রবিবার, ১৯শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** নাশকতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেলে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে: সরকারের বিবৃতি *** তারেক রহমানের বিবিসির সাক্ষাৎকারে ৮০ ভাগ নেটিজেনের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া *** ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তপশিল: সিইসি *** ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে এনসিপি *** চীন সরকারের ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান, শীর্ষস্থানীয় ৯ জেনারেল বরখাস্ত *** ঢাকামুখী ৮ ফ্লাইট গেল চট্টগ্রাম ও কলকাতায় *** জুলাই সনদে কাল স্বাক্ষর করবে গণফোরাম *** যারা বলেন এবার ‘জামায়াতের শাসন দেখি’, তাদের উদ্দেশ্যে যা বললেন আনু মুহাম্মদ *** ‘রক্ত দিতে হলে সামনের সারিতে, ক্ষমতার প্রশ্নে খুঁজে পাওয়া যাবে না’ *** ‘দোসর’ বলার জন্য বিএনপির সালাহউদ্দিনকে ক্ষমা চাইতে হবে: নাহিদ

চাটুকারিতা যখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৭:২৮ অপরাহ্ন, ১৪ই অক্টোবর ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

মিশরের শারম আল-শেখ শহরে গতকাল সোমবার (১৩ই অক্টোবর) অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশ নেন অন্তত ২০টি দেশের সরকারপ্রধান। ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। মূলত যুদ্ধবিরতি, গাজার সংস্কার পরিকল্পনা ও যুদ্ধ পরবর্তী কূটনীতি ছিল এই সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়। কিন্তু সম্মেলন কক্ষের গাম্ভীর্যপূর্ণ হাওয়া বদলে যায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বক্তব্য শুরুর পর।

গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার জন্য জড়ো হওয়া বিশ্বনেতাদের সামনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মুখে ছিল কেবলই প্রশংসাবাণী। তিনি প্রশংসা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের। উপাধি দেন শান্তির দূত। নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনয়নের কথাও স্মরণ করেন। ধন্যবাদ দেন পারমাণবিক শক্তিধর ভারতের সঙ্গে সংঘাত বন্ধের জন্য। তথ্যসূত্র: পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনের নিবন্ধ।

শাহবাজ শরিফ যখন এমন প্রশংসা করছিলেন, তখন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বেশ আত্মতৃপ্ত মনে হচ্ছিল। পেছনে অন্য দেশের নেতারা স্থির দাঁড়িয়ে ছিলেন। কারও কারও হতবাক চেহারায় অবিশ্বাস প্রকাশ পাচ্ছিল। করতালির সময়ও তারা দ্বিধান্বিত ছিলেন।

কূটনীতির প্রচলিত মানদণ্ডে শাহবাজ শরিফের মন্তব্যগুলো ছিল একেবারেই অযৌক্তিক। সম্মেলন কক্ষে থাকা আবদেল ফাত্তাহ সিসি, এমানুয়েল মাখোঁ, রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মতো কোনো নেতাই লাগামহীন প্রশংসার সুরে কথা বলেননি। বহুপাক্ষিক গুরুত্বের এক ফোরামে শাহবাজকে অনেকটা ব্যাঙ্গাত্মক লাগছিল। কিন্তু একজন শ্রোতার ঠিকই মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তিনি আর কেউ নন- ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে স্বীকৃতি ও প্রশংসা বেশ গুরুত্ব পায়। ফলে শাহবাজ শরিফের কথাগুলো তার কাছে উদ্দীপনামূলক ছিল বলেই ধরে নেওয়া যায়। ট্রাম্পীয় কূটনীতির মঞ্চে চাটুকারিতা কোনো প্রতারণা নয়; বরং একধরনের মুদ্রা। নীতিনির্ধারণের কোনও অনুচ্ছেদের চেয়ে অতিরঞ্জিত প্রশংসা অনেক বেশি সদিচ্ছা কিনে দিতে পারে। 

রাজনৈতিক মনোবিজ্ঞানীরা এটিকে বলেন ‘নার্সিসিস্টিক রিওয়ার্ড লুপ’। এটি এমন এক মানসিক প্রতিক্রিয়ার চক্র, যেখানে আপনি বাস্তবতা তুলে ধরার বদলে শুধু প্রশংসা করে সহযোগিতা আদায় করতে পারেন। সম্মেলনে শাহবাজ শরিফের ভাষণ নিয়ে অনেকে বিদ্রুপ করতে পারেন। কিন্তু তিনি ঠিকই তার লক্ষ্যের জায়গায় সফল হয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। অন্য বিশ্ব নেতারা যেখানে এমন ভাষণকে কূটনীতির ভুল পদ্ধতি হিসেবে মূল্যায়ন করছিলেন, সেখানে ট্রাম্প কারও আনুগত্যের প্রতিধ্বনি শুনছিলেন। আত্মকেন্দ্রিক কূটনীতির অসম জগতে, এই পার্থক্যটাই সবকিছু নির্ধারণ করে।

একবিংশ শতাব্দীর গণমাধ্যমনির্ভর রাজনীতি আগের দিনের ভদ্রতার রীতি মানে না। এখন উদ্দেশ্য নয়, বরং প্রভাব গুরুত্ব পায়। শাহবাজ শরিফের প্রশংসার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়াও যে রাষ্ট্রনায়কের মতো ছিল- তা নয়। তাকে প্রশংসায় ভাসা এক তারকার মতো দেখাচ্ছিল। যিনি হাসলেন, রসিকতা করলেন ও ইঙ্গিত দিলেন। গণমাধ্যমনির্ভর রাজনীতিতে এই বিষয়গুলোই পরে খবরের শিরোনাম হলো। 

সম্মেলনে শাহবাজ শরিফ যে ভাষণ দিয়েছেন, তা গাজার মানুষের ভাগ্য ও সংস্কারে কোনো বদল আনবে না। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতিতে একটি নতুন ব্যাকরণ হয়ে থাকবে। যেখানে অযৌক্তিক কথাও কার্যকর হয়, ভুল পদক্ষেপ হয় গণমাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণের কৌশল।

ডোনাল্ড ট্রাম্প শাহবাজ শরিফ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250