রবিবার, ২রা নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** জাকির নায়েকের সম্ভাব্য সফর নিয়ে দিল্লির বক্তব্যের জবাব দিলো ঢাকা *** প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানদের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা *** বঙ্গভবন থেকে মুজিবের ছবি নামানো ‘অন্যায়’ হয়েছে: সেলিম *** ভারতের ভেঙ্কটেশ্বর মন্দির যে কারণে আজ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনামে *** আমরা মদিনার ইসলামের চর্চা করি, মওদুদীর ইসলামের অনুসারী নই: সালাহউদ্দিন *** নাজমুল শান্তই থাকছেন টেস্ট অধিনায়ক *** ২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭ শতাংশ কমতে পারে, বাংলাদেশে কী হবে *** গোল্ডেন বুট হাতে এমবাপ্পে বললেন, রিয়ালে আরও বহু বছর থাকতে চাই *** ‘দুই দিনের মধ্যে’ এশিয়া কাপের ট্রফি চায় ভারত, না হলে... *** লজ্জায় স্কুলে যেতে চায় না ইমরান হাশমির ছেলে, যা বললেন অভিনেতা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতের কৌশল কী

জেবিন শান্তনু

🕒 প্রকাশ: ১০:১৮ অপরাহ্ন, ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও তার দেশত্যাগের পর বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে ভারত একটি স্পষ্ট মনোভাব প্রকাশ করে আসছে। তারা চায়, একটি নির্বাচিত সরকার, যাদের সঙ্গে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা কি সত্যিই এমন? সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থা এবং বিভিন্ন সংকেত নির্দেশ করে, ভারতের আসল লক্ষ্য হতে পারে নির্বাচনের বদলে দেশের অস্থিতিশীলতা বা নৈরাজ্য তৈরি করা, যা তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে সুবিধাজনক।’

আজ বুধবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল 'জাহেদস টেইক'-এ আপলোড করা এক ভিডিওতে  তিনি এসব কথা বলেন। রাত ৯টা পর্যন্ত ইউটিউবে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার বার। এতে এই সময়ের মধ্যে মন্তব্য এসেছে ৩৩৬টি। অনেকে মন্তব্যে আলোচক জাহেদ উর রহমানের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে প্রকাশ বলেছেন, তার বক্তব্য একপেশে ও যুক্তিহীন। 'নির্বাচন নয়, বাংলাদেশে নৈরাজ্যই চাইবে ভারত' শিরোনাম ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক ইনকিলাবের ছাপা সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে 'ভারতীয় এজেন্ডা নিয়ে মাঠে জামায়াত' শিরোনামে। প্রতিবেদনে জামায়াতে ইসলামীর পিআর পদ্ধতির বাস্তবায়নসহ অন্যান্য দাবিতে ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচিকে 'ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের নতুন কর্মতৎপরতা' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বক্তব্যের প্রয়োজনে ইনকিলাব যোগাযোগ করে জাহেদ উর রহমানের সঙ্গে। 

ইনকিলাবকে জাহেদ বলেন, 'পিআর ভারতীয় একটি এজেন্ডা। এটা বাস্তবায়ন এবং জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে আন্দোলন সব মিলিয়ে একটা বড় ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে নির্বাচন বানচালের জন্য। এ বিষয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সবাইকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তা না হলে রাজনীতিতে বড় ধরনের দুর্যোগ নেমে আসতে পারে।'

অবশ্য ইনকিলাবের প্রকাশিত ‘ভিত্তিহীন’, ‘অসত্য’ ও ‘হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াত। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গতকাল এ বিষয়ে এক বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'মূলত জাহেদুর রহমান জনগণকে বিভ্রান্ত করার হীন উদ্দেশ্যেই পানি ঘোলা করে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন এবং পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করছেন।’

এতে আরও বলা হয়, ‘পিআর পদ্ধতি আধুনিক বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, যা বর্তমানে প্রায় ৯১টিরও বেশি দেশে কার্যকর রয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, আলেম-ওলামা, রাজনৈতিক নেতা ও ছাত্রসমাজ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সমর্থন করছেন। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভুল তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, যাতে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো মজবুত ভিত্তি লাভ করতে না পারে।’

আজকের ভিডিওতে জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের পর থেকে আমরা বহুবার ভারতের পক্ষ থেকে শুনেছি, তারা বাংলাদেশে একটি নির্বাচন চায়। তাদের বক্তব্যে এটাও পরোক্ষভাবে স্পষ্ট হয়েছে যে, তারা একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গেই সব ধরনের সম্পর্ক ও চুক্তি বজায় রাখতে আগ্রহী।'

তিনি বলেন, 'এখন প্রশ্ন হলো, ভারত আসলেই কি বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়, নাকি তারা শুধু নিজের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই এমন বক্তব্য দিচ্ছে? এই প্রসঙ্গে আরেকটি ইস্যু হচ্ছে, সম্প্রতি বাংলাদেশে যে পিআর-ভিত্তিক নির্বাচনী ব্যবস্থার দাবি উঠেছে, সেই আন্দোলন আদতে কার স্বার্থ রক্ষা করছে? আরো সরাসরি বললে, এই আন্দোলন কি ভারতের কোনো কৌশলগত উদ্দেশ্য পূরণ করছে?’

