ছবি- সংগৃহীত
কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ দিন দিন কমছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে সবচেয়ে বেশি নারীরা কাজ করেন। সেই পোশাক খাতেও নারীর অংশগ্রহণ প্রতিনিয়ত কমছে।গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি)-এর তথ্য মতে, পোশাক খাতে নিযুক্ত মোট শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যা কমে ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অথচ এক সময় পোশাক খাতের মোট শ্রমিকের ৮০ শতাংশের বেশি ছিলেন নারী। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে আরো অনেক কমেছে।
গার্মেন্টেস শিল্পের বয়স অর্ধ শতাব্দী হয়ে গেলেও এখনো পরিপূর্ণভাবে নারীর কর্ম উপযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। এই শিল্প এখনো নানা রকম প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আছে। সবচেয়ে কম মজুরি, বেতন-ভাতাসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি না দেয়া, কেয়ার সেন্টার থাকার মতো পূর্ণাঙ্গ পরিবেশ তৈরি হয়নি। উপরন্তু অনেক সময় নারী শ্রমিকরা যৌন হয়রানির মতো পরিস্থিতির শিকার হন। ফলে অনেক পরিবার এখন আর নারীকে গার্মেন্টসের কাজে দিতে চায় না। এছাড়া অটোমেশন ও অন্যান্য খাতের তুলনায় মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় এই খাতে তরুণ প্রজন্মের নারীদের আগ্রহ কমে গেছে।
শিক্ষিত নারীদের কর্মক্ষেত্রের একটি নিরাপদ জায়গা হলো ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ব্যাংকে নারী কর্মীর হার তিন বছর ধরে ১৬ শতাংশে আটকে আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ব্যাংক খাতে নারী কর্মীর সংখ্যা বাড়লেও তা মোট জনবলের বিপরীতে এখনো বেশ কম। ব্যাংকগুলোর বোর্ড তথা পরিচালনা পর্ষদে নারীর সংখ্যা কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, ২০২৩ সালের শেষে ব্যাংক খাতে নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ৩৪৬। এর বিপরীতে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৫০। ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ খুব কম আছে। নারী কর্মকর্তারা ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে গেলে সাধারণত পদোন্নতি দেয়া হয় না। তখন তাদের হেড অফিসে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের কাজে নিযুক্ত করা হয়।এমন পরিস্থিতিতে তখন অনেক নারী চাকরি ছেড়েও দেন।
নারীরা কর্মক্ষেত্রে কম আসছে তার অনেকগুলো কারণ আছে। তারা অনেক সময় সংসার সন্তানকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেন। নারীকে এখনো সংসারের ৮০ শতাংশ কাজ করতে হয়। তার উপর বাচ্চা রেখে কাজ করাও একটা বড় প্রতিবন্ধকতা। সরকার ও বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান দিবাযত্ন কেন্দ্র করছে তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক মেয়েরা কাজে বিরতি দিয়ে সংসার গুছিয়ে আবার কাজে ফিরতে চান। আবার বাল্যবিবাহ হওয়া মেয়েদের শিক্ষা ও কাজে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য বেড়েই চলছে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ২০২৪ সালের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ’ প্রতিবেদন মতে, বার্ষিক সূচকে বাংলাদেশের বড় ধরনের পতন হয়েছে। ডব্লিউইএফ-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বার্ষিক এই সূচকে গত বছরের তুলনায় ৪০ ধাপ পিছিয়েছে দেশ। বিশ্বের ১৪৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শূন্য দশমিক ৬৮৯ স্কোর পেয়ে ৯৯তম অবস্থান আছে।
দেশে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি এবং তাদের গড় আয়ুও বেশি। অথচ দেখা যাচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ খুবই কম। দেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাত গার্মেন্টস সেক্টরে কমেছে নারীর অংশগ্রহণ। ব্যাংকিং খাতে তিন বছর থমকে আছে, একই অবস্থানে আছে নারী কর্মীর সংখ্যা। অথচ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ জরুরী। নারী শ্রমশক্তিকে কাজে লাগাতে শ্রমে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও টেকসই করতে চিহ্নিত প্রতিবন্ধকতাগুলো রাষ্ট্রকে দূর করতে হবে। নারীদের জন্য উপযুক্ত কর্মপরিবেশ তৈরি করতে হবে।
আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন