ছবি: সংগৃহীত
প্যালেস্টাইনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতির পর প্যালেস্টাইনের ৩৯ নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। এর আগে ২৫ বন্দী ইনরায়েলিকে মুক্তি দেয় গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস। চারদিনের যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে এসব বন্দীদের মুক্তি দিয়েছে দুই পক্ষ। কাতারের মধ্যস্ততায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় হামাস ও ইসরায়েল।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েল যে প্যালেস্টাইনদের মুক্তি দিয়েছে তাদের মধ্যে ২৪ জন নারী ও ১৫ জন তরুণ। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাদের মুক্তি দেয়া হয়। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আল-আনসারি বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনের প্রতিশ্রুতি অনুসারে তাদের (৩৯ প্যালেস্টাইনি) মুক্তি দেয়া হয়েছে। কারাগার থেকে প্যালেস্টাইনিদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীও। তারা বলেছেন, ফিলিস্তিনি বন্দিদের ইসরায়েলি বাহিনী এবং শিন বেট এজেন্টরা নিয়ে যাচ্ছে।
পোস্টে আরো বলা হয়, ইসরাইলি হাসপাতালে প্যালেস্টাইনিরা তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের সঙ্গে থাকবেন।
এর আগে স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় ১৩ জন ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর পাশাপাশি ১২ জন থাই নাগরিককেও মুক্তি দেয়া হয়।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দেশটির স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় (বাংলাদেশি সময় বেলা ১১টা) গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এর ৯ ঘণ্টা পর বন্দিদের মুক্তি দেয় হামাস। হামাস ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেয়ার আড়াই ঘণ্টা পর কারাগার থেকে প্যালেস্টাইনি বন্দিদের মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।
চার দিনের মধ্যে ৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার যে চুক্তি হয়েছে, সে অনুযায়ী প্রতিদিন নতুন করে আরো বেসামরিক জিম্মিকে যুক্ত করা হবে। তবে নিরাপত্তার কারণে গাজা থেকে বন্দীদের কোন পথে নিয়ে যাওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের মূল লক্ষ্য জিম্মিদের নিরাপত্তা। আমাদের অপারেশন রুমের মাধ্যমে তারা যাতে নিরাপদে সেখানে পৌঁছান তা নিশ্চিত করার দিকে আমরা মনোযোগ দেব। জিম্মিদের গাজা থেকে মুক্তির বিষয়টিতে যুক্ত থাকবে রেডক্রস ও যুদ্ধের অন্য পক্ষগুলো।
এদিকে যুদ্ধবিরতির মধ্যে জ্বালানীবাহী ট্রাকসহ ত্রাণবাহী অন্তত ১৫০টি ট্রাক মিশরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে।
দীর্ঘ ৪৮ দিনের ভয়ংকর আগ্রাসনের পর শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) গাজায় কার্যকর হয় ৪ দিনের যুদ্ধবিরতি। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ মানুষের মনে। তাই সাহস আর তল্পিতল্পা গুছিয়ে বাড়ির পথ ধরেছেন নিরীহ মানুষগুলো। তবে হামলায় বাসস্থানগুলো টিকে আছে কিনা তা জানা নেই তাদের।
প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের গত ৭ অক্টোবরের আকস্মিক হামলায় ১৪০০ জন নিহত হয়েছে বলে জানায় ইসরায়েল। তবে সম্প্রতি সেই সংখ্যা কমিয়ে ১২০০ করা হয়েছে। এছাড়া হামাস ইসরায়েল থেকে ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে গেছে বলে জানায় নেতানিয়াহু প্রশাসন।
এরপর থেকে গাজায় ও পশ্চিম তীরে নির্বিচারে হামলা করছে ইসরায়েল। গাজার আবাসিক এলাকা, স্কুল, হাসপাতাল, জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার গুদাম, খাবারের দোকানসহ কোনো কিছুই হামলা থেকে বাদ যায়নি। এখন পর্যন্ত প্যালেস্টাইনের পশ্চিম তীরে ও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সাড়ে ১৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬০০টিরও বেশি শিশু। নিহত বাকিদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী।
এসকে/
খবরটি শেয়ার করুন