। তখনকার অধিকাংশ মানুষ নুহের (আ.) দেখানো পথে হাঁটেনি। এমন পরিস্থিতিতে সৃষ্টিকর্তা সিদ্ধান্ত নেন, এক মহাপ্লাবন সৃষ্টি করে তিনি বিপথগামীদের ধ্বংস করে দেবেন। এরপর নুহকে (আ.) বড় আকৃতির একটি নৌকা বানাতে বলা হয়।

বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, লম্বায় নৌকাটির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় পাঁচশ ফুট। গফার বা সাইপ্রাস কাঠ দিয়ে তৈরি নৌকাটির তিনটি আলাদা তলা এবং একটি দরজা ছিল। বানানোর পর নৌকাটির ভেতরে ও বাইরে পিচ লাগানো হয়, যেন পানিতে কাঠ নষ্ট হয়ে না যায়।

এরপর পশু-পাখির মধ্য থেকে নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রতিটির সাতটি করে জোড়া নৌকাটিতে তোলা হয়। জোড়ায় জোড়ায় পশু-পাখি তোলার পর নুহ (আ.) তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নৌকায় ওঠেন। এরপর সৃষ্টিকর্তা নৌকার দরজা বন্ধ করে দেন।

‘দ্য বুক অব জেনেসিসের’ বর্ণনা অনুযায়ী, তিনতলা নৌকার নিচতলায় জন্তু-জানোয়ার, ‎দোতলায় মানুষ এবং উপরের তলায় পাখিদের রাখা হয়। এরপর শুরু হয় মহাপ্লাবন। প্রায় ৪০ দিন ও ৪০ রাত ধরে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। তখন পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের চূড়া না ডোবা পর্যন্ত পানি বাড়তে থাকে বলে বাইবেলের বর্ণনায় আছে।

এই মহাপ্লাবন ১৫০ দিন স্থায়ী হয়েছিল। ফলে নুহের (আ.) নৌকার বাইরে পৃথিবীর আর কোথাও কোনো প্রাণের অস্তিত্ব ছিল না বলে বাইবেলে বলা হয়েছে। পাঁচ মাস পর পানি কমতে শুরু করে। এরপর নৌকা আরারাত পাহাড়ে অবস্থান নেয়।

কোরআনেও ঘটনাটিকে প্রায় একইভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বাইবেলের বর্ণনায় যেখানে প্রতিটি পশু-পাখির সাতটি করে জোড়া নৌকায় তোলার কথা বলা হয়েছে, সেখানে কোরআনে বলা হয়েছে, একটি করে জোড়ার কথা। দেড়শ দিন ভেসে বেড়ানোর পর নুহের (আ.) নৌকাটি জুদি নামের একটি পর্বতে নোঙর ফেলে বলে কোরআনের বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসলামি পণ্ডিতদের অনেকে মনে করেন, জুদি পর্বতটি তুরস্কের আরারাত পর্বতমালারই একটি অংশ।

ইসলাম ধর্মমতে, নুহকে (আ.) আল্লাহ জানিয়ে দিলেন, ‘তোমার জাতির যেসব লোক ইমান এনেছে, তাদের ছাড়া অন্য কেউ আর ইমান আনবে না। এ নিয়ে তুমি কোনো দুঃখ কোরো না। তুমি একটি নৌকা বানাও।’  নুহ (আ.) এ আদেশ মেনে একটি বিরাট নৌকা বানাতে শুরু করেন।

তার স্বজাতির নেতারা নৌকা বানাতে দেখে তাকে ঠাট্টা–তামাশা করত। তিনি বলতেন, ‘যখন আল্লাহর প্রতিশ্রুত আজাব আসবে, তখন টের পাবে।’ অবশেষে আল্লাহর প্রতিশ্রুত আজাব শুরু হলো। মাটি ফেটে পানি বেরোতে লাগল। 

আকাশ থেকে নামল ভারী বর্ষণ। নুহকে (আ.) আল্লাহ বললেন, সব প্রাণীকে নারী–পুরুষ জোড়ায় জোড়ায় নৌকায় উঠিয়ে নিতে। যারা বিশ্বাসী, নুহ (আ.) তাদের বললেন, আল্লাহর নাম নিয়ে তোমরা নৌকায় চড়ে বসো। নৌকা তাদের নিয়ে ভাসতে লাগল।

এইচ.এস


নুহ (আ.)

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন