মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৬ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের হিড়িক, সবাই নেতা হতে চান

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৫:০২ অপরাহ্ন, ২৮শে এপ্রিল ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

দেশে একের পর এক রাজনৈতিক দল গঠন হচ্ছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত নয় মাসে দুই ডজন নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। গত শুক্রবার (২৫শে এপ্রিল) সকালে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে একটি দলের।

দীর্ঘদিন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের (নিসচা) নেতা ও ঢাকাই সিনেমার অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে দলটি গঠিত হয়েছে। তিনি নতুন এ দলের চেয়ারম্যান। মহাসচিব হলেন সাংবাদিক নেতা ও বিএনপির সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ। দলটির নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র হয়েছেন বিকল্পধারার নেতা গোলাম সারোয়ার মিলন।

গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের সমন্বয়ে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি) গঠিত হয়। সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় দলটি গঠিত হয় বলে নতুন দলগুলোর মধ্যে এনসিপিকে নিয়ে  রাজনীতিতে আলোচনা একটু বেশি। 

প্রথমে অনেকে মনে করেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গড়া এ দলের আত্মপ্রকাশ দেশের রাজনীতিতে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ঘটনা হবে। আস্তে আস্তে সে আশা ফিকে হয়ে যাচ্ছে।

গত বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর—এ ৫ মাসে ১১টি দল আত্মপ্রকাশ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দল এসেছে সেপ্টেম্বর মাসে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রথম ‘নিউক্লিয়াস পার্টি’ (এনপিবি) নামের একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে গত ২৩শে আগস্ট দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটে।

৮ই সেপ্টেম্বর ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি’, ১৯শে সেপ্টেম্বর ‘ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি’, ২০শে সেপ্টেম্বর সমতা পার্টি, ২৩শে সেপ্টেম্বর ‘জনপ্রিয় পার্টি’ (বিপিপি), ২৭শে সেপ্টেম্বর ‘সার্বভৌমত্ব আন্দোলন’, ১৫ই নভেম্বর ‘সংস্কারবাদী পার্টি’ (বিআরপি), ১৬ই নভেম্বর ‘মুক্তির ডাক ৭১’, ২৮শে নভেম্বর ‘জাগ্রত পার্টি’, ৩০শে নভেম্বর ‘গণতান্ত্রিক পার্টি’ (বিজিপি) ও ১৬ই ডিসেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের’ আত্মপ্রকাশ ঘটে।

চলতি বছরের চার মাস শেষ হওয়ার আগে আরও ১২টি নতুন রাজনৈতিক দল এসেছে। ৪ঠা জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে ‘দেশ জনতা পার্টি’। ২৮শে জানুয়ারি একদিনেই ‘আমজনতার দল’ ও ‘গণতান্ত্রিক শক্তি’ নামে দুটি দলের আবির্ভাব ঘটে। 

ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ করে তিনটি দল—‘সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি’ (বিএসডিপি), ‘জন-অধিকার পার্টি’ ও ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)।

মার্চে গঠিত হয় ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টি’ ও ‘জনতার দল’। চলতি এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসে। ১১ই এপ্রিল ‘গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি’, ১৩ই এপ্রিল ‘ভাসানী জনশক্তি পার্টি’, ১৭ই এপ্রিল ‘আ-আম জনতা পার্টি’ (বিএজেপি) এবং ২৫শে এপ্রিল ‘জনতা পার্টি’ নামে আরেকটি দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

মানুষের কাছে এখন রাজনৈতিক দল গঠন হাসি-তামাশার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশ কয়েকটি বাহারি দলের নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোরাঘুরি করছে। আহবান জানানো হচ্ছে, ‘আসুন দল গঠন করি’। 

‘গরিব পার্টি’, ‘সংস্কারবাদী পার্টি’, ‘শান্তির দল’, ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’, ‘জাতীয় ভূমিহীন পার্টি’, ‘বেকার সমাজ’, ‘জনপ্রিয় পার্টি’, ‘জনতার কথা বলে’ ও ‘জাগ্রত পার্টি’সহ হাজারো নাম নিয়ে হাসিঠাট্টা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দল গঠনের এ প্রবণতা নতুন কিছু নয়। এর পেছনে কিছু দুরভিসন্ধিমূলক চিন্তা থাকে। যারা গঠন করেন, তাদের মধ্যে অনেকে মনে করেন, রাজনৈতিক দল গঠন করলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাওয়া যায়। সরকার থেকে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। কোনো বড় দলের সঙ্গে সমঝোতা করে দু’-একটি সংসদীয় আসন পাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই!

বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন দল গঠন করতে দেখা গেছে। তবে এবার এ  প্রবণতা আগের সময়গুলোর তুলনায় বেশি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানায়, এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল আছে ৫০টি। আরও ৪৬টি দল নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। দলগুলোর বেশিরভাগই নামসর্বস্ব।

কবি মোহাম্মদ রফিক তার ‘খোলা কবিতা’য় লিখেছিলেন,‘সব শালা কবি হবে; পিঁপড়ে গোঁ ধরেছে, উড়বেই/ বন থেকে দাঁতাল শুয়োর রাজাসনে বসবেই।’ কবিতার ‘সব শালা’ কবি হওয়ার মতো এখন সবাই নেতা হতে চান। রাজনীতি যেন শিশুদের ‘পুতুল পুতুল খেলা’। ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে/ নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে’।

এইচ.এস/


নতুন রাজনৈতিক দল

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন