ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিম আফ্রিকার তেলসমৃদ্ধ নাইজেরিয়ায় শিশু অপহরণের সংবাদ প্রায়ই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। এমনই একটি সংবাদ হচ্ছে— দেশটির নাইজার প্রদেশে এক ক্যাথলিক বিদ্যালয় থেকে সশস্ত্র ব্যক্তিদের হাতে অপহৃত ৩১৫ শিশুর মধ্যে মাত্র ৫০ জন পালাতে পেরেছে।
আজ সোমবার (২৪শে নভেম্বর) দ্য ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়ার বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২১শে নভেম্বর পালিয়ে আসা শিশুরা তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। একইদিনে অন্য এক প্রদেশের এক আবাসিক বিদ্যালয় থেকে ২০ শিক্ষার্থীকে অপহরণের সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেনাদের সহায়তায় বাকি ২৬৫ শিশু ও ১২ শিক্ষকের খোঁজ ও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। নাইজার প্রদেশে এমন ঘটনার পর দেশটির অন্যান্য প্রদেশেও স্কুল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এমন পরিস্থিতিতে নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি বোলা তিনুবু আরও ৩০ হাজার পুলিশ নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু, এসব ঘটনার আগেই এই দেশটির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটির খ্রিষ্টানদের রক্ষায় তিনি সেখানে সামরিক অভিযানের কথাও ভাবছেন।
গত ২০শে নভেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নাইজেরিয়ার খ্রিষ্টানদের রক্ষা করতে দেশটি ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পাশাপাশি সামরিক হস্তক্ষেপের কথাও ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটি আরও জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নাইজেরিয়াকে নজরদারিতে রেখেছেন। চলতি মাসের শুরুতে তিনি সেখানে সামরিক অভিযানের হুমকি দেন।
ট্রাম্পের ভাষ্য, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের গণহারে হত্যা করা হচ্ছে। তাই সেখানকার খ্রিষ্টানদের রক্ষায় নাইজেরিয়া সরকারকে বাধ্য করার পাশাপাশি সেখানকার ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তিনি উদ্যোগ নিচ্ছেন। স্বভাবতই নাইজেরিয়ার দাবি ভিন্ন।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ ও স্ট্যাটিস্টার তথ্যমতে, আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়া। এর জনসংখ্যা ২৩ কোটির বেশি। পিউ গবেষণা কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের ২০২০ সালের হিসাবে দেখা গেছে নাইজেরিয়ায় মুসলমানের সংখ্যা ৫৬ দশমিক ১ শতাংশ ও খ্রিষ্টানের সংখ্যা ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ। বাকিরা ঐতিহ্যবাহী ধর্ম পালন করেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, নাইজেরিয়ার ২০০ জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ইসলাম, খ্রিষ্টধর্ম ও ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাস মেনে চলেন। তারা বহু যুগ ধরে একসঙ্গে বসবাস করে আসছেন। আবার সেই জনগোষ্ঠীর সদস্যেরা একে অপরের সঙ্গে সংঘাতেও লিপ্ত হয়। দেশটিতে জাতিগত সংঘাত সাধারণ ঘটনাও বটে।
নাইজেরিয়ার সশস্ত্র সংগঠন বোকো হারাম দেশটির উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহ করে যাচ্ছে। গত ১৫ বছরে এই সংগঠনের হাতে অন্তত ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে— বোকো হারামের হাতে খ্রিষ্টানদের তুলনায় মুসলমানেরা নিহত হয়েছেন বেশি।
গত ২০শে নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যুরো অব আফ্রিকান অ্যাফেয়ার্স বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জোনাথন প্র্যাট ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্যদের বলেন, 'নাইজেরিয়ার খ্রিষ্টানদের রক্ষা ও সেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে দেশটির সরকারকে বাধ্য করার পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন।'
খবরটি শেয়ার করুন