সোমবার, ৬ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় আলোচকদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বললেন ট্রাম্প *** গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে ইসির সংলাপ আজ, কাল নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও নারী নেত্রীদের সঙ্গে *** জ্বর হওয়ার সাথে সাথে ডেঙ্গু পরীক্ষার অনুরোধ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের *** অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে রংপুর বিভাগে ৩০ লাখ টিকা সরবরাহ করবে এলআরআই *** ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর পূজা আজ *** শহিদুল আলমদের জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ে গেল ‘ইসরায়েলি সামরিক বিমান’ *** ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আরও কঠোর আইন প্রয়োজন: ছাত্রশিবির *** ফেব্রুয়ারিতেই অমর একুশে বইমেলা চায় সাংস্কৃতিক ঐক্য *** দুই দশক পর গণমাধ্যমে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার *** দায়িত্ব ছাড়ার আগে উপদেষ্টাদের পাসপোর্ট জব্দ করা উচিত: মাসুদ কামাল

'বিএনপি হঠাৎ খালেদা জিয়ার জন্মদিন ১৫ই আগস্ট বলে ঘোষণা করে'

এসএম শামীম

🕒 প্রকাশ: ০৪:৩৭ অপরাহ্ন, ১৬ই আগস্ট ২০২৫

#

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ১৫ই আগস্ট এখন আর জাতীয় শোক দিবস নয়। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দিবসের মর্যাদা বাতিল করে। তবে দিনটিকে ঘিরে স্মৃতি, রাজনীতি, শাসকদের অবস্থান, এবং সাম্প্রতিক বিতর্ক—এসব বিষয় নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে ইতিহাসের বহুমাত্রিকতা, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এবং বর্তমান সময়ের ‘উল্লাস বনাম শোক’ দ্বন্দ্ব।

গতকাল শুক্রবার (১৫ই আগস্ট) মাসুদ কামাল তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ‘কথা’-তে একটি বিশ্লেষণাত্মক ভিডিও প্রকাশ করেন। আজ শনিবার (১৬ই আগস্ট) দুপুর ২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিডিওটি প্রায় ৯০ হাজার বার দেখা হয়েছে।

ইতিহাসের পটভূমি: ১৫ই আগস্টের রাজনৈতিক রূপান্তর

মাসুদ কামাল বলেন, ‘আমি সাংবাদিকতা শুরু করি ১৯৮৮ সালে, এরশাদ সরকারের আমলে। তখন ১৫ই আগস্ট নিয়ে তেমন মাতামাতি ছিল না, বাধাও ছিল না।’ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালেও আওয়ামী লীগ এই দিনটি পালন করত, এবং বিএনপি কখনো বাধা দেয়নি। তবে, ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারে আসার পর হঠাৎই খালেদা জিয়ার জন্মদিন ১৫ই আগস্ট ঘোষণা করা হয়, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ১৫ই আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন শুরু করে। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় এসে শোক দিবসের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বাতিল করে, এবং খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনকে ঘটা করে প্রতিষ্ঠা করে। মাসুদ কামালের ভাষ্যে, ‘এই দুই দলের রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টিতে ১৫ই আগস্ট হয়ে উঠেছিল এক বিতর্কিত তারিখ।’

শোকের রাজনীতি ও সংস্কৃতি

মাসুদ কামাল বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ১৫ই আগস্টকে ঘিরে রাষ্ট্রীয় আয়োজনের মাত্রা বাড়তে থাকে। তিনি বলেন, ‘প্রথমে শোক দিবস, এরপর আগস্ট মাসকেই শোকের মাস হিসেবে চিহ্নিত করা হলো। টেলিভিশন পপ-আপ, কালো ব্যাজ, বিশেষ আয়োজন সব কিছু দেখেছি আমি নিজ চোখে।’

