ছবি : সংগৃহীত
পৃথিবীর শুদ্ধতম আবেগ হলো ভালোবাসা ও প্রেম। এই আবেগে ভাসেননি এমন হৃদয় পাওয়া কঠিন। নেই বললেই চলে। প্রেমের জন্য জীবন দিয়েছেন এমন অনেক উদাহরণও ইতিহাসে জ্বল জ্বল করছে। ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার মাঝে যেমন এক পৃথিবী সমান আনন্দ আছে, ঠিক তেমনই না পাওয়ার মাঝেও আছে সীমাহীন কষ্ট। আবার যাদের দুই হাত এক হয়, একটা সময়ের পর তাদের বন্ধনেও ফাঁটল ধরতে পারে। ছেদ দেখা দিতে পারে। এমনকি একসঙ্গে থেকেও নানাবিধ টানাপোড়েনের মধ্যে পড়তে হতে পারে; হয়ও। যেমন ধরুন কম আত্মসম্মানবোধ, পাগলের মতো ভালোবাসা, কড়া নজরদারি, সঙ্গীর প্রতি প্রচণ্ড ব্যাকুলতা, অস্বাভাবিক মোহ ইত্যাদি। কোনো প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে মনোবিদরা ধরে নেন উক্ত ব্যক্তি অবসেসিভ লাভ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত। এ রোগটিকে কেউ কেউ প্রেম নামের অসুখের সঙ্গেও মিলিয়ে থাকেন। তবে কখনও কি ভেবে দেখেছেন, আপনি কি প্রেম ‘রোগে’ আক্রান্ত?
যারা অবসেসিভ লাভ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত তাদের মধ্যে আরও যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হলো- অন্যের সামনে সঙ্গীকে অসম্মান করা, আত্মীয়দের থেকে নিজেকে দূরে রাখা, সঙ্গীকে পৃথিবীর একমাত্র আশ্রয় ভাবা, নিজের মানসিক দুরবস্থার বিষয়ে সাইকোলজিস্টের সাহায্য নিতে না চাওয়া ইত্যাদি। অর্থাৎ প্রেম বা ভালোবাসার নামে যখন কড়া শাসন, নজরদারি কিংবা মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা প্রকাশ পায়, তখন সেটি আর প্রেম থাকে না, হয়ে যায় ‘অসুখ’। এ ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্তরা যেকোনো সময় ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যে ব্যক্তি এ ‘অসুখে’ আক্রান্ত তার সঙ্গীকে খুব পীড়ার মধ্যে দিয়ে দিনাতিপাত করতে হয়। তিনি যেন আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছেড়ে যেতে পারলেই বেঁচে যান।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞের ভাষ্য
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জানান, একজন মানুষ যখন আরেকজনের ওপর অভিভূত হয়ে যায়, তাঁকে সবসময় রক্ষা করতে চায়, তাঁর প্রতিটি জিনিস নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় এবং অপর পক্ষ থেকে উপেক্ষা, নেতিবাচক কিছু গ্রহণ করতে পারে না, তখন এটি অবসেসিভ লাভ ডিজঅর্ডার হয়ে যায়। এ ধরনের ভালোবাসায় সম্মান ও বিশ্বাস থাকে না। থাকে শুধু অন্তরঙ্গতা ও অধিকার। এখানে পজেসিভনেস বেশি থাকে। অবসেসিভ লাভ ডিজঅর্ডারে ভোগা ব্যক্তির কম আত্মসম্মানবোধ থাকে বলে সাড়া না পেয়েও বারবার সঙ্গীকে টেক্সট, মেসেজ, কল করতেই থাকে।
তিনি জানান, এ ধরনের ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি কোনো কারণে উপেক্ষার শিকার হন কিংবা অপর পক্ষ থেকে নেতিবাচক আচরণ পান তাহলে তারা নিজের ক্ষতি করতে পারেন। নিজেকে আঘাত করতে পারেন। এমনকি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে যেতে পারে।
সুস্থতার জন্য যা প্রয়োজন:
• সঙ্গী যদি অতি আবেশে বা মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েন তাহলে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে অতিরিক্ত মোহ ও ভালোবাসা আদতে ভালোবাসা নয়। অতিরিক্ত শাসন, বারণও ভালো নয়। এতে সম্পর্কের ক্ষতি হয়।
• সঙ্গীকে পৃথিবী ভাবা বন্ধ করতে হবে। এর বদলে অন্যদিকে মনোনিবেশ করতে হবে। নয়তো সঙ্গী কখনো ছেড়ে গেলে আক্রান্ত ব্যক্তি আত্মঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
• ভালো বই পড়া, সিনেমা দেখা, গাছ পরিচর্যা করা, পোষা প্রাণীর খেয়াল রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে অসুখে ভোগা ব্যক্তি ব্যস্ত থাকতে পারেন।
• ব্যায়াম, মেডিটেশন, মিউজিক থেরাপি ইত্যাদির মাধ্যমেও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব।
• সর্বোপরি একজন মনোবিদের পরামর্শ নিয়ে সাইকোথেরাপি, কাউন্সেলিং ও অন্যান্য সেবা গ্রহণ করলে এ দুরাবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
এস/ আই.কে.জে/