শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীনা আগ্রাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৯:৪১ অপরাহ্ন, ৩০শে আগস্ট ২০২৩

#

ছবিঃ সংগৃহীত

নিরাপত্তা নিয়ে শি জিনপিংয়ের অত্যধিক চিন্তা এবং নিজেকে মাও সেতুং হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লোভেই একের পর এক সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালাচ্ছে চীন। এমনটি মন্তব্য করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। সম্প্রতি তিব্বত, পূর্ব তুর্কিস্তান বা জিনজিয়াং এবং দক্ষিণ মঙ্গোলিয়ায় চীনা আগ্রাসনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ।         

১৯৬৫ সালে তিব্বতের উপর প্রভাব বিস্তার করে চীন তিব্বতকে খণ্ড খণ্ড অংশে বিভক্ত করে। এর কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণের জন্য ‘তিব্বতে চীনা উপনিবেশবাদ’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। সেন্টার ফর হিমালয়ান এশিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড এনগেজমেন্ট (চেইজ) এবং তিব্বত যুব কংগ্রেস (টিওয়াইসি) দ্বারা যৌথভাবে আয়োজিত হয় এই ওয়েবিনার। 

এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ,ভারত ও তিব্বতের বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন। তারা তিব্বতের প্রতি চীনা আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

১৯৫১ সালে তিব্বত জোরপূর্বক দখল করার ১৪ বছর পর ১৯৬৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর মাও সেতুং তিব্বতকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। তার এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মূল তিব্বতের খাম ও আমদো প্রদেশের অনেকাংশ তিব্বত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় এবং তাদের পার্শ্ববর্তী চীনা রাজ্য ইউনান, সিচুয়ান, কিংহাই এবং গানসু প্রদেশের সাথে যুক্ত করা হয়। চীন প্রতি বছর ১ সেপ্টেম্বরকে তিব্বত সংস্কারের বিশেষ দিন হিসেবে পালন করে।

এ ওয়েবিনারে অংশ নেন চীনা বইয়ের বিখ্যাত লেখক এবং বেইজিংয়ের প্রাক্তন ব্যুরো সংবাদদাতা, প্যারিসের পিয়েরে এন্টইন, তিব্বতের বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ এবং সুইস-তিব্বত ফ্রেন্ডশিপ এসোসিয়েশনের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ডা. উয়ে মেয়া, ইউএস-তিব্বত জোটের প্রধান এবং মানবাধিকার বিষয়ে অভিজ্ঞ তেনজিন সাম্ফো, চেইজের চেয়ারম্যান বিজয় ক্রান্তি। জেএনইউ এর অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রফেসর আয়ুশি কেতকার প্রশ্ন-উত্তর পর্ব পরিচালনা করেন।

ডা. উয়ে মেয়া বলেন, চীন খুব সুচারুরূপে বুঝানোর চেষ্টা করছে যে তিব্বত চীনেরই একটি অংশ এবং তিব্বতের বাসিন্দারা চীনেরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অংশ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিব্বত বিচ্ছিন্ন একটি রাষ্ট্র ছিল। চীন জোরপূর্বক তিব্বতকে দখল করে নেয়।

পিয়েরে জানান, বর্তমানে চীনের অবস্থা দুর্বিষহ। চীনের ক্রমহ্রাসমান অর্থনীতি এবং চরম বেকারত্ব এদেশের জনগণকে হতাশ করে দিয়েছে। কোভিডের অব্যবস্থাপনার জন্য শি জিনপিংয়ের সিদ্ধান্তকেই দায়ী করছে অনেকে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়া, বার্লিন প্রাচীরের পতন এবং চীনের তিয়ানমেন স্কোয়ারে ১৯৮৯ সালের বিক্ষোভ, চীন প্রতিটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও শিক্ষা কাজে লাগাতে পারে নি। এর ফলে সিসিপি এবং এর নেতাদের, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর জন্য চীনের পরিস্থিতি প্রতি মাসে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। তিনি বিশেষভাবে তিব্বতি ও উইঘুর সম্প্রদায়কে হান পরিচয়ে আত্তীকরণের জন্য চীনের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।

তেনজিন সাম্ফো চীন অধিকৃত তিব্বতে জন্মগ্রহণ করেন। চীন কীভাবে তিব্বতের সংস্কৃতির উপর হামলা চালাচ্ছে সে বিষয়ে কথা বলেন তিনি৷ তিনি বলেন, তিব্বতের স্বতন্ত্র সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে ভাষা ও শিক্ষাকে ব্যবহার করছে চীন। পূর্বে পঞ্চম শ্রেণির পরেই শিক্ষার ভাষা তিব্বতি ভাষা থেকে ম্যান্ডারিনে পরিবর্তিত করা হতো। তবে বর্তমানে চীন সরকার জোরপূর্বক তিব্বতি শিশুদের আটক করে তাদের চীনা সংস্কৃতিতে বড় হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছে। 

মূল তিব্বতের বিভাজন এবং ঐতিহাসিক তিব্বতের অনেক অংশকে চীনা প্রদেশে একীভূত করার বিষয়ে বলতে গিয়ে তেনজিন বলেন, এই প্রদেশগুলোতে বসবাসকারী তিব্বতিদের চলাচলের উপর অত্যন্ত কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এখানকার প্রতিটি সড়কেই কয়েক ডজন পুলিশ চেকিং পয়েন্ট রয়েছে।

এসকে/ আই.কে.জে/



চীন তিব্বত তাইওয়ান চীনা আগ্রাসন আন্তর্জাতিক

খবরটি শেয়ার করুন