২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে যায়। তিনি বলেন, ‘৮ই আগস্ট নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহ পরই আসে ১৫ই আগস্ট। তখন নতুন সরকার দেশের সব রাজনৈতিক দলকে ডেকে জানতে চায়—দিবসটি কেউ পালন করতে চায় কি না। কিন্তু সবার সম্মতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি বাতিল করা হয়।’

'১৫ই আগস্ট অন্যান্য দিনের মতোই একটি দিন।’ সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের এমন মন্তব্যকে ‘অমার্জনীয় ও অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দেন মাসুদ কামাল।

প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে ৭৫-এর ইতিহাস

মাসুদ কামাল বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তার বিরুদ্ধে সেই সময় নানা অভিযোগ থাকলেও, সেই দুর্নীতি, কুশাসনের দায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা ও পরিবারের নারী-শিশুদের হত্যার পক্ষে যুক্তি হতে পারে না।’ তিনি স্বীকার করেন, ‘৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ, বাকশাল ব্যবস্থা—এসব বঙ্গবন্ধুর শাসনের ব্যর্থতা ছিল। কিন্তু এর জন্য একটি পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া সভ্য আচরণ হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভুল ছিল, কিন্তু তার সংগ্রাম, স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা, ত্যাগ ও নেতৃত্ব ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আপনি তাকে অপছন্দ করতে পারেন, কিন্তু তার মৃত্যুতে কেউ শোক প্রকাশ করলে তাতে বাধা দেওয়া সভ্যতার বহিঃপ্রকাশ নয়।’

বর্তমান পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পরিণতি

২০২৫ সালের ১৫ই আগস্ট দিনটিতে যা ঘটেছে, তা মাসুদ কামালের মতে, ‘উল্লাস ও প্রতিহিংসার মিশেল’। তিনি বলেন, ‘৩২ নম্বর বাড়ির সামনে উচ্চস্বরে ডিজে গান বাজানো হয়েছে। অথচ ওই বাড়ি ইতোমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। শোক পালন না করলেও মৃত্যু দিবসে এই উল্লাস, এই লাফালাফি—কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা শেখ হাসিনার পতনের পর তার বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। কিন্তু সেই ক্ষোভে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা উচিত নয়। শেখ হাসিনা তাকে ‘দেবতা’ বানাতে গিয়ে হয়তো ক্ষতি করেছেন, কিন্তু এখন যারা তাকে নিচে নামাতে চায়, তারা উল্টো তাকে আবার মানুষের হৃদয়ে স্থান দিচ্ছেন।’

মাসুদ কামাল বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) যারা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন, তাদের হেনস্তা করা হয়েছে। প্রেস সচিবের হুঁশিয়ারি ছিল—শোক পালন করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি বলতে চাই, কেউ যদি কাউকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা জানায়, তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে—তাকে কি আপনি রাষ্ট্রীয়ভাবে বাধা দিতে পারেন?’

সমালোচনার ভাষায় মাসুদ কামাল বলেন, ‘এই তরুণ প্রজন্ম, যারা এখন প্রতিহিংসায় উল্লাস করে, তারা কি জানে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাই ছিল এই দেশের জন্মে? আজ যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের জন্মই তখন হয়নি—তাদের দিয়ে এই বিচার কি গ্রহণযোগ্য?’

মাসুদ কামালের বক্তব্য স্পষ্ট—১৫ই আগস্ট একটি ইতিহাস, একটি ক্ষত, একটি অনন্য রাজনৈতিক ও মানবিক ট্র্যাজেডি। তিনি শাসকদের প্রতি আহ্বান জানান, ‘শেখ হাসিনার অপরাধ বঙ্গবন্ধুর ঘাড়ে চাপাবেন না। বিভক্তি নয়, ঐক্য দরকার—আর এ জন্যই ড. ইউনূসের মতো কাউকে আমরা চেয়েছিলাম, যিনি সবার জন্য গ্রহণযোগ্য হতেন।’

মাসুদ কামাল

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250