ছবি: সংগৃহীত
লেখক, গবেষক ও রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি দলটির সম্পর্কে, এর সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নানা সমালোচনা করে আলোচিত-সমালোচিত। বিশেষ করে, শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তার অনেক মন্তব্যকে 'বিষোদগার' বলে আখ্যায়িত করেন অনেকে। বদরুদ্দীন উমর এবার বলছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ (দলটির কার্যক্রম) করা ঠিক হয়নি।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কারণে জনগণ তাদের প্রতি সমবেদনা দেখানোর সুযোগ পাবে, তারা এ সুযোগে কাজ করারও সুযোগ পাবে বলে মনে করেন বদরুদ্দীন উমর। কেন তিনি এমন মনে করছেন, এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে জামায়াত নিষিদ্ধ হবে না কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরও তিনি দিয়েছেন। তার মতে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে দেশে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ দল ও এর সরকার ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিল। ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়ে যাওয়ার পরও তাদের সক্রিয়তা তো চলছে। এটার একটা বড় কারণ হচ্ছে, ভারত সরকার আওয়ামী লীগকে এখনো সাহায্য করছে। মুসলিম লীগ ১৯৫৪ সালে উৎখাত হওয়ার পর তাদের ভারতের মতো দেশ ছিল না।'
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ উৎখাত হওয়ার পরে ভারত সরকার এখনো তাদের প্রতি সাহায্যকারী হয়ে রয়েছে। তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। শেখ হাসিনা সেখান থেকে নানা রকম উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন এবং টেলিফোনের মাধ্যমে তার নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছেন। এভাবে তারা শেখ হাসিনাকে শুধু আশ্রয় নয়, প্রশ্রয়ও দিচ্ছে।'
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর বলেন, 'দেশে আওয়ামী লীগের সে রকম প্রকাশ্য সক্রিয়তা না থাকলেও তারা তো কোনোভাবেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগের লোকজন সুযোগ বুঝে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করার সুযোগের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু তারা এসব কাজ করার সুযোগ খুঁজলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা ঠিক হয়নি। দলটি ভারত সরকারের সহযোগিতায় যতই ফিরে আসার সুযোগ বা অন্তর্ঘাতমূলক অপতৎপরতা খুঁজুক, তাদের কিন্তু শিগগির জনগণের মধ্যে আবার কাজ করার বিশেষ ক্ষমতা নেই।'
তিনি বলেন, 'এই অবস্থায় আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দেওয়াই ভালো ছিল। তারা তাদের কাজ করে যেতে পারে, যতটা পারে। এই অবস্থায় তারা বেশি দূর অগ্রসর হওয়ার মতো অবস্থায় নেই। কিন্তু তাদেরকে নিষিদ্ধ করার কারণে জনগণ তাদের প্রতি সমবেদনা দেখানোর সুযোগ পাবে। তারা এই সুযোগে কাজ করারও সুযোগ পাবে। একটা পার্টিকে নিষিদ্ধ করলেই দুর্বল হয়ে যায় না। আওয়ামী লীগ জামায়াতকে তো নিষিদ্ধ করেছিল এবং বিভিন্ন সময় অন্য অনেক দলকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু জামায়াত ভেতরে ভেতরে অনেক কাজ করেছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলেও তাদের লোক তো সর্বত্র রয়েছেন।'
দৈনিক আজকের পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বদরুদ্দীন উমর এসব কথা বলেন। 'দক্ষিণপন্থীদের কবজায় বাংলাদেশের রাজনীতি: বদরুদ্দীন উমর' শিরোনামে তার সাক্ষাৎকার পত্রিকাটি প্রকাশ করেছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার এ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
সংস্কৃতি পত্রিকার সম্পাদক বদরুদ্দীন উমর বলেন, 'এ কারণে তাদের সক্রিয়তা কোনোভাবেই কমবে না; বরং নিষিদ্ধের কারণে তাদের কাজ করার আরও সুবিধা হবে। জনগণের সমর্থনও তারা পাবে হয়তো, যেটা নিষিদ্ধ না হলে পেত না। তাই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা কোনোভাবেই রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেওয়া হয়নি। এটার মধ্য দিয়ে বরং আওয়ামী লীগকে সাহায্য করাই হয়েছে।'
আজকের পত্রিকা প্রশ্ন ছিল- 'আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে জামায়াত নিষিদ্ধ হবে না কেন?' এর উত্তরে বদরুদ্দীন উমর বলেন, 'এখানে বলা যেতে পারে, অভ্যুত্থানের পর অনেকে মনে করেছিলেন, সারাদেশে বামপন্থী শক্তির উত্থান ঘটবে। তাদের কার্যক্রম আরও বাড়বে। সে রকম কিছুই হয়নি। এখানে অভ্যুত্থান-পরবর্তী পর্যায়ে বামপন্থী দলগুলোর বিশেষভাবে কাজ নেই।'
তিনি বলেন, 'কিন্তু বিশেষ করে দক্ষিণপন্থীরা এখানে সামনে এসেছে। দক্ষিণপন্থী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে অগ্রসর এবং সবচেয়ে দুষ্ট প্রকৃতির দল। এরাই বেশি এখন তৎপর। সে কারণে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে কোনো লাভ হবে না। এই পার্টি শক্তিশালী হওয়ার কারণে তাকে নিষিদ্ধ করলে দেশে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।'
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে কাগজে-কলমে না হলেও কার্যত নিষিদ্ধ ছিল দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম।
এইচ.এস/