ছবি: সংগৃহীত
শহরাঞ্চলের মানুষ বাজার থেকে মধু কিনে থাকলেও, মধু আহরণকারী মৌমাছির সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন না। অথচ এই মানুষদেরই কার্যক্রমে আজ মৌমাছিসহ অন্যান্য পরাগায়নকারী যেমন, প্রজাপতি, বাদুড়, হামিংবার্ড হুমকির মুখে।
বিশ্বের সব বুনো ফুল প্রজাতির ৯০% সম্পূর্ণভাবে প্রাণী পরাগায়নের উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া বিশ্বের ৭৫% এরও বেশি খাদ্যশস্য এবং ৩৫% কৃষি জমি প্রাণীদের উপর নির্ভরশীল। পরাগায়নকারী এসব প্রাণীদের গুরুত্ব বুঝাতে, তারা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সে-সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবহিত করতে এবং টেকসই উন্নয়নে তাদের অবদান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ২০ মে কে বিশ্ব মৌমাছি দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ।
বাস্তুতন্ত্র এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই মৌমাছি এবং অন্যান্য পরাগায়নকারী। তারা জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে এবং পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
তবে মানব কর্মকাণ্ডের ফলে বর্তমানে এসব প্রজাতির বিলুপ্তির হার স্বাভাবিকের চেয়ে ১০০ থেকে ১০০০ গুণ বেশি। প্রায় ৩৫ শতাংশের মতো মৌমাছি এবং প্রজাপতির মতো অমেরুদণ্ডী প্রাণীরা এবং প্রায় ১৭ শতাংশ মেরুদণ্ডী প্রাণীরা আজ বিশ্বব্যাপী বিলুপ্তির পথে।
যদি এভাবেই চলতে থাকে তবে এর প্রভাব খাদ্যশৃঙ্খলে পড়বে সবচেয়ে বেশি।
অন্যদিকে এপিকালচার বা মৌমাছির চাষ হতে পারে ব্যবসার উত্তম মাধ্যম। মূলত সারাবিশ্বে এপিস প্রজাতির মধু উৎপাদনকারী মৌমাছির চাষ করা হয়। তবে অন্যান্য মধু উৎপাদনকারী মৌমাছির প্রজাতির চাষও করা যায়।
মৌমাছি পালনকারীরা মৌচাকের মধু এবং অন্যান্য জিনিস, যেমন, মোম, মৌমাছির পরাগ, রাজকীয় জেলি ইত্যাদি সংগ্রহ করে। তাছাড়া ফসলের পরাগায়ন, রানী মৌমাছি পালন, বিক্রয়ের জন্য মৌমাছি উৎপাদন ইত্যাদি উপায়েও তারা আয় করে।
প্রায় ১০ হাজার বছর আগে মানুষ মধু উৎপাদনের জন্য মৌমাছি পালন করা শুরু করে। জর্জিয়া থেকেই মূলত এই কাজ প্রথম শুরু হয় এবং এখনও সবচেয়ে প্রাচীনতম মধু জর্জিয়াতেই পাওয়া যায়। ২০০৩ সালে বোরজোমি শহরের কাছে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময় একজন সম্ভ্রান্ত মহিলার কবর থেকে ৫৫০০ বছরের পুরোনো মধু পাওয়া যায়।
কবরে পাওয়া সিরামিক জারগুলোতে লিন্ডেন এবং ফুলের মধুসহ বিভিন্ন ধরণের মধু পাওয়া যায়। প্রায় ৪৫০০ বছর আগে থেকে মিশরীয় শিল্পে মৌমাছির চাষ শুরু হয়। তাছাড়া প্রাচীন চীন, গ্রীস এবং মায়াতেও মৌমাছি পালনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
ভারতে মৌমাছি পালনের প্রচারের জন্য জাতীয় মৌমাছি বোর্ড এবং জাতীয় মৌমাছি পালন ও মধু মিশন রয়েছে। খাদি ও গ্রামশিল্প কমিশনও দেশে মৌমাছি সংক্রান্ত কার্যক্রমের প্রচার করে। কেভিআইসি এর উদ্যোগে কেন্দ্রীয় মৌমাছি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (সিবিআরটিআই), ১৫টি রাজ্যে মৌমাছি পালন সম্প্রসারণ কেন্দ্র (এসবিইসি), ১০০টি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, সমবায় এবং রাজ্য খাদি এবং গ্রামীণ শিল্প বোর্ড সারা দেশে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করে।
আরো পড়ুন: বরগুনায় পরীক্ষামূলকভাবে ‘বিটল পোকা’র চাষ শুরু
তরুণেরা মৌমাছি চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব লাঘব করতে পারে।
এম এইচ ডি/আইকেজে