তিনি বলেন, ‘ভারত সব সময় বলে এসেছে যে, তারা বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার চায়। তাদের এ দাবির পেছনে একটি যুক্তি আছে, যা তারা খোলাখুলিভাবেই উপস্থাপন করে। তারা বলে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে একাধিক পাওয়ার সেন্টার রয়েছে। যেমন সরকার নিজে, উপদেষ্টা পরিষদ, সেনাবাহিনী ও ছাত্রসংগঠন ইত্যাদি। ফলে ভারতের প্রশ্ন হলো, তারা আসলে কার সঙ্গে কথা বলবে? ভারতের এই যুক্তি পুরোপুরি ভিত্তিহীন নয়। বাস্তবেই এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামোর একটি বড় সংকট—সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় একাধিক কেন্দ্র থেকে ক্ষমতা পরিচালিত হয়।’

জাহেদ উর রহমান মনে করেন, "শেখ হাসিনার পতন এবং দেশত্যাগের পর প্রথম যে সরকার গঠিত হয়, সেটি মূলত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। যদিও ড. ইউনূসকে ঘিরে অনেক বিতর্ক ও সমালোচনা রয়েছে, তারপরও ভারতের সঙ্গে তার অবস্থান ছিল অত্যন্ত দৃঢ় ও সম্মানজনক। তিনি ভারতের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে, চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস দেখিয়েছেন এবং বাংলাদেশের একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা রক্ষার চেষ্টা করেছেন—এই জায়গায় তার ভূমিকা প্রশংসনীয়। আর সে কারণেই ভারত শেখ হাসিনার মতো একটি ‘স্লেভ-মাইন্ডসেট’-সম্পন্ন সরকার চেয়েছিল। যে সরকার তাদের প্রতি নিঃশর্তভাবে অনুগত থাকবে।"

তার মতে, "ড. ইউনূসকে নিয়ে ভারত সন্তুষ্ট হতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের সঙ্গে তারা ততটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেনি। এ কারণে এখন একটি নির্বাচিত সরকারই তাদের কাছে ‘মন্দের ভালো’ বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো, এটিই কি ভারতের জন্য সত্যিকারের ‘সেরা’ বা ‘বেস্ট অপশন’?”

তিনি বলেন, “ভারত বরাবরই নির্বাচন নিয়ে একটি নির্দিষ্ট বক্তব্য দিয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০শে আগস্ট তারা আবারও একই ধরনের বিবৃতি দিয়েছে—তারা বলেছে, ‘ভারত আবারও জানাতে চায় যে, আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে বাংলাদেশের একটি দ্রুত, অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন, যেখানে জনগণ তাদের রায় দিতে পারবেন এবং তাদের ইচ্ছা প্রতিফলিত হবে।"

তিনি বলেন, 'এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন হলো—ভারত আসলে কী চায়? তারা কি সত্যিই বাংলাদেশের একটি স্থায়ী, শক্তিশালী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ সরকার চায়? নাকি তারা এমন একটি সরকার চায়, যেটি তাদের স্বার্থে নমনীয় থাকবে? আমি এই জায়গায় এসে ভারতের উদ্দেশ্য নিয়ে একটি সিরিয়াস প্রশ্ন তুলছি।'

জাহেদ উর রহমান মনে করেন, 'ভারতের জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে লাভজনক পরিস্থিতি হলো—দেশে একটি নৈরাজ্য তৈরি হোক এবং ভবিষ্যতে একটি দুর্বল, জোটনির্ভর সরকার গঠিত হোক। এমনকি নির্বাচন না হওয়াটাও তাদের জন্য ভালো, কারণ অরাজকতা তৈরি হলে আওয়ামী লীগ, ভারতের এজেন্সি—সবাই মাঠে নামবে, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মতো ঘটনা ঘটতে পারে, যা ভারতকে ভবিষ্যতে হস্তক্ষেপের সুযোগ দেবে। এই অবস্থায় জনমনে ‘আওয়ামী লীগ দুর্নীতিগ্রস্ত হলেও অন্তত স্থিতিশীলতা দিত’ এমন ভাবনা ফিরে আসতে পারে। ফলে অরাজকতা এলে আওয়ামী লীগকে ফেরানোর পথ তৈরি করা তাদের জন্য সহজ হবে।”

তিনি বলেন, ‘জামায়াত পিআর নিয়ে যে আন্দোলনে নেমেছে, সেটাও ভারতের স্বার্থে যেতে পারে। কারণ, পিআর মানেই জোটনির্ভর, অস্থির, দুর্বল সরকার—যেটি ভারতের প্রভাবের কাছে বেশি নমনীয়। নেপালের অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। পিআর না হলে নির্বাচনে না যাওয়ার হুমকি আসলে একটি বার্গেনিং টুল। কিন্তু এর ফলে রাজনীতিতে নতুন সংঘাত তৈরি হচ্ছে, যা পুরো পরিবেশকে আরো বিপজ্জনক করে তুলছে।’

জাহেদ উর রহমান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250