ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে জেন-জি বা ‘জেনারেশন জুমার্স’ আন্দোলন। সামাজিক বৈষম্য, দুর্নীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা–সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে শাসকগোষ্ঠীর প্রতি জেন-জিদের ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে।
ক্ষুব্ধ তরুণরা নিজেদের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে সরাসরি আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন। এর ঢেউ লেগেছে মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত। খবর ব্লুমবার্গ ও সিএনএনের।
জন্ম থেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সংস্পর্শে আসা প্রথম প্রজন্ম এই তরুণরাই। উন্নত দেশ হোক বা উন্নয়নশীল সমাজ–জেন-জিরা নানা উপায়ে নাড়িয়ে দিচ্ছে প্রচলিত শাসন, সংস্কৃতি ও চিন্তার কাঠামো।
মরক্কোর বিভিন্ন শহরে টানা কয়েক রাত ধরে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ চলছে। ‘জেন-জি ২১২’ নামে সংগঠিত এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন মূলত ছাত্র ও বেকার তরুণরা। তাদের দাবি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে।
তাদের অভিযোগ, সরকার ২০৩০ বিশ্বকাপের অবকাঠামোতে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলেও হাসপাতালগুলোতে যথাযথ সেবা নেই, গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাস্থ্য সুবিধা সীমিত এবং শিক্ষা ব্যবস্থা ধুঁকছে। বর্তমানে দেশটির যুব বেকারত্ব ৩৬ শতাংশ, প্রতি পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকের মধ্যে একজনেরও চাকরি নেই।
বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে আগাদির শহরে কয়েকজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যুর ঘটনায়, যাদের অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসা জটিলতায় মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখান্নোচ জানান, সরকার আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে ‘জেন-জি ২১২’ আন্দোলনকারীরা সরকারের পদত্যাগ দাবি করে যাচ্ছে।
আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারেও চলছে জেন-জি তরুণদের বিক্ষোভ। দেশজুড়ে পানি সংকট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিবাদে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন সরকার পতনের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। সরকার অবশ্য এই সংখ্যাকে বিতর্কিত বলছে।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতেও তরুণদের আন্দোলন জোরদার হয়েছে। গত ২০শে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভের সূত্রপাত পেনশন আইনের সংস্কার নিয়ে, যা পরে দুর্নীতি ও অপরাধবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
জেন-জি তরুণদের অন্যতম আলোচিত আন্দোলন ঘটেছে নেপালে। ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভের কয়েক দিন পরই নেপালে শুরু হয় এ আন্দোলন। গত সেপ্টেম্বরে সামাজিক মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সরকার পতনের দিকে গড়ায়।
অন্তত ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন, রাজধানী কাঠমান্ডুর সরকারি ভবন আগুনে পুড়ে যায় এবং প্রধানমন্ত্রীকে সরে দাঁড়াতে হয়। এই আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও তরুণরা জেগে উঠছে।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক বার্ট কামার্টস বলেন, এই প্রজন্ম মনে করছে, তাদের স্বার্থের কেউ প্রতিনিধিত্ব করছেন না। তারা গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রাখে, কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থা তাদের আশা পূরণ করছে না।
ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমই এই প্রজন্মের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। বাস্তবেই পরিবর্তনের হাল ধরেছে এবং সেই পরিবর্তনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে, এক পর্দা থেকে সরাসরি রাস্তায়।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন