ব্রিটিশ দম্পতি পিটার ও বার্বি রেনল্ডস। ছবি: বিবিসি
আফগানিস্তানে প্রায় আট মাস তালেবানের কারাগারে বন্দী থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন ব্রিটিশ দম্পতি পিটার রেনল্ডস (৮০) ও তার স্ত্রী বার্বি রেনল্ডস (৭৬)। গতকাল শুক্রবার (১৯শে সেপ্টেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, কাতারের মধ্যস্থতায় মুক্তি পাওয়ার পর তারা প্রথমে দোহা পৌঁছাবেন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য, এরপর যাবেন ব্রিটেনে।
গত ১লা ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান থেকে দেশে ফেরার পথে পিটার ও বার্বিকে আটক করেছিল তালেবান। তবে তাদের কেন আটক করা হয়েছিল, সে বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট কোনো কারণের কথা উল্লেখ করেনি তালেবান কর্তৃপক্ষ। তারা শুধু জানিয়েছে, আফগান আইনের লঙ্ঘনের দায়ে দম্পতিকে আটক করা হয়েছিল এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার পর মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
পিটার ও বার্বি রেনল্ডস ১৯৭০ সালে আফগানিস্তানের কাবুলে বিয়ে করেন। পরে দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে তারা আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশে বসবাস করছিলেন এবং সেখানে একটি দাতব্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালাচ্ছিলেন।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর পশ্চিমা অনেক নাগরিক আফগানিস্তান ত্যাগ করলেও তারা সেখানেই ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের প্রতি তাদের অগাধ ভালোবাসাই সেখানে থেকে যাওয়ার মূল কারণ।
এদিকে তালেবানের কারাগারে এই দম্পতির বন্দিদশা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। তাদের ছেলে জোনাথন রেনল্ডস বিবিসিকে জানান, তার বাবা ভয়াবহ খিঁচুনিতে ভুগছিলেন এবং মা অ্যানিমিয়া ও অপুষ্টির কারণে প্রায় অসাড় হয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি অভিযোগ করেন—পিটারকে হত্যাকারী ও অপরাধীদের সঙ্গে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছিল এবং একপর্যায়ে দম্পতিকে ছয় সপ্তাহ ধরে অন্ধকার বেজমেন্টে আটকে রাখা হয়েছিল।
তাদের মেয়ে সারা এন্টউইসেল জানান, তার বাবা একটি ছোট স্ট্রোক করেছিলেন। জাতিসংঘও সতর্ক করেছিল, যথাযথ চিকিৎসা না পেলে দম্পতির অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।
সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত এক আমেরিকান নারী বন্দী জানান, রেনল্ডস দম্পতি কারাগারে ‘প্রায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে’ পৌঁছে গিয়েছিলেন। ফেই হল নামে ওই নারী সতর্ক করেছিলেন, দম্পতির শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছিল।
কাতারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মুক্তির আলোচনার শেষ পর্যায়ে রেনল্ডস দম্পতিকে কাবুলের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি অপেক্ষাকৃত বড় ও ভালো সুবিধাসম্পন্ন স্থাপনায় স্থানান্তর করা হয়েছিল। সেখানে কাতারের দূতাবাস তাদের ওষুধ, চিকিৎসকের পরামর্শ এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দিয়েছিল। তবে তালেবান দাবি করেছে, তাদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং মানবাধিকার রক্ষা করা হয়েছে।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন