সোমবার, ৬ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২০শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে ইসির সংলাপ আজ, কাল নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও নারী নেত্রীদের সঙ্গে *** জ্বর হওয়ার সাথে সাথে ডেঙ্গু পরীক্ষার অনুরোধ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের *** অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে রংপুর বিভাগে ৩০ লাখ টিকা সরবরাহ করবে এলআরআই *** ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর পূজা আজ *** শহিদুল আলমদের জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ে গেল ‘ইসরায়েলি সামরিক বিমান’ *** ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আরও কঠোর আইন প্রয়োজন: ছাত্রশিবির *** ফেব্রুয়ারিতেই অমর একুশে বইমেলা চায় সাংস্কৃতিক ঐক্য *** দুই দশক পর গণমাধ্যমে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার *** দায়িত্ব ছাড়ার আগে উপদেষ্টাদের পাসপোর্ট জব্দ করা উচিত: মাসুদ কামাল *** ৬১ শতাংশ আমেরিকান ইহুদির বিশ্বাস ইসরায়েল ‘যুদ্ধাপরাধী’

জাতিসংঘে ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী হতে তারেক রহমান রাজি হননি!

জেবিন শান্তনু

🕒 প্রকাশ: ০৯:০৮ অপরাহ্ন, ৪ঠা অক্টোবর ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হতে রাজি হননি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক ওই সফরের আগে লন্ডন থেকে আমেরিকার নিউইয়র্কে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি তার ব্যক্তিগত কাজের কথা বলে সফরসঙ্গী হতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এমন তথ্য প্রকাশ করলেন দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী। কোন পরিপ্রেক্ষিতে ড. ইউনূসের ওই সফরসঙ্গীদের তালিকায় শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুক্ত হন, এ বিষয়েও তিনি উল্লেখ করেছেন। তবে তারেক রহমান কেন সরকারপ্রধানের সফরসঙ্গী হতে অপারগতা প্রকাশ করেন, এ বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যা দেননি। তার এমন তথ্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানামুখী আলোচনা চলছে নেটিজেনদের মধ্যে।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নিউইয়র্ক  সফরের আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গোলমালটা বাধিয়ে দেন। তৌহিদ হোসেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এই বিভ্রান্তি তৈরি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনের শুরু থেকেই তিনি বারবার  ভুল করে যাচ্ছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজের কোনো গতি আসেনি। এন্তার অভিযোগ তার টেবিলে এলেও তিনি এক অজানা কারণে সরকারকে অবহিত না করে বিরত থাকেন। এসব ঘটনায় অধ্যাপক ইউনূস বেজায় চটেছেন তার ওপর। কিন্তু এতে কাজ হয়নি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের নির্ধারিত বক্তৃতার সময় সফরসঙ্গীদের মধ্যে শুধু কয়েকজনের উপস্থিতির সুযোগ থাকে। বিগত রাজনৈতিক সরকারগুলোর সময়ে সাধারণত এ ধরনের সফরে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও পছন্দের লোকজন যেতেন। নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারও এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সরকারের সংস্কৃতি অনুসরণ করল কি না, সে রকম সমালোচনা হচ্ছে। মতিউর রহমান চৌধুরী এ সফরে অর্জন শূন্য উল্লেখ করে একে ‘রাষ্ট্রীয় পিকনিক’ বলে অভিহিত করেন।

নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিউইয়র্ক সফরসঙ্গীর বড় তালিকা নিয়ে প্রশ্ন সামনে এনে মতিউর রহমান বলেন, ''নিউইয়র্ক অভিযান হতে পারতো বাংলাদেশের কূটনৈতিক ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। কিন্তু তা না হয়ে ‘রাষ্ট্রীয় পিকনিকে’- পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে এখন অন্তহীন আলোচনা চারদিকে। এক বছর আগে কম সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে রেকর্ড করেছিলেন। শুরুতে বলা হয়েছিল আটজন। যদিও তা ৫৭ জনে গিয়ে ঠেকে।"

