সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেখ কামাল ছিলেন তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ১০:০৫ অপরাহ্ন, ৪ঠা আগস্ট ২০২৩

#

শহীদ শেখ কামাল

তাপস হালদার 

শহীদ শেখ কামাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের দ্বিতীয় সন্তান, জ্যেষ্ঠ পুত্র। শেখ কামালের নামকরণেরও একটি ইতিহাস আছে। বঙ্গবন্ধু তুরস্কের জাতির পিতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের একজন ভক্ত ছিলেন। তাঁর নামানুসারে নাম রাখেন কামাল। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। খেলাধুলা, নাটক, গান, শিল্প-সাহিত্য, এমন কি সময়ের প্রয়োজনে রাজনীতিতেও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।

শৈশব থেকেই খেলাধুলার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ ছিল শেখ কামালের। সব ধরনের খেলার প্রতি আগ্রহ থাকলেও ক্রিকেটটাই তাঁকে বেশি টানতো। ছিলেন দ্রুতগতির ফাস্ট বোলার। প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও শেখ মুজিবের সন্তান হওয়ার কারণে পাকিস্তান জাতীয় দলে খেলার সুযোগ হয়নি। আজাদ বয়েজ ক্লাবের সদস্য হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট লীগ খেলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় সলিমুল্লাহ হলের বাস্কেটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ক্রিকেট, ফুটবল ও হকি খেলাকে বিশ্বমানে নিয়ে যেতে তৈরি করেন আবাহনী ক্রীড়াচক্র নামে ক্লাব। ১৯৭৩ সালে আবাহনী ক্রীড়াচক্রের জন্য বিদেশ থেকে বিল হার্ট নামে একজন ফুটবল কোচ এনেছিলেন। উপমহাদেশে তখন বিদেশি কোচ নিয়ে খেলা একপ্রকার স্বপ্ন ছিল। তিনি সেই কাজটি করেছিলেন। খেলাধুলা এতই বেশি পছন্দ করতেন, এজন্যই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন একজন ক্রীড়াবিদকে। তাঁর স্ত্রী সুলতানা খুখু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লু’ খেতাবপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ।

শেখ কামাল ছায়ানটের সেতার বাদক বিভাগের ছাত্র ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের সেতার বাজানো প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যমঞ্চেও সুপরিচিত মুখ ছিলেন। নাট্যদল কলকাতায় গিয়ে মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটক মঞ্চায়ন করেন। প্রধান চরিত্রে তিনিই অভিনয় করেন। ‘স্পন্দন’ নামে একটি ব্যান্ড দল গঠন করেন। বাংলাদেশে এটিই ছিল প্রথম ব্যান্ড দল।

রাজনীতির যেকোনো সংকটে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে ঢাকা কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় ৬ দফা, ১১ দফা দাবিসহ ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কোনো দিন পদের প্রতি মোহ ছিল না। ইচ্ছা করলে যেকোনো পদই নিতে পারতেন। কিন্তু একজন কর্মী হিসেবে থাকতেই বেশি পছন্দ করতেন।

দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে ছোট ভাইকে নিয়ে দেশকে স্বাধীন করতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানীর এডিসি হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর সেনাবাহিনীর একজন কমিশন প্রাপ্ত অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। তবে স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনীর পদ ত্যাগ করে শিক্ষাজীবন শেষ করতে ফিরে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুরা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হেয় করতে ষড়যন্ত্র শুরু করে। তার প্রথম টার্গেট ছিলেন শেখ কামাল। মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা, কুৎসিত অপপ্রচারের শিকার হতে হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় সবই ছিল স্বাধীনতা বিরোধী দেশদ্রোহী কুশীলবদের গভীর ষড়যন্ত্র। সময়ের পরিক্রমায় শেখ কামালের কর্ম সূর্যের আলোর মতো দীপ্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে।

শেখ কামাল যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিটা ক্ষেত্রে তিনি আলো ছড়াতেন। ক্রীড়া ক্ষেত্রে হয়তো আরো আগেই বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে  স্থান করে নিতো। রাজনীতিতে তিনি যদি তাঁর বড় আপা দেশরত্ন শেখ হাসিনার পাশে থাকতেন তাহলে বাংলাদেশ আরো আগে সমৃদ্ধ হতো। শেখ কামালের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রিয় আপা, ছোট বেলার খেলার সাথী শেখ হাসিনা। 

তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন শেখ কামাল। মাত্র ২৬ বছর বেঁচেছিলেন। এত অল্প সময়ে কী করেননি? সৃজনশীল সব ক্ষেত্রেই ছিল দীপ্ত পদচারণা। অসম্ভব এই মেধাবী তরুণকে এখনও আমরা যুব সমাজের কাছে সেভাবে তুলে ধরতে পারিনি, এটা জাতি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতা। শেখ কামালের আদর্শকে তরুণ প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে নিঃসন্দেহে তাঁর কর্ম তরুণ প্রজন্মকে উদীপ্ত করবে। এই প্রতিভাবান তরুণ ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শুভ জন্মদিনে তাঁর প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

ইমেইল: haldertapas80@gmail.

শেখ কামাল তাপস হালদার

খবরটি শেয়ার করুন