ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
কিংবদন্তী বক্সার মোহাম্মদ আলী তার ক্যারিয়ার এবং কাজের ধারার পরিচয় তৈরি করেছিলেন একজন ধর্মবিশ্বাসী মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে। ক্রীড়াজীবনের শুরু থেকেই রিংয়ের ভেতরে ও বাইরে অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। ইসলাম গ্রহণের পর আলী আমেরিকান মুসলিমদের জন্য আদর্শে পরিণত হন।
১৯৬৪ সালে ধর্মান্তরিত হওয়ার কয়েক বছর পরই মোহাম্মদ আলী এমন একটি লড়াইয়ে অংশ নেন, যা তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল জীবনের কিছু স্মৃতি লিখে রাখতে, কেন তিনি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন সেই কারণ বা ব্যাখ্যাগুলো লিখে রাখতে।
সেই লড়াই কোনো বক্সিং রিংয়ে হওয়া মুষ্টিযুদ্ধ ছিল না। ছিল নিজের ঘরে স্ত্রী বেলিন্ডার সঙ্গে হওয়া বাকযুদ্ধ।
বেলিন্ডার অভিযোগ, আলী নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছেন। তার মধ্য থেকে মানবিকতা ও বিনয়ের সব চিহ্ন হারিয়ে গেছে। তিনি এমন আচরণ করছেন যেন তিনি ঈশ্বর। ‘তুমি নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে দাবি করতে পারো। কিন্তু তুমি কখনোই আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারবে না,’ বলেন ক্ষুব্ধ বেলিন্ডা।
একজন স্কুলশিক্ষিকা তার শিক্ষার্থীকে যেভাবে নির্দেশ দেন, বেলিন্ডা ঠিক সেভাবেই আলীকে তখনই বসে একটি প্রবন্ধ লিখতে বলেন, যেখানে তাকে লিখতে হবে কেন তিনি মুসলিম হয়েছিলেন। আলী স্ত্রীর নির্দেশ মেনে কয়েক পাতা সাদা কাগজ আর একটা নীল কলম নিয়ে লিখতে শুরু করেন।
জীবনীকার জোনাথান ইগ বেলিন্ডার (বর্তমানে খলিলাহ কামাচো-আলী) সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে সেই প্রবন্ধ লেখা কাগজগুলো পান।
আরো পড়ুন : কোরআন পড়তেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন, কিন্তু কেন?
আলী চিঠিতে লুইসভিলেতে তার কৈশোরের কথা উল্লেখ করেন। তখন তার নাম ছিল ক্যাসিয়াস ক্লে জুনিয়র। তখন রাস্তা দিয়ে স্কেটিং করার সময় ফুটপাতে কোনো সুন্দরী নারী হেঁটে যাচ্ছে কি না, তা নজরে রাখতেন তিনি।
এভাবেই একদিন রোলার স্কেটিং করে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি কালো ব্লেজার স্যুট পরা একজনকে নেশন অফ ইসলামের জন্য পত্রিকা বিক্রি করতে দেখেন। আলী নেশন অফ ইসলাম এবং তার নেতা এলিজা মোহাম্মদের নাম আগেও শুনেছেন। কিন্তু কখনোই ওই দলে যোগ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে সেভাবে ভাবেননি। দলটি কৃষ্ণাঙ্গদের বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং আত্ম-উন্নয়ন বিষয়ক নানা ধরণের প্রচারণা চালাত।
আলী একটি পত্রিকা ভদ্রতার খাতিরে বেশ উদাসীনভাবে হাতে তুলে নিলেন। হঠাৎ সেখানের একটি কার্টুনের দিকে তার চোখ যায়। সেখানে একজন শেতাঙ্গ মালিক তার কৃষ্ণাঙ্গ দাসকে মারধর করে তাকে যিশুখ্রিস্টের কাছে প্রার্থনা করতে চাপ দিচ্ছে। সেই কার্টুনের মূলকথা ছিল, শেতাঙ্গরা জোর করে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর খ্রিস্টধর্ম চাপিয়ে দিচ্ছে।
প্রবন্ধে আলী ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পেছনে কোনো আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা দেননি। বরং একে তিনি বাস্তবতার আলোকেই তুলে ধরেন।
আলী বলেন, ওই কার্টুন তাকে জাগিয়ে তোলে। তিনি বুঝতে পারেন, খ্রিস্টধর্ম তার পছন্দ নয়। ক্যাসিয়াস ক্লে নামটিও তার পছন্দ নয়। তিনি বুঝতে পারেন তিনি স্বেচ্ছায় এ ধর্ম গ্রহণ করেননি। তিনি নিজে তো তার নাম ক্যাসিয়াস ক্লে রাখেননি। তাহলে কেন তাকে ওই দাসত্বের চিহ্নগুলো বহন করতে হবে? আর তিনি যদি তার ধর্ম এবং নাম না বহন করতে চান তাহলে কী পরিবর্তন তিনি আনতে পারেন?
১৯৬৪ সালে ২২ বছর বয়সে বক্সিংয়ে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশীপ জেতার পর আলী জনসম্মুখে ঘোষণা করেন তিনি নিজে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহ এবং শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমি শ্বেতাঙ্গদের এলাকায় ঢুকতে চেষ্টা করব না। কোনো শেতাঙ্গ নারীকে বিয়েও করতে চাই না। মাত্র ১২ বছর বয়সে আমাকে খ্রিস্টান বানানো হয়েছিল। কিন্তু তখন আমি বুঝতে পারিনি আমি কী করছি। আমি এখন আর খ্রিস্টান নই। আমি জানি আমি কোথায় যাচ্ছি। আমি সত্য কী তা জানি। তোমরা আমাকে যা বানাতে চাও আমাকে তা হতে হবে না। আমি যা হতে চাই সে ব্যাপারে আমি আজ মুক্ত।’
এর পরের কয়েক বছর মোহাম্মদ আলী তার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি উদঘাটন করতে থাকেন। তার কখনো স্পষ্ট কোনো দর্শন ছিল না। কিন্তু তিনি কখনো প্রশ্ন করা বন্ধ করেননি। কারণ তার কথা ছিল, ‘ইসলাম আমাদের প্রশ্ন করতে বলেছে।’
এস/ আই.কে.জে