তিনি বলেন, 'এবার তার নিজের রেকর্ড ভেঙে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন। ১০৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল দেখে অনেকেই হতাশ এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন। হাফ ডজন উপদেষ্টাও ছিলেন এই প্রতিনিধিদলে। তাদের কাজ কী ছিল সেখানে! দৃশ্যমান কিছু চোখে পড়েনি।' 'প্রফেসর ইউনূস নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙলেন' শিরোনামে আজ শনিবার (৪ঠা অক্টোবর) দৈনিক মানবজমিনের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মতিউর রহমান চৌধুরী এসব কথা বলেন। লেখাটি তার স্বনামে প্রকাশিত হয়েছে। তবে পুরো প্রতিবেদনের কোথাও তথ্যের কোনো সূত্রের কথা উল্লেখ নেই। এর আগে প্রতিবেদনটি গতকাল মানবজমিনের অনলাইন সংস্করণে প্রচারিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নিউইয়র্ক সফর আলোচিত এবং সমালোচিত। বরাবরের মতো এবারও বিমানবন্দরে এবং জাতিসংঘের আশপাশে বিক্ষোভ হয়েছে। হয়েছে ডিম বৃষ্টি। এতে করে বাংলাদেশের ইমেজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ...ঘুরেফিরে প্রশ্ন উঠছে- জাতিসংঘে প্রতিনিধিদলে ১০৪ জনকে সফরসঙ্গী করার পেছনে কী যুক্তি ছিল। জবাবদিহি থাকলে হয়তো জানা যেত এর আসল কারণ। কিন্তু বাংলাদেশে তো জবাবদিহির মৃত্যু হয়েছে অনেক আগেই।

তবে সুখবর ডটকমের অনুসন্ধান বলছে, ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ৫৭ জন সফরসঙ্গী নিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করার যে তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে, তা পুরোপুরি ঠিক নয়। গত বছর অধ্যাপক ইউনূসের নিউইয়র্ক সফরের বহর পুস্তিকা অনুযায়ী ৫৭ জনের হলেও সরকারি নথিতে এ সংখ্যা ছিল ৮০ জনের বেশি। এবার পুস্তিকা অনুযায়ী ৬২ আর সরকারি নথি অনুযায়ী ১০৪ জন। সরকারপ্রধানের বিদেশ সফরের সময় পুস্তিকা ও নথি দুটোই তৈরি করে থাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে গতবার সরকারপ্রধানের সফরসঙ্গীর সংখ্যা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সরকারের আমলের তুলনায় কম।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অতীতে রাজনৈতিক সরকারের আমলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে ১৫০ থেকে ২০০ জন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন। ২০১৪ সালে ১৮০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে নিউইয়র্কে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৯ সালে ২৯২ জন সফরসঙ্গী নিয়ে নিউইয়র্কে যান তিনি। তবে ২০০৭-০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সফরসঙ্গীর কলেবর সবচেয়ে ছোট ছিল।

মানবজমিনের আলোচ্য প্রতিবেদনে মতিউর রহমান চৌধুরী লেখেন, 'বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সরকারের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল (সফরসঙ্গী হতে)। কিন্তু তিনি তার ব্যক্তিগত কাজের কথা বলে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর তিনি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম প্রস্তাব করেন এবং সেটাই গৃহীত হয়। মির্জা ফখরুল তখন বিদেশে চিকিৎসাধীন। তার ভিসা আছে কী না নিশ্চিত না হওয়ায় বিকল্প একটি নাম প্রস্তাব করা হয়। তিনি হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।'

মতিউর রহমান চৌধুরীর প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট একটি পোস্ট লিখে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এতে তিনি দাবি করেন, প্রফেসর ইউনূস নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙলেন শিরোনামে তিনি (মতিউর রহমান চৌধুরী) সূত্রহীন এক প্রতিবেদন লিখেছেন, যার প্রতিটি প্যারা তিনি সাজিয়েছেন ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে। ফেসবুক থেকে পাওয়া তথ্য দিয়ে কোনো প্রতিবেদন শুরু হলে সেটা সবসময় বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর ঝুঁকিতে থাকে।

মতিউর রহমান চৌধুরী

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250