ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মানিকগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামী লীগের নৌকার প্রাথী ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বছরে বিভিন্ন খাত থেকে আয় করেন ৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা রেহেনা আকতারে কাছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এবারের জমা দেওয়া হলফনামা সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে।
২০০৮ ও ২০২৩ সালের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অ্যাপার্টমেন্ট বা বাড়ি অথবা অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত এবং অন্যান্য বাবদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বার্ষিক আয় বর্তমানে ৮ কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার ২৫ টাকা। যা ২০০৮ সালে ছিল ৭১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯১ টাকা। এ হিসাবে গত ১৫ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় ১২ গুণ (১১ দশমিক ৬৩)।
অপরদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তার এবারের জমা দেওয়া হলফনামা থেকে জানা গেছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী নেই। তবে ২০০৮ সালে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী তার এক লাখ টাকা মূল্যমানের ইলেকট্রনিক সামগ্রী ছিল।
জানা গেছে, তিন মেয়াদে তার আয় বেড়েছে সাড়ে ১১ গুণের বেশি। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ গুণেরও বেশি। এবার তার হাতে নগদ ৬৪ লাখ ও বৈদেশিক মুদ্রা মজুত আছে ৬৭ হাজার ৯৯৬ দশমিক ৬২ ইউএস ডলার।
২০০৮ সালে তার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া বাসা ও বারিধারা মডেল টাউন বাসা ৩ নম্বর পার্ক রোড বাসায় দেড় লাখ টাকার আসবাবপত্র উল্লেখ করলেও ২০১৮ ও ২০২৩ সালে সেটি কমে মাত্র ৭০ হাজার টাকা মুল্যমানের আসবাবপত্র আছে।
২০০৮ সালে তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় বারে জয়ী হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয় বারে জয়ী হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ লাভ করেন।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় জাহিদ মালেক পেশা হিসেবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থাই অ্যালুমিনিয়াম ও সানলাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান উল্লেখ করেছেন। ২০১৮ সালে পেশা হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেছিলেন।
বর্তমান ২০২৩ সালের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় পেশা হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর পাস। তার বিরুদ্ধে দেশের আদালতে কিংবা থানায় নেই কোনো মামলা।
হলফনামা অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৭ গুণ। এবার নগদ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা, বন্ড ও ঋণপত্র, যানবাহন ও অন্যান্য বাবদ তার অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য ৭০ কোটি ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬১ টাকা। যা ২০০৮ সালে ছিল ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭ টাকা। এ হিসাবে গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য বেড়েছে ৬৩ কোটি ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ৬০৪ টাকা।
২০০৮ জাহিদ মালেকের নামে অকৃষিজমি ছিল ২ দশমিক ৫ কাঠা এবং তার স্ত্রীর ছিল ২ দশমিক ৫ কাঠা। এ ছাড়া ৫৩ দশমিক ৪ শতক জমিতে ১১ তলা আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন ও বাড়ি ছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর।
এ ছাড়া যৌথ মালিকানায় ৪০ বিঘা কৃষিজমি ছিল। এখনও সেই স্থাবর সম্পদের পরিমাণ অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে স্ত্রীর নামে ২ দশমিক ৫ কাঠার ওই জমি এবার নির্ভরশীলদের নামে স্থানান্তর করা হয়েছে। যৌথ মালিকানার ৪০ বিঘা কৃষিজমি এবার নির্ভরশীলদের নামে রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রী শাবানা মালেকের সামান্য অস্থাবর সম্পদ কমেছে। ২০০৮ সালে হলফনামায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর নামে ৩৯ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকার বন্ড বা ঋণপত্র ছিল। ২০২৩ সালের হলফনামায় নেই বন্ড বা ঋণপত্র। তবে গত ১৫ বছরে তার ৫ ভরি স্বর্ণ বেড়ে ৫৫ ভরি হয়েছে। এই সময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর প্রায় ৩৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ কমেছে।
২০০৮ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ওপর নির্ভরশীলদের ২৫ ভরি স্বর্ণ থাকার ঘোষণা থাকলেও এবারে তা উল্লেখ নেই। এবারের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লি. এবং সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ও কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের কাছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯ টাকা দায় রয়েছে। ২০০৮ সালে সেই দায়ের পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৮০ টাকা। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ১ কোটি ৫০ লাখ ২৩ হাজার ৭৯৯ টাকা ঋণ বা দায় রয়েছে। অপরদিকে তিন বারে মাথায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী পেয়ে তিনি তার দায়িত্ব পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। এ সময় মহামারি করোনা ও ডেঙ্গু মোকাবেলাসহ দেশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি রোগ নির্মূলে কাজ করেন তিনি।
ওআ/
খবরটি শেয়ার করুন