সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোবাইল যেন সম্পর্ক নষ্টের কারণ না হয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:১২ পূর্বাহ্ন, ৪ঠা নভেম্বর ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

ধরুন, আপনি অনেক দিন/// পুরোনো এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছেন। কিন্তু দেখা করতে এসে দেখেন, আপনার সাথে কথা বলা বাদ দিয়ে, সে মোবাইল স্ক্রল করতেই ব্যস্ত। আপনার দিকে একবার ভালোমতো তাকাচ্ছেও না, আপনার ওই সময় কেমন লাগবে? মনে হবেনা যে দেখা করেই হয়তো ভুল করলেন? এমনটা মনে হতেই পারে, কারণ এই ধরণের আচরণ বিপরীত মানুষকে মানসিকভাবে আঘাত করে। এতে সম্পর্ক নষ্ট হয়, এবং নিজের প্রতি একধরণের হীনমন্যতাও সৃষ্টি হয়।

এই যে ব্যাপারটি, অর্থাৎ কারো উপস্থিতিতে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া, এটির কিন্তু একটি নির্দিষ্ট নামও রয়েছে। একে বলা হয় ‘ফাবিং’ (Phubbing). ইংরেজি শব্দ Phone (ফোন) ও Snubbing (অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ) মিলে তৈরি হয়েছে ফাবিং শব্দটি। সুতরাং, ফোনের প্রতি মনোযোগ দিতে গিয়ে যখন আমরা সামনে থাকা রক্ত-মাংসের মানুষটিকে অবজ্ঞা করি, তখন সেটিকে বলা হয় ফাবিং।

এক্ষেত্রে মনে হতেই পারে যে, ফাবিং খুব ভয়াবহ কোনো অপরাধ না। ভয়াবহ না হলেও, এর ফলাফল সামাজিক অবক্ষয়ের একটা কারণ হতে পারে। দুটি মানুষের মধ্যে যখন একজন অন্যজনের মনোযোগ চায়, তখন তৃতীয়পক্ষ হিসেবে মোবাইল ফোনের টুংটাং বিরক্তির কারণও হয়ে উঠতে পারে।

ফাবিং এর ফলে নষ্ট হতে পারে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতাও। আপনার বন্ধু, প্রেমিক/প্রেমিকা বা স্বামী/স্ত্রী, যদি আপনার কথা না শোনে, তাহলে আপনি না চাইলেও, বিপরীত মানুষটির প্রতি আপনার এক ধরণের অভিমান তৈরি হবে। আস্তে আস্তে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা নষ্ট হবে। আপনি যখন আপনার সামনের বন্ধুটিকে বাদ দিয়ে ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুটিকে মেসেজ পাঠাচ্ছেন, তার মানেটা কী দাঁড়াচ্ছে? তার মানে দাঁড়াচ্ছে এই যে, সামনাসামনি থাকা বন্ধুটির চেয়ে ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুটিই আপনার কাছে বেশি মূল্যবান।

আরো পড়ুন : ফোন ধরার কৌশলই বলে দেবে আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন!

আর বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে সবসময়ই একটা মান-অভিমান, মানসিক টানাপোড়েনের জায়গা থাকে। কেউই মানতে পারে না যে সে যাকে বন্ধু করে, সেই বন্ধুটি তাকে বন্ধু ভাবে না, কিংবা ভাবলেও অন্য আরেকজন বন্ধুর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এরকমটা যখন আপনার সামনে থাকা বন্ধুটিও ভাববে, তখন থেকেই আপনাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হতে থাকবে।

ফাবিংয়ের ফলে রোমান্টিক সম্পর্কেও ভাঙন ধরে। আর তা কেন ধরবে না, বলুন তো! একটি সম্পর্কে খুব ছোট ছোট মুহূর্তও অনেক বেশি মূল্যবান। হয়তো প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রী কিছু বলছেন না, চুপ করে বসে আছেন। কিন্তু ওই নীরবতার সময়টুকুও আপনাদের একান্ত নিজস্ব। ওই সময়ে যদি তৃতীয় পুরুষ (কিংবা নারী) হিসেবে মোবাইলের অনাহূত আবির্ভাব ঘটে, তবে তার ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ। অবজ্ঞাসূচক ব্যবহার নারীরা খেয়াল করে বেশি। 

বিশেষত নারীরা এই বিষয়গুলোতে বেশি প্রভাবিত হয়। একজন নারী হয়তো রাতের বেলা শুয়ে শুয়ে তার স্বামীকে সারাদিন কী কী হয়েছে তা বলছে। সে তখন চাইবে তার স্বামী পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তার কথাই শুনুক। কিন্তু তার স্বামী যদি ভাবে, “এক কান দিয়ে তো শুনছিই সব কথা, সেই সাথে একটু মোবাইলও চাপি না!” তাহলেই কিন্তু লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যেতে পারে। 

তাছাড়া অবজ্ঞা কিংবা পূর্ণ মনোযোগ না পাওয়া থেকে এসব খারাপ লাগা কিন্তু কেবল নারীদের মনেই জন্মায় না, পুরুষদের মনেও জন্মায়। হয়তো একজন পুরুষ স্বাভাবিকভাবে খুব বেশি স্পর্শকাতর নয়। কিন্তু বারবার যখন তার সাথে এমনটা হতে থাকবে, তখন সে-ও একদিন ঠিকই প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলবে। আর সেই প্রতিক্রিয়ার সূত্র ধরে তাদের সম্পর্ক প্রায় খাদের কিনারায় চলে আসলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

এস/ আই.কে.জে/

মোবাইল সম্পর্ক ফাবিং

খবরটি শেয়ার করুন