ছবি: সংগৃহীত
যৌন আসক্তিকে রোগ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা এবং এতে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য দাবি তুলেছে বৈশ্বিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান রিলেট। ব্রিটেনের জাতীয় চিকিৎসা সেবার মধ্যে সেটিকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছে সংস্থাটি।
অন্যদিকে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন এমন দুই রোগী, যারা অনেকদিন ধরে যৌন আসক্তির সমস্যা মোকাবেলা করেছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন তিন সন্তানের জননী রেবেকা বার্কার। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল অসহ্য একটি ব্যাপার যে, দিনে পাঁচবার যৌনমিলন করার পরেও তা আমার জন্য যথেষ্ট ছিল না। যৌন অতৃপ্তি রয়ে যেত।’
তিনি বলেন, ‘ঘুম থেকে ওঠার পরে সেক্স করার চিন্তাই আমার মাথায় প্রথমে আসতো। অনেক চেষ্টা করেও সেটা আমি মাথা থেকে সরাতে পারতাম না।’
তিনি বলেন, ‘সবকিছুর সঙ্গে যেন আমি এর মিল খুঁজে পেতাম। এটা আমার বিষণ্ণতা আর সেরোটোনিনের অভাবের সঙ্গে জড়িত ছিল। আমার পুরো শরীর যেন শুধু সেক্স করতে চাইতো। যৌনমিলন করার পর আমি খানিকটা স্বস্তি পেতাম। পাঁচ মিনিট পরেই আবার আমার চাহিদা তৈরি হতো।’
বার্কারের এ সমস্যা তার সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। প্রথমে তার সঙ্গী বিষয়টি উপভোগ করলেও পরে তা দুজনের মধ্যে জটিলতা তৈরি করে। প্রথম দিকে তার পুরুষ সঙ্গী ভালোই ছিলেন, কিন্তু পরে আর বুঝতে চাইতেন না। পরে তিনি বার্কারের বিরুদ্ধে অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার অভিযোগ আনেন। এরপরই তাদের সম্পর্কটি ভেঙ্গে যায়।
সে সময় বার্কার মানসিক চিকিৎসকের কাছেও যান। চিকিৎসক বারবার ওষুধ পাল্টে দিচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি কখনো রেবেকা বার্কারকে বলেননি যে, এটার জন্য কোনো সহায়তা করার গ্রুপ আছে।
এরপর তিনি বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠার জন্য চাকরি ও স্থান পরিবর্তন করেন। এখন তিনি ফ্রান্সে থাকেন। বিষণ্ণতা আর যৌন আসক্তি, দুটি থেকেই তিনি কাটিয়ে উঠেছেন।
রিলেট নামের দাতব্য সংস্থাটি বলছে, আর দশটা আসক্তির মতো যৌন আসক্তিও একটি রোগ। এ রোগে আক্রান্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বিবিসিকে বলেন, ‘তিনি এতটাই আসক্ত হয়ে গিয়েছিলেন যে, এক পর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে প্রতারণা করতে শুরু করেন।’
তিনি বলছেন, ‘এটা ছিল ভয়াবহ ও কষ্টকর অভিজ্ঞতা। যখন আপনার মাথায় সবসময়ে সেক্স কাজ করতে থাকে, তখন সেটা যৌন আনন্দ থাকে না, সেটা সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায়। যা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।’
তিনি জানান, ‘এটা অনেকটা মদ্যপায়ী হয়ে ওঠার মতো ব্যাপার ছিল। যখন আপনার নেশা উঠবে, তখন এটা করতে হবে। বীর্যপাত হয়ে গেলে চরম অপরাধবোধ কাজ করে। আমি ভাবি, আর কখনোই এটা করবো না।’
তিনি ব্রিটেনের ‘সেক্স এডিক্টস অ্যানোনিমাস’ (এসএএ) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হন। তখন তিনি দেখতে পান, তার মতো আরো অনেকে এ রোগে ভুগছেন।
‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন ফর দি ট্রিটমেন্ট অফ সেক্স অ্যাডিকশন এন্ড কমপালসিভিটি’ বলছে, যৌন আসক্তি এখন বাড়তে থাকা একটি সমস্যা। গত কয়েক বছরে রোগীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, তাদের বেশিরভাগই পুরুষ। যাদের ৩১ শতাংশের বয়স ২৬ থেকে ৩৫ বছর।
এইচ.এস/