ছবি-সংগৃহীত
পরিবারের সদস্যদের জন্য ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতেই ছাদে বা বারান্দায় ফল, সবজি চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন মানুষ।
ঢাকার নিকেতনের বাসিন্দা সামিনা হোসেন অনেকদিন ধরেই বাসার ছাদে নানা ধরণের মশলা, ফল ও সবজির বাগান করছেন। এবারের বৃক্ষমেলা থেকেও বেশকিছু নতুন ধরণের ফল ও মশলার গাছ কিনেছিলেন তিনি।
সামিনা হোসেন বলেন, “এতদিন বাসার ছাদে লেবু, আঙ্গুর, চাইনিজ কমলার মত নানা ধরণের ফলের চাষ করতাম, তা দিয়ে ৩-৪ জনের পরিবারের ফলের চাহিদা পূরণ হতো।”
সুযোগ সুবিধা পেলে এতদিনের বাগান করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বড় পরিসরে ব্যবসায়িকভাবে ফল, সবজি, মশলার চাষ করারও ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, অধিকাংশ মানুষই ছাদে বা বারান্দায় ফল, সবজির চাষ করেন পরিবারের সদস্যদের জন্য টাটকা ও ভেজালমুক্ত খাবারের যোগান নিশ্চিত করতে।
কেন ছাদে ফল চাষ করতে চায় মানুষ?
অনেকেই বলেন বাড়ির সৌন্দর্যবর্ধন বা শখ পূরণ করতেই ছাদে বা বারান্দায় বাগান করে থাকেন তারা। তবে মেলায় আসা অধিকাংশ গৃহিণীই বলেন শুধু শখের বশে কিংবা বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যেই নয়, ছাদে বা বারান্দায় ফল বা সবজির গাছ লাগিয়ে পরিবারের চাহিদাও পূরণ করেন তারা।
ঢাকার শান্তিনগরের বাসিন্দা শাহিদা শামিম জানান বাড়ির ছাদে ফুলগাছের পাশাপাশি লেবু, মরিচ, পেয়ারা, পুঁইশাকসহ নানা ধরণের ফল, সবজি ও মশলার গাছ লাগিয়েছেন তিনি। এসব গাছ থেকে সংগৃহীত ফসল দিয়ে তাঁর পরিবারের ফল,সবজি ও মশলার চাহিদা অনেকাংশেই মিটে যায়।
লালমাটিয়ায় একটি ফ্ল্যাট বাসার বাসিন্দা মিস. সুমাইয়া জানান ছাদে জায়গা না থাকায় বারান্দাতেই ফল, সবজির গাছ লাগিয়েছেন তিনি।
সুমাইয়া বলেন, “নিজের বাগানের ফল বা সবজি দিয়ে পরিবারের চাহিদার কিছুটা পূরণ হয়। তবে স্বস্তির বিষয় হলো পরিবারের সদস্যরা ভেজালমুক্ত ও টাটকা খাবারের নিশ্চয়তা পাচ্ছে – এই তো অনেক বেশি।”
পাশাপাশি ঘরের সাথে বাগান থাকায় একধরণের মানসিক প্রশান্তির অনূভুতি তৈরি হয় বলেও বাগান করতে ভালবাসেন সুমাইয়া।
মেলায় অধিকাংশ ক্রেতাকেই দেখা যায় ছাদ বা বারান্দায় টবে লাগানোর উপযোগী নানা ধরণের ফুল, ফল, সবজি বা মশলার গাছ কিনতে।
সাধারণত ছাদবাগানে যেসব ফল দেখা যায়, যেমন পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, পেপে, সেগুলো বাদেও অ্যাভোক্যাডো, ড্রাগনফ্রুটের মত বিদেশী ফলের গাছ কিনতে দেখা যায় ক্রেতাদের।
ছাদে ফল বা সবজি চাষে কতটা আগ্রহী মানুষ?
ঢাকার বৃক্ষমেলায় ফুলগাছ বা নিছক সৌন্দর্যবর্ধক গাছের চেয়ে এবার ফল ও সবজির গাছের চাহিদা অপেক্ষাকৃত বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।
সোহরাব হোসেন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, “মেলায় ফলের গাছের চাহিদাই বেশি। আর ফলের মধ্যে চেনা দেশি ফলের চেয়ে বিদেশি ফলের দিকেই বেশি আগ্রহ মানুষের।”
আরো পড়ুন: পেঁপে চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চাষিরা
সোহরাব হোসেনের মতে ইন্টারনেটে টবে লাগানোর উপযোগী নতুন নতুন বিদেশী ফল সম্পর্কে ধারণা পেয়ে সেসব ফল কিনতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে ক্রেতারা।
গতবছর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনই ঘোষণা দিয়েছিল, ঢাকার ভেতরে বনায়নের চাহিদা মেটাতে যারা বাড়ির ছাদে বাগান করবে, তাদের ১০ শতাংশ কর মওকুফ করা হবে।
বৃক্ষমেলায় বিক্রেতারা ধারণা করছেন সিটি কর্পোরেশনের এরকম সিদ্ধান্তে উদ্বুদ্ধ হয়েই মানুষ ছাদে বাগান তৈরিতে আগের চেয়ে বেশি আগ্রহী হয়েছে।
এসি/ আই. কে. জে/