শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যতই হাত বদল, ততই বাড়ে ভোগ্যপণ্যের দাম

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৪:১১ অপরাহ্ন, ১৯শে অক্টোবর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

সিন্ডিকেটের দ্বারা ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রিত হয়, এটা যেন চিরাচরিত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো সরকারই এই সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারেনি। রাজনৈতিক সরকারের সময় মানুষ অভিযোগ করতো—দলীয় নেতাকর্মীরা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। এ জন্য সিন্ডিকেট ভাঙা যায় না। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আড়াই মাসেও সিন্ডিকেট তো ভাঙা যায়নি, বরং সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভোগ্যপণ্যের দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে নিচ্ছে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল এবার হয়তো ভাঙবে বাজার সিন্ডিকেট, কমবে ভোগ্যপণ্যের দাম। কিন্তু সরকারের বয়স আড়াই মাস পার হয়ে গেলেও দেশের সাধারণ মানুষের সে আশা পূরণ হয়নি। বরং ডিম, সবজি, মাছ-মাংস, চালসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে গেছে। এতে ভোক্তাদের ক্ষোভ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।

ভোগ্যপণ্যের বাজারে ধাপে ধাপে সিন্ডিকেট হয়। শুধু তা-ই নয়, একেক পণ্যের সিন্ডিকেট হয় একেকভাবে। আলুর মূল সিন্ডিকেট হয় হিমাগারে। নিয়ম হচ্ছে- হিমাগার থেকে যখন পাইকারি ব্যবসায়ীরা আলু কিনবেন, তখন কী দামে কিনছেন সেটি উল্লেখ থাকবে। কিন্তু হিমাগারে যাদের আলু থাকে তারা যখন বিক্রি করেন বা হিমাগার থেকে যখন আলু পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন তখন কী দামে বিক্রি করা হচ্ছে-সেটি জানানো হয় না। আলুর দাম পরে ফোন করে জানানো হয়। এখানেই মূল সিন্ডিকেট। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী হিমাগারে রাখা আলু ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করে দেন।

পোল্ট্রি খাতের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ডিম সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের খামার থেকে যখন ডিম বিক্রি করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে-তখনই মূলত সিন্ডিকেটটা হচ্ছে। অন্যদিকে মুরগি সিন্ডিকেট করছে খামারি ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের মাঝের একটি পক্ষ। যাদের কোনো দোকান নেই বা নির্দিষ্ট কোনো আড়ত নেই। এই গ্রুপটি খামার থেকে সরাসরি মুরগি নিয়ে ট্রাকে করে একেক জন একেক বাজারে সরবরাহ করে। যেমন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে যতগুলো মুরগির দোকান রয়েছে- সেখানে মুরগি সরবরাহ করেন একজনই। তার মাধ্যমে আসা মুরগি ছাড়া অন্য কারও মুরগি এই বাজারে প্রবেশ করতে পারে না। এভাবে একেকটি গ্রুপ একেক বাজারে মুরগি সরবরাহ করে। এই গ্রুপগুলো খামার থেকে কম দামে মুরগি কিনে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছে। তাদের কারণেই মুরগির দাম বেশি বাড়ে।

বাজারে কোনো সবজি ১০০ টাকার নিচে মিলছে না। অথচ উৎপাদক পর্যায়ে ২০-৩০ টাকার বেশি পায় না। সবজি ক্ষেত থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে সাত-আট হাত বদল হয়। এই হাত বদলের কারণেই সবজির দাম চড়া। এমনিতেই বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে, তবে সব চেয়ে বেশি দাম বাড়ছে সিন্ডিকেটের হাতবদলের কারণে।

ব্যবসায়ীদের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন ঢাকা চেম্বার অদক্ষ বাজার ব্যবস্থাকে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। কৃত্রিম সংকট, সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থায় অদক্ষতা, মধ্যস্বত্বভোগীদের অতিরিক্ত মুনাফা প্রভৃতি বিষয় পণ্যমূল্য ওঠানামায় ভূমিকা রাখছে। ভোগ্যপণ্যের দেশে উৎপাদিত ১৬টি পণ্যের মধ্যে ১৩টিরই উৎপাদন খরচের তুলনায় খুচরা পর্যায়ে যেতে দাম দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। চাল, পেঁয়াজ, আদা, আলু, লবণ, মরিচসহ এসব পণ্যে ১০২ থেকে ৮৩০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে।

উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়লেও উৎপাদকরা ন্যায্যমূল্য পান না। এক শ্রেণির মুনাফাভোগী ফড়িয়ারা শুধু হাত বদলের মাধ্যমেই অর্থ লুটে নেয়। একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে— ভোগ্য পণ্যের যতই হাত বদল হয়, ততই বাড়ে দাম।

আই.কে.জে/

ভোগ্যপণ্যের দাম

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন