সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৯ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজ উদ্যোগে ৭০ বছর ধরে গাছ লাগাচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:০১ অপরাহ্ন, ২৫শে নভেম্বর ২০২৩

#

ছবি-সংগৃহীত

গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করাই যার নেশা। নিজের বাড়ি তো বটেই এলাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি খোলা জায়গায় গাছ লাগিয়ে বেড়ান তিনি। নিজের পকেটের টাকায় গাছ লাগানোই তার আনন্দ। সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে গাছ লাগিয়ে প্রায় ৭০ বছর পার করেছেন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব আটখালী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৮২)।

গ্রামে তিনি বৃক্ষপ্রেমিক নামে পরিচিত। এই ৭০ বছরে ৫০ হাজার গাছ রোপণ করেছেন তিনি। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ১২ মাস নিজের টাকা খরচ করে এলাকায়-এলাকায় গাছ লাগান এবং মানুষকে গাছ লাগানোর জন্য ও গাছের পরিচর্যা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। শুধু নিজের গ্রামেই নয়, আশেপাশের অন্তত ১০ গ্রামজুড়ে আছে তার লাগানো নানান প্রজাতির গাছ।

তিনি জানান, বাবা আলতাফ হোসেন হাওলাদারের সাত ছেলের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে কামিল (এমএ) পাস করেন ১৯৮৬ সালে। গলাচিপা শহর ও নিজ গ্রামের কয়েকটি মসজিদে ইমামতির চাকরি করেছেন।

‘ছোটবেলা থেকেই গাছ লাগানোর প্রতি ঝোঁক ছিল’ উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‘গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। ছায়া দেয়। ফল দেয়। গাছের ছায়ায় ক্লান্ত পথিক বিশ্রাম নেন। গাছের পাতা মাটিতে পচে জৈব সার হয়।’

তিনি জানান, বেশিরভাগ চারা নিজেই বাড়িতে তৈরি করেন। আবার কিছু বাজার থেকে কেনেন। মূলত বর্ষায় গাছ লাগান। বাকি সময় গাছের পরিচর্যা করেন। তার রোপণ করা গাছের মধ্যে আছে—সুপারি, নারিকেল, পেয়ারা, জাম্বুরা, গাব, তাল, মেহগনি, রেইনট্রি, সুন্দরী ইত্যাদি।

প্রতিবেশী দেলোয়ার হোসেন জানান, সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার সরকারি রাস্তার দুই পাশে ও অন্যের জমিতেও গাছ লাগান। গ্রামের দোকানদার আবু তাহের জানান, নিজের বাড়ি, গ্রামের পতিত জায়গা, সরকারি রাস্তার দুই পাশসহ সর্বত্রই সিরাজুল ইসলাম হাওলাদারের লাগানো গাছ চোখে পড়ে।

‘গাছ লাগানো যেন তার নেশা ও পেশা’, যোগ করেন তাহের। সিরাজুলের মেয়ে হামিদা বলেন, ‘বাবার এ কাজে আমরা খুশি।’ সিরাজুল বলেন, ‘গাছ লাগাতেই ভালো লাগে। এগুলো আমার সন্তানের মতো। খালি-পতিত জায়গা দেখলেই আমি সেখানে গাছ লাগিয়ে দিই। জায়গাটির মালিক কে তা বড় কথা নয়। সব জায়গায় গাছ লাগিয়ে সবুজের সমারোহ ঘটানোর পাশাপাশি প্রকৃতিকে সুস্থ রাখাই মূল কথা।

আরো পড়ুন: মাছের গায়ে আরবিতে লেখা আল্লাহু, দেখতে জনতার ভিড়

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গাছ লাগানোর চেয়ে গাছ কাটতে বেশি পছন্দ করি। সবারই গাছ লাগানো উচিত। কাজের প্রয়োজনে একটি গাছ কাটলে তার পরিবর্তে কমপক্ষে দুইটি গাছ লাগানো কর্তব্য।’ ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘সিরাজুল ইসলাম হাওলাদারের গাছ লাগানোর অভ্যাস আমাকে মুগ্ধ করেছে। তার এ কাজ প্রশংসার দাবিদার। তিনি গাছ লাগিয়ে গ্রামের চেহারাই পাল্টে দিয়েছেন। তার এ কাজ সবার জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারিভাবে বন বিভাগ থেকে কিছু চারা বরাদ্দ পাই। এখন থেকে বরাদ্দকৃত সব চারা আমরা তাকে দেবো, যাতে তিনি ঘুরে ঘুরে চারা গাছগুলো লাগাতে পারেন।’

এসি/ আই. কে. জে/ 



সিরাজুল ইসলাম

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন