ফাইল ছবি
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর কেটে গেছে প্রায় এক বছর। অনিশ্চিত ও অস্থির এই সময়ে শেয়ার, স্বর্ণ ও ক্রিপ্টোর মতো অনুষঙ্গগুলোর দর পৌঁছেছে সর্বকালের সর্বোচ্চ স্তরে।
২০২৪ সালের ৫ই নভেম্বর ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে হারান ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০শে জানুয়ারি। ট্রাম্প জেতার পরপরই বেড়ে যায় ডলারের দর। একইসঙ্গে বাড়ে স্টকস, বিটকয়েন ও ট্রেজারি ইল্ডও। কেননা বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করেছিলেন ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থার ওপর চাপ আরও বাড়বে।
এরপর থেকে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন এবং গত এক দশকের 'যুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক' কৌশল পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি করেছে ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে বিনিয়োগকারীরা এখন ট্রাম্পের এই অনিশ্চিত আচরণের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শিখে গেছেন।
বিশেষ করে তার হুমকি বাড়িয়ে পরে পিছিয়ে আসার যে প্রবণতা, সে অবস্থা থেকেও মুনাফা করার উপায় বের করে নিয়েছেন। ট্রাম্পের এই প্রবণতাকেই এখন 'টাকো ট্রেড' বা 'ট্রাম্প অলওয়েজ চিকেনস আউট' নামে অভিহিত করা হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকে প্রধান প্রধান বাজারগুলো কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, তা তুলে ধরা হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।
ডলারের ওঠানামা
ট্রাম্পের অনিয়মিত নীতির প্রতি বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কেমন, সেটি সবচেয়ে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছে মার্কিন ডলার। নির্বাচনের পর ডলারের দর বেড়েছিল, কেননা বিনিয়োগকারীরা ভেবেছিলেন ট্রাম্পের ব্যয়বহুল অর্থনৈতিক পরিকল্পনা মোটাদাগে প্রবৃদ্ধি বাড়াবে। তবে বর্তমান সময়ে এসে ডলারের দর কমেছে সবমিলিয়ে ৪ শতাংশ।
ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্ক এবং তার প্রভাব নিয়ে অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের বিকল্প খুঁজতে বাধ্য করে। তার ক্রিপ্টো-বান্ধব নীতির কারণে চলতি বছরের অক্টোবরের প্রথম সোমবার বিটকয়েন দর ছোঁয় সর্বকালের সর্বোচ্চ মূল্য ১ লাখ ২৫ হাজার ৮৩৫ দশমিক ৯২ মার্কিন ডলারে।
ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও শুল্কের প্রভাবে একই মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়ায় রেকর্ড ৪ হাজার ৩৮১ ডলারে।
অবশ্য ডলারের চাহিদা এখনো টিকে থাকার কারণ—আর্থিক বাজারে যেকোনো অস্থিরতা কিংবা ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিলে এটিই এখন পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের প্রথম পছন্দ। ডলার নিয়ে ইন টাচ ক্যাপিটাল মার্কেটসের সিনিয়র এফএক্স বিশ্লেষক পিওতর ম্যাটিস বলেন, 'এটি যেন সবচেয়ে পরিষ্কার অথচ ময়লা বস্তু।'
শেয়ারবাজারের চিত্র
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে উদ্দীপনা এবং বৈশ্বিক সুদের হার কমার আশঙ্কায় বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারগুলো এ বছর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
২রা এপ্রিল ট্রাম্পের 'লিবারেশন ডে' শুল্ক ঘোষণাই ছিল বাজারের প্রথম বড় পরীক্ষা। তখন মরগ্যান স্ট্যানলি ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল (এমএসসিআই) বৈশ্বিক ইনডেক্সের পতন হয় ১০ শতাংশ।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং তহবিল ব্যবস্থাপকরা বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারের প্রবণতা পরিমাপ করতে এই ইনডেক্স ব্যবহার করেন। যেখানে প্রায় ২৩টি উন্নত দেশের ১ হাজার ৬০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু এরপর তা ঘুরে দাঁড়ায় শক্তভাবে। নির্বাচনের দিন থেকে এখন পর্যন্ত যা ২০ শতাংশ বেড়েছে। গত নভেম্বরের পর স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর'স ৫০০ (এসঅ্যান্ডপি) ইনডেক্সও বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
এই সময়ে শেয়ার বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে মূলত ইউরোপের প্রতিরক্ষা খাত সংশ্লিষ্ট স্টকগুলো। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপীয় দেশগুলোকে নিজেদের নিরাপত্তায় বেশি খরচ করতে বাধ্য করেছেন। প্রযুক্তি খাতের উত্থান ও ডলারের দুর্বল অবস্থানের কারণে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের শেয়ারবাজারও শক্তিশালী হয়েছে।
বাণিজ্য ভারসাম্য
ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ভারসাম্য, যা তিনি সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রকে 'ঠকানোর প্রমাণ' হিসেবে দেখান। ট্রাম্পের মতে, এই অবস্থা উত্তরণে শুল্কই একমাত্র সমাধান এবং এটিই 'অভিধানের সবচেয়ে সুন্দর শব্দ'।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতিগুলো ব্যবসার খরচ বাড়ানোর পাশাপাশি পরিকল্পনার পথ আরও কঠিন করে তুলেছে। কিন্তু এই নীতির ফলশ্রুতিতে বাণিজ্য ঘাটতি ধীরে ধীরে কমছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত জুনে এটি দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৬০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে এসে পৌঁছেছে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি গত পাঁচ মাসে ৭০ শতাংশ কমে ২১ বছরের সর্বনিম্নে এসে নেমেছে।
একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ বাণিজ্য ভারসাম্যও শুল্ক ঘোষণার আগে বেড়েছিল, কিন্তু পরে কমেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে 'বাণিজ্যযুদ্ধ সম্ভবত ইউরোপীয় ইউনিয়নকে চীনের তুলনায় বেশি ক্ষতি করছে। কেননা ইউরোপের তুলনায় চীনের বিকল্প ভাবনা অনেক শক্তিশালী', বলেন সুইসকোটের সিনিয়র বিশ্লেষক ইপেক ওজকারদেসকায়া।
খবরটি শেয়ার করুন