ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ তনয়া শেখ রেহানা। একজন নিভৃতচারী। তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও অতি সাধারণ। দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হয়েও সক্রিয় রাজনীতির সম্মুখ সারিতে আসেননি তিনি। রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে আড়াল রাখার মধ্য দিয়ে তিনি বেছে নিয়েছেন নিভৃত গৃহকোণ। তার যে নির্মোহ জীবনাচারের পরিচয় পাওয়া যায়, তা অতুলনীয়। তিনি মূলধারার রাজনীতিতে কখনো যুক্ত হতে আগ্রহী নন। তবে তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হলেও জনহৈতিষী ও জনকল্যাণকর কাজে সর্বদা নিরলসভাবে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছেন।
শেখ রেহানা অসীম সাহস ও সক্ষমতার পরিচয় দেখিয়ে অনেক স্থানে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। পারিবারিক শিক্ষা, বিশেষ করে মায়ের দেওয়া শিক্ষা, ধৈর্য, সাহস, বিচক্ষণতা, অধ্যবসায়, ত্যাগ ও নির্লোভতা তার চলার পথকে সুগম করেছে। সততার কষ্টিপাথরে পরীক্ষিত শেখ রেহানা তার নিজের নামে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ২০০ কোটি টাকা মূল্যমানের ঢাকার ধানমন্ডির ৬ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাড়িটি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের জন্য উৎসর্গ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ গুলি করে হত্যা করা হয়। বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় রক্তাক্ত অভ্যুত্থান থেকে সেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন।
ইতিহাসের এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের কয়েক বছর পর এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট আমি মরে গেলেই ভালো হতো। বাবা নেই, মা নেই, ভাই নেই। আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না। আমি কী নিয়ে বাঁচব? কী আছে আমার? রাসেল কী অপরাধ করেছিল? ও তো রাজনীতি করত না। আমার মা তো রাজনীতি করত না। কেন ওরা তাদের হত্যা করল?’
শেখ রেহানা বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, আমার মতো যেন কাউকে তিনি শাস্তি না দেন। আমি এতিম বড় অসহায়। আমি মেয়ে হিসেবে, বাঙালি হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাই।’
শেখ রেহানা সাধারণ মানুষের মতোই জীবনযাপন করেন। কখনো তিনি অহংকার করেন না। নীরবে-নিভৃতে দেশের জন্য কাজ করেন। বড় বোন শেখ হাসিনাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছেন।
শেখ রেহানা কখনো রাজনীতিতে শামিল হওয়ার কথা ভাবেননি; কিন্তু নেপথ্যে বড় বোনকে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। ইতিহাসবিদদের বর্ণনানুযায়ী, রেহানা একজন আদর্শ বোন, বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য পূরণের লক্ষ্যে নিঃস্বার্থ সমর্থনের উৎস। দুই বোন জন্মসূত্রে বন্ধনে আবদ্ধ এবং তারা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন।
পঁচাত্তরে শেখ হাসিনাসহ বেলজিয়ামে উড়াল না দিলে বাবা-মা ও ভাইদের মতো তাকেও হত্যা করা হতো। তবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার জন্য জীবন কখনোই সহজ ছিল না।
হত্যাকাণ্ডের সময় তারা বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসায় ছিলেন। অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাষ্ট্রদূত তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি বিমানবন্দরে যেতে গাড়ি দিতেও অস্বীকৃতি জানান। পরে দুবোন জার্মানি হয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে চলে যান। সেখানে তাদের নির্বাসিত জীবনের দীর্ঘ একটা সময় কাটে।
শেখ রেহানা পরে ভারত থেকে লন্ডনে চলে যান এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। লন্ডনে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন শেখ রেহানা। রাজনীতিতে না আসলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সক্রিয় রাজনীতিবিদদের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা দিয়ে গেছেন সবসময়।
রেহানা একজন গর্বিত মা। সততার অনুকরণীয় আদর্শ এক রত্নগর্ভা মা তিনি। অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক ও শেখ রেহানা দম্পতির তিন ছেলেমেয়ে। তাদের মধ্যে বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির একজন এমপি। ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত এবং আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি।
ছোট মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী লন্ডনে ‘কন্ট্রোল রিস্কস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গ্লোবাল রিস্ক অ্যানালাইসিস সম্পাদক হিসেবে কর্মরত।
বঙ্গবন্ধুর যে উত্তরাধিকারকে ঘাতকরা নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, সেই শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাই থেকে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে এসেছেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার মানুষের কল্যাণে তার দুই কন্যার এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক।
আর.এইচ/ আই. কে. জে/
খবরটি শেয়ার করুন