শরতের শুভ্র মেঘের সাথী কাশফুল। ছবি : সুখবর
মেহেদী হাসান
হাস্যোজ্জ্বল মুখের দুপাশে কাশফুলের ডাঁটা। বাতাসে দোল খাচ্ছে কাশফুল। পরনে নীল শাড়ি, সাদা ব্লাউজ কিংবা নীল-সাদার অন্য কোনো পোশাক। সঙ্গে অবশ্যই টিপ। ছেলেদের পরনে নীল পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা। এই সময়ে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাতায় পাতায় এমন ছবি ভেসে বেড়াতে দেখা যায়।
যেমন: নীল আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা।
শরতের সঙ্গে স্নিগ্ধতার সম্পর্ক চিরায়ত। শরৎ শব্দটি স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে আকাশের সাদা-নীল, ধবধবে সাদা কাশফুলে আর শিউলি ফুলের সাদা, কমলা রঙে। এই তো শরতের চিহ্ন। বিশেষ করে এখনকার নগর ও নেট জীবনে।
শরৎ যে এসে গেছে, এভাবেই তার জানান দিচ্ছে ভার্চ্যুয়াল জগৎ। আর বাস্তব জগতেও একটু খেয়াল করলে আশপাশেই পেয়ে যাবেন শরতের চিহ্ন। উত্তরে রাজধানীর দিয়াবাড়ীর পাশ দিয়ে যদি যাওয়া পড়ে কিংবা দক্ষিণে বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরাণীগঞ্জ—বিস্তীর্ণ জায়গা ধারে কাশবন চোখে পড়বে অনিবার্য। বালু–মাটি দিয়ে ভরাট কোনো আবাসন প্রকল্প, পদ্মা, মেঘনা, যমুনার চর—পুরো দেশজুড়েই তো এখন কাশফুল, কাশবনের ল্যান্ডস্কেপ। আবার ঢাকার চলতি পথে ঘাড় উঁচিয়ে কোনো বহুতল ভবনে একেবারে ওপরে তাকালে ছাদের রেলিং টপকে উঁকি মারা কাশফুল চোখে পড়বে। অনেকেই এ সময় ছাদবাগানের টবে লাগিয়ে রাখেন কাশফুল। অনেক উঁচুতে সেগুলো ছড়ায় শুভ্রতা।
নদীর ধারে সারি সারি কাশফুল ফুটে আছে। বাতাস এলে ফুলগুলো একসাথে দোল খায়। সে দৃশ্য কতই না মনোরম। কাশফুলের লম্বাটে শরীরের মাথায় পেঁজা তুলোর মতো অংশটাকে কাশফুল বলে। কাশফুলের নাম শুনেনি কিংবা জীবনে একবার হলেও কাশফুল দেখেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
কাশফুল শরৎকালের অন্যতম রূপ-সৌন্দর্য বর্ধনকারী একটি ফুল। নদীর ধার ঘেঁষে কাশফুলেরা বেড়ে ওঠে। নদীর ধার ছাড়াও বিভিন্ন জমিতে, মাঠেও কাশফুল দেখা যায়। আবার কোথাও কোথাও কাশফুল ফুটে বাগানের সৃষ্টি করে। কাশফুলের নামটি যেমন দারুণ তেমনি লিকলিকে শরীরের গাছটি দেখতেও খুব সুন্দর।
বর্ষার কদমফুলের দিন শেষ হতে না হতেই শরতের কাশফুলের দেখা মেলে। কাশবাগানে বাতাস এলে কাশফুলেদের একসাথে মাথা দোলানো দেখে মানুষ কতই না মুগ্ধ হয়। শরতের আকাশ থাকে সাদা মেঘে ভরা আর নদীর দু’ধার কাশফুলেতে ভরা। মেঘের পেঁজা তুলোর মতো কাশফুলের রঙও সাদা। কাশফুল ছিঁড়ে বাতাসে ছেড়ে দিলে পেঁজা তুলোগুলো উড়ে উড়ে যেন মেঘের তুলোর সাথে মিশে যাবে।
কাশফুলের ঘ্রাণ নেই বটে কিন্তু আছে তার অপরূপ সৌন্দর্য। যে সৌন্দর্যের গুণে শরতের প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠে কাশফুল। মানুষ মনে করে শরৎকাল মানেই কাশফুলের দিন। এই একটি ফুল নিয়ে কতই না লেখালেখি করছে লেখকরা। ছড়া লিখছে, কবিতা লিখছে, লিখছে ছোটগল্প। তাকে নিয়ে প্রচ্ছদ রচনাও লেখা হচ্ছে। শরতের দিনে লেখকদের লেখার মূল বিষয়ই যেন হয়ে ওঠে কাশফুল। প্রকৃতিপ্রিয় মানুষরা ছুটে কাশবাগানে। তোলে অজস্র ছবি। কাশবাগান তখন লোকে লোকারণ্য থাকে। ছোট ছেলেমেয়েরা কাশফুল নিয়ে খেলা করে। এক কথায় বলা যায়, কাশফুল মানেই শরতের দিন আর শরতের দিন মানেই কাশফুল। শরতের শুভ্র মেঘের সাথী কাশফুল। সবাইকে শরতের কাশফুলময় শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখার ইতি টানছি।
এস/ আই. কে. জে/