সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্লোবাল সাউথ ও উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সেতুবন্ধন ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:৫৭ অপরাহ্ন, ২৫শে জুন ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

২০১৫ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের বৈশ্বিক কূটনীতি এবং শাসনকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন বৈশ্বিক সম্মেলনে তিনি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মতো বড় বড় ক্ষমতাধর দেশগুলোর সাথে আলোচনায় যুক্ত হয়ে ভারতের শক্তি বৃদ্ধি করেছেন।

জি-২০ প্রেসিডেন্সির মাধ্যমে ভারত শুধু গ্লোবাল সাউথেই নয় বরং সারাবিশ্বে দক্ষিণ এশিয়ার কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। গণতান্ত্রিক উন্নয়নশীল দেশগুলোর সেতু হিসেবে কাজ করছে ভারত। স্বাধীনতা লাভের পর, ১৯৪৮ সাল থেকে ভারত প্রাথমিকভাবে একটি জোট নিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করছে। এ নীতির প্রস্তাবনা পেশ করেন জওহরলাল নেহেরু, যিনি পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। এটি ভারতের স্বাধীন গণতান্ত্রিক নীতি হিসেবে সুপরিচিত। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ভারত উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে উত্তীর্ণ হয় এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সূচনা করে। এ আন্দোলনে বিশাল সংখ্যক দক্ষিণ এশীয় দেশ যোগ দেয়।

"গ্লোবাল সাউথ" ধারণাটি নতুন নয় এবং এর যথাযোগ্য সংজ্ঞা এখনও প্রদান করা হয় নি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকা, অর্থাৎ ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণে অবস্থিত বেশিরভাগ দেশগুলোকে প্রায়শই এই শব্দটি দ্বারা উল্লেখ করা হয়। শব্দটি প্রায়ই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে উত্তর-দক্ষিণ পার্থক্য বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। 

তবে ধারণাটি ভৌগলিকভাবে প্রাসঙ্গিক হলেও এর কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণে থাকা সত্ত্বেও, অস্ট্রেলিয়াকে সাধারণত একটি উত্তর জাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে দক্ষিণ অক্ষাংশের পরিবর্তে উত্তরে থাকা সত্ত্বেও চীনকে সাধারণত একটি দক্ষিণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, চীন এবং ভারত উভয়ই নিজেদেরকে গ্লোবাল সাউথের নেতা বলে মনে করে এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণের দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তারের জন্য একে অপরের সাথে লড়াই করে চলেছে।

গণতান্ত্রিক বিশ্বের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের নেতৃত্ব প্রদানকারী মার্কিন-জাপানের দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে চীনের প্রভাব কমাতে গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসেবে ভারতকেই স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত। সাম্প্রতিককালে ভারত কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করেছে। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতকে ইউরোপীয় ও আমেরিকান দেশগুলো মিত্র দেশ হিসেবেই বিবেচনা করে।

২০১৬ সালে স্বাধীন ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি) ধারণার প্রসার ঘটান জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। পরবর্তীতে, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভারতের সম্প্রসারিত সম্পৃক্ততা এবং প্রভাবকে উন্নীত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশ হিসেবে এই ধারণাটিকে আরো প্রসারিত করে। সমৃদ্ধির জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক এবং কোয়াড মেকানিজম উভয়ই প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত দ্বারা পরিচালিত। চীনের থেকে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে ভালো সম্পর্ক রয়েছে ভারতের। চীন এবং ভারতের মধ্যকার সীমান্ত বিরোধের ফলে তাদের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে, যা ভবিষ্যতেও থাকবে বলে বুঝা যাচ্ছে।

ভারত এখনও চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পে অংশ নেয় নি বরং চীনা ঋণফাঁদ থেকে দক্ষিণের দেশগুলোকে রক্ষা করতে শ্রীলঙ্কার উদাহরণকে ব্যবহার করছে। ২০১৯ সালে চীনা নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে যোগ দেয় নি ভারত। তাছাড়া মার্কিন-চীন দ্বন্দ্বের মুখে ভারত-জাপান অংশীদারিত্ব আরো জোরদার হয়েছে। গ্রুপ অব সেভেন বা জি-৭ এর শিল্পোন্নত সদস্য দেশগুলোর সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছে ভারত। এই বছর, ভারত জাপানে অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে এবং সক্রিয়ভাবে গ্লোবাল সাউথ এবং উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।

আরো পড়ুন: ‘ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোরেঙ্গে’ মিশরীয় তরুণীর গানে বিস্মিত নরেন্দ্র মোদি

অন্যদিকে মার্কিন-চীন, এবং ইইউ-রাশিয়ার সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে, ভারত কিছুটা স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখে পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্ক উন্নত করেছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেনীয় দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে, ভারত সম্পূর্ণরূপে পশ্চিমা দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেনি। ভারত রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের সাথে যোগ দেয়নি এবং রাশিয়ার শত্রুতামূলক কার্যকলাপের নিন্দাও করেনি। ভারত রাশিয়ার নিন্দাকারী জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি প্রস্তাবের নির্বাচনেও অংশ নেয়নি। মূলত ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। পশ্চিমারা রাশিয়ার উপর জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তেল ক্রয় করে এবং রাশিয়া ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য তার শক্তি সরবরাহ নিশ্চিত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো ভারতের কৌশলগত অবস্থান এবং অর্থনৈতিক শক্তির কারণে রাশিয়া-ইউক্রেনীয় সংঘর্ষে ভারতের পদক্ষেপের জন্য আপেক্ষিক সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বে ভারতের নৈতিকভাবে নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে, ভারতীয় গণতন্ত্রের গুণমানের পাশাপাশি বিশ্বের গণতন্ত্রকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে গ্লোবাল সাউথে ভারতের নেতৃত্বের সম্ভাব্য ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে চীনের মতো দেশ যদি গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসেবে উত্তীর্ণ হয় তবেই দেখা দিবে প্রকৃত সমস্যা।

এম এইচ ডি/ আই. কে. জে/

গ্লোবাল সাউথ ভারত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

খবরটি শেয়ার করুন