অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও রাজস্ব আদায়ে এখনো লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করেও সেটি পূরণ করা যাচ্ছে না। রাজস্ব বাড়াতে শতাধিক পণ্যে ভ্যাট ও শুল্ক বসানো হয়। ভ্যাট আদায়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আয়কর রিটার্ন জমার বিষয়ে সময় বাড়ানো ও নতুন করদাতা বাড়াতে ব্যাপক প্রচারণার পরও রাজস্ব আদায়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি।
চলতি ২০২৪-’২৫ অর্থবছরের ৯ মাস (জুলাই-মার্চ) শেষে রাজস্ব ঘাটতি ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যেখানে অর্থবছরের আট মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার বেশি পিছিয়ে ছিল এনবিআর। অর্থাৎ, বিগত ৯ মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা।
মার্চ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৭৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস শেষে এনবিআরের রাজস্ব আহরণে ঘাটতির হার দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। মোট রাজস্ব আহরণের মতো আয়কর, শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
এনবিআর জানিয়েছে, ৯ মাসে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা কম। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ০৯ শতাংশ। একই সময় শুল্ক আদায় হয়েছে ৭৪ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা কম। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আয়কর আদায় হয়েছে ৮৬ হাজার ৯২০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা কম।
আইএমএফের পরামর্শ মেনে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্কের পরিমাণ বাড়াতে হবে; যা মূল্যস্ফীতি আরেক ধাপ বাড়িয়ে দেবে। এমনিতে মুদ্রাস্ফীতি চরম আকার ধারণ করেছে। আরো বাড়লে জনগণের জীবনযাত্রায় নাভিশ্বাস উঠবে।
আইএমএফ ঋণ দেওয়ার আগে রাজস্ব আদায় বাড়ানোসহ কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নে শর্ত দেয়। গত সরকার এসব শর্ত পূরণের অঙ্গীকার করে ঋণ নেয়। তারা ঋণের শর্ত পূরণের সময় পায়নি। বর্তমান সরকার সেই শর্ত এখনো বাস্তবায়ন করেনি। শর্ত পূরণ না হওয়ায় এখনো ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণের ছাড় পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যার ফলে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে চলেছে।
রাজস্ব ঘাটতি কমাতে হলে করের পরিধি, অর্থাৎ করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। দেশে মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ থেকে সাড়ে পাঁচ শতাংশ কর দেয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এটা ২৩ শতাংশের ওপরে। এক্ষেত্রে এনবিআরের নজরদারি অত্যন্ত দুর্বল। এনবিআরের নজরদারিতে জোর দিতে হবে। নতুন করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করতে হবে। মানুষকে কর দানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তখন রাজস্ব ঘাটতি দূর হবে।
আরেকটি বিষয়, পৃথিবীর সব দেশেই রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত হলো প্রত্যক্ষ কর। যে যত বড় ধনী, তাকে তত বেশি আয়কর দিতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে করের আওতা না বাড়িয়ে ভ্যাটকে রাজস্ব আয়ের প্রধান হাতিয়ার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও বৈষম্য আছে। বর্তমানে ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ লাখ ২৫ হাজার।
এর মধ্যে গড়ে সাড়ে তিন লাখ প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ভ্যাট দিয়ে থাকে। এর বাইরে যে লাখ লাখ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনতে এনবিআর কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
এইচ.এস/