ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
রহস্যময় এক পাখি আবাবিল। পবিত্র কাবা ঘর ভাঙতে এসে যে পাখির কাছে পরাজিত হয়েছিল আবরাহার হস্তি বাহিনী। এক সময় পশ্চিমাদের ধারণা ছিল, শীতকালে আবাবিল পাখি চাঁদে যায়। অনেকে ভাবত শীত এলে তারা নদীর তলদেশে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আবাবিল নিয়ে গ্রিক, এমনকি রোমান পুরাণেও বহু কাহিনী পাওয়া যায়।
শীতকালে বাংলাদেশেও পরিযায়ী আবাবিল পাখির দেখা মিলে। খাল, হাওড়, জলাশয় কিংবা ফসলের ক্ষেতের ওপর উড়ন্ত অবস্থায় তাদের ছোট ছোট পোকা শিকার করতে দেখা যায়। প্রচলিত আছে এই পাখিরা নাকি কখনোই মাটিতে নেমে আসে না। এই পাখিগুলো প্রচুর উড়তে ভালোবাসে। পরিযায়ী পাখিগুলো প্রতিবছরই শীত শেষে তাদের ঘরে ফিরে যায়।
পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা ফিলে এই আবাবিল পাখির কথা উল্লেখ আছে। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার পার্শ্ববর্তী ইয়েমেনের শাসক আবরাহা তার রাজধানী সানাতে কাবার অনুরূপ ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ করেন। আবরাহার ইচ্ছা ছিল মক্কার পরিবর্তে সানাকে ঘিরে বিশ্ববাসীর প্রার্থনা আবর্তিত করা।
কিন্তু ধর্মপ্রাণ মানুষ কাবা ত্যাগের কথা কোনোভাবেই ভাবতে পারেননি। তাই ক্ষুদ্ধ আবরাহা কাবা গুঁড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। ৯-১৩টি বড় বড় হাতি নিয়ে কাবার উদ্দেশে যাত্রা করে তার সৈন্যদল। কিন্তু কিছুদূর গিয়ে হাতিগুলোও আর অগ্রসর হয় না। আর তাদের ওপর বৃষ্টির মতো নুড়ি পাথরের ঢিল এসে পড়তে শুরু করে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিতে আকাশ ছেয়ে যায়। এই পাখিগুলোই এসব ঢিল ছুঁড়ছিল। এভাবেই এক বৃহদাকার প্রাণীর পথ আটকে দেওয়া ক্ষুদ্র এক পাখি আবাবিল।
১৬৮০ সালের দিকে ইংরেজ শিক্ষাবিদ চার্লস মর্টন দাবি করেন, শীতকালে আবাবিল পাখি চাঁদে যায়। কারণ তখন আবাবিলদের দেখা মিলে না। কিন্তু সে সময় তারা কোথায় যায় এ বিষয়ে কারও কোনো ধারণা ছিল না।
মর্টন পাখিদের অনেক অনুসন্ধান করেও খোঁজ না পেয়ে ধারণা করেন, পাখিরা এমন জায়গায় যায় যেখানে তাদের খুঁজে পাওয়ার সাধ্য মানুষের নেই। এমন ধারণা থেকেই তিনি পাখিদের চাঁদে যাওয়ার এই তত্ত্বটি দিয়েছিলেন।
আবার পানি ভালোবাসে বলেই নদী ও হ্রদ ঘিরেও আবাবিলকে নিয়ে বিভিন্ন গল্প শোনা যায়। লোককথায় আছে, আবাবিল পাখি হ্রদে রাত কাটায়। অনেকে আবার নদীর তলদেশ থেকে পাখিকে উঠতে দেখেছেন বলে দাবিও করেন। স্যামুয়েল জনসন নামে একজন লেখকের মতে, সোয়ালো বা আবাবিল নিশ্চিতভাবে পুরো শীতকাল ঘুমিয়ে কাটায় কিন্তু সেটা নদীর তলদেশে।
ওআ/ আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন