ছবি : সংগৃহীত
ছোট-বড় সবাই আম খেতে পছন্দ করেন। আমাদের দেশে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ আর সুগন্ধের আম পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণেও ভরপুর আম। কিন্তু অনেকেই ওজন বাড়ার ভয়ে সুস্বাদু পুষ্টিকর এই ফল খেতে দ্বিধায় ভোগেন। তবে মনে রাখবেন, যে কোনো ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার শরীরের চাহিদার অতিরিক্ত খেলেই ওজন বাড়ে। কিন্তু আপনি যদি শরীরের চাহিদা অনুযায়ী আম খান তাহলে ওজন বাড়বে না বরং কমবে। তাই চলুন জানা যাক, যেভাবে আম খেলে ওজন বাড়বে না, বরং কমবে!
খোসা ও আঁটি ছাড়া ১০০ গ্রাম আমে ৬৫-৭০ ক্যালরি থাকে। শর্করা ১৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, লৌহ ১ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ‘এ’ থাকে ২২০০ মাইক্রোগ্রামের ওপর। আঁশ আছে ৪ গ্রাম। পটাশিয়াম ১০০ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১৬০ মিলিগ্রাম, লাইকোপেন প্রায় ১২ মিলিগ্রাম। আমের গ্লাইসিমিক ইনডেক্স ৬৫-৭৫-এর মধ্যে।
অপর দিকে ১০০ গ্রাম সেদ্ধ ভাতে ক্যালরির পরিমাণ প্রায় ১২৫ এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ প্রায় ২৫ গ্রাম। আবার সেদ্ধ ভাতের গ্লাইসিমিক ইনডেক্সও ৭০-এর কাছাকাছি। অর্থাৎ আমের চেয়ে ভাতে ক্যালরি বেশি। কিন্তু অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আমে বেশি থাকে। তাই আমাদের প্রধান খাবার ভাতের পরিবর্তে শর্করার উৎস হিসেবে নিশ্চিন্তে পরিমিত পরিমাণে আম খাওয়া যেতে পারে।
আরো পড়ুন : পুষ্টি মেটাতে খান স্বাস্থ্যকর খাবার
তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
আমরা মূলত ভুল নিয়মে আম খেতে অভ্যস্ত। আমরা সাধারণত প্রধান খাবারের পরে ডেজার্ট হিসেবে আম খাই। অথবা স্ন্যাক্সের সঙ্গে আম খেতে অভ্যস্ত। অনেকেই রুটি বা দুধভাতের সঙ্গে আম খাচ্ছেন, এ কারণে ক্যালরি বাড়তি হয়ে যাচ্ছে। রুটি ও ভাত দুটোই কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাসমৃদ্ধ খাবার। অপর দিকে আমও কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার।
বেশির ভাগ মানুষ রাতের প্রধান খাবারের পরে আম খেয়ে থাকেন, যা ওজন এবং রক্তের সুগার খুব দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। কারণ, রাতের খাবারের পরে আম খেয়ে আমরা ঘুমাতে চলে যাই। কোনো শারীরিক পরিশ্রম থাকে না। তাই ক্যালরি বার্ন হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। ক্যালরিযুক্ত খাবারের সঙ্গেই আম খাওয়া হচ্ছে। ফলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকছে।
খাবার তালিকায় সকালের নাশতায় ২টা রুটি, একটা ডিম ও এক বাটি সবজি থাকলে সকালের ওই নাশতার পরিবর্তে প্রায় ৩০০-৩৫০ গ্রাম আম (পাল্প) খেতে পারবেন, যা প্রায় দুইটা বড় বা তিনটা মাঝারি আকারের আমের সমান। এর সঙ্গে অন্য কিছু খাওয়া যাবে না। অনেকেই মনে করেন খালি পেটে আম খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। আম কোনো টকজাতীয় ফল নয়, তাই আম খেলে গ্যাস্ট্রিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
ওজন কমাতে হলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আম খেতে হবে। যেমন-
১. সকালের নাশতা অথবা দুপুরের খাবার, যে কোনো এক বেলার প্রধান খাবারের পরিবর্তে আম খাওয়া যাবে।
২. মধ্যসকাল বা বিকেলের স্ন্যাক্স হিসেবে অল্প পরিমাণে আম খাওয়া যেতে পারে।
৩. আম খেলে আমের সঙ্গে অন্য কোনো খাবার বা স্ন্যাক্স খাবেন না। যেমন আম দিয়ে রুটি, মুড়ি বা আম দিয়ে ভাত খাওয়া যাবে না।
৪. সন্ধ্যার পরে কখনো আম খাবেন না। বিকেলের আগেই আম খেয়ে নেবেন।
৫. আম জুস করে খাবেন না, খোসা ছাড়িয়ে আস্ত চিবিয়ে খাবেন।
৬. ক্যালরি হিসাব করে অন্যান্য খাবারের পরিবর্তে সমপরিমাণ ক্যালরির আম খাবেন।
৭. আম খাওয়ার পরে কিছুটা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।
৮. প্রয়োজনে নিজের শরীরের ওজন, উচ্চতা এবং অন্যান্য অবস্থা বিবেচনা করে আপনি কতটুকু আম খাবেন, সে ব্যাপারে একজন বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেবেন।
এস/ আই.কে.জে/