শুক্রবার, ১৪ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অ‌গ্নিঝরা মার্চ

‘অপারেশন ওমেগা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৬:৪১ অপরাহ্ন, ৯ই মার্চ ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলা) নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষের আর্তনাদে কোনো কোনো দেশ কান না দিয়ে আঞ্চলিক রাজনীতি ও নিজেদের লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকাশ করছিল। তখন দূর থেকে একদল সাহসী মানুষ বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষার লক্ষ্যে ‘অপারেশন ওমেগা’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলেন।

‘এফওআর’ এর ফেলো রেনে ওয়াডল তার লেখা একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেন, সেই সময়ের ইংরেজি সংবাদপত্র ‘পিস নিউজ’ এর সম্পাদক ও পাঠকরা ‘অপারেশন ওমেগা’ গঠন করেন।

তাদের অধিকাংশই যুদ্ধবিরোধী সংগঠন ‘ওয়ার রেসিস্টার্স ইন্টারন্যাশনাল’ (ডব্লিউআরআই) এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কয়েকজন জড়িত ছিলেন ‘ইংলিশ ফেলোশিপ অব রিকনসিলিয়েশন’ এর সঙ্গে। আর নামটি নেওয়া হয়েছিল ফরাসি জেসুইট পিয়েরে টেইলহার্ডের ‘দ্য চ্যার্ড’ এর লেখা থেকে। এখানে ওমেগা এমন এক শক্তির প্রতীক, যা মানবতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।

এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন যুদ্ধবিধ্বস্ত পূর্ব বাংলায় সাধারণ জনগণের কাছে সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে কৃত্রিম, অপ্রয়োজনীয় ও অনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল, তা ভেঙে ফেলা।

এর সূত্র ধরে ওই দলের চার সদস্য- বেন ক্রো, জয়সে কেনিওয়েল, ক্রিস প্র্যাট ও ড্যান ডিউ এবং তাদের দুইটি গাড়ি পূর্ব পাকিস্তানের ভেতরে প্রবেশ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং পয়েন্ট অতিক্রম করার সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক হন।

একপর্যায়ে বন্দী অবস্থায় এই স্বেচ্ছাসেবীরা টানা পাঁচদিন অনশন ধর্মঘট করেন। তাদেরকে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব পরামর্শ দিয়েছিলেন, যাতে তারা দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চান এবং পুনরায় এ ধরনের কাজ করবেন না- এই মর্মে প্রতিজ্ঞা করেন। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবীরা এ প্রস্তাবে সাড়া দেননি। বরং এই বলে প্রত্যাখ্যান করেন যে, তারা নৈতিকভাবে কোনো ভুল করেননি এবং ওই শাসকগোষ্ঠীকে তারা বৈধ বলে স্বীকার করেন না।

এ ব্যাপারে ১লা অক্টোবর ১৯৭১ তারিখে লন্ডনের ‘দ্য হ্যাম্পস্টেড’ ও ‘হাইগেট এক্সপ্রেস’ এর সম্পাদকীয়ের শিরোনাম ছিল- ‘ভলেনটিয়ারস হু রিস্ক অল টু সেইভ লাইভস ইন বাংলাদেশ’।

উল্লেখ্য, ওই সময় শুধু ‘অপারেশন ওমেগা’র মাধ্যমে তৎকালীন বাংলাদেশে (পূর্ব পাকিস্তানে) সরাসরি জনগণের কাছে  ত্রাণ পৌঁছেছিল। লন্ডনের কিংস ক্রসে ছিল এর অফিস।

ওই সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, ‘ওমেগা টিমের একজন সদস্য, সাবেক ক্যামডেন ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার বেন ক্রো (২৩) পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে ১১ দিন বন্দী থাকার পর গত সপ্তাহে লন্ডনে ফিরে এসেছেন। বেন জানান, তাকে বলা হয়েছে, ২০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন (পূর্ব পাকিস্তানের)। কারাগারে বহু নারী ও শিশু বন্দী রয়েছে, যাদের স্বামী ও বাবাকে বাংলাদেশ সমর্থন করার জন্য গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’

ব্রিটিশ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘যদিও এই চারজন ধরা পড়েছেন, কিন্তু আরেকটি ওমেগা টিম বাংলাদেশে প্রবেশ করে সাফল্যের সঙ্গে তাবু, উচ্চমানের আমিষযুক্ত বিস্কুট, চাল ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করে, যা এক হাজার লোকের তিনদিন চলার জন্য যথেষ্ট। এছাড়াও তারা সাতশত মানুষের মধ্যে পরিধেয় কাপড় বিতরণ করেন।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আরেকটি ওমেগা টিম সম্প্রতি (অক্টোবর ১৯৭১) সহায়তা সামগ্রী সংগ্রহের জন্য ইউরোপে গেছে। দলটি হল্যান্ড ও জার্মানিতে গেছে।’

এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘যেসব অনুদান পাওয়া গেছে, তার অধিকাংশই ২০ পাউন্ডের কম। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দী এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাঁচ হাজার ডলারের একটি চেক পাওয়া গেছে, যিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করেছিলেন।’

কেসি/



অ‌গ্নিঝরা মার্চ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন