ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান পররাষ্ট্রনীতিকে ঘিরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শীর্ষ ইতিহাসবিদ সতর্ক করেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি ভবিষ্যতে ভয়াবহ বৈশ্বিক সংঘাতের বীজ বপন করছে। তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গ্রেগ গ্র্যান্ডিন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রাসী ও একতরফা পররাষ্ট্রনীতি বিশ্বব্যবস্থাকে বিপজ্জনক প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার মতে, এই নীতি শুধু আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে দুর্বল করছে না, বরং বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনাও বাড়াচ্ছে।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউস প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে গ্র্যান্ডিন বলেন, এতে স্পষ্টভাবে একটি সামরিক ও আধিপত্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আর এমন বৈশ্বিক দায়ভার বহন করবে না, যা সরাসরি তাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত নয়।
একই সঙ্গে এই প্রতিবেদনে ‘মনরো ডকট্রিন’ আবারও জোরালোভাবে কার্যকর করার অঙ্গীকার করা হয়েছে, যার লক্ষ্য পশ্চিম গোলার্ধে মার্কিন আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে অধ্যাপক গ্র্যান্ডিন লিখেছেন—উনিশ শতকে ইউরোপীয় শক্তিগুলোকে লাতিন আমেরিকা থেকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যে ঘোষিত ‘মনরো ডকট্রিন’ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার হাতিয়ারে পরিণত হয়। লাতিন আমেরিকার বহু দেশ একে সরাসরি মার্কিন হস্তক্ষেপ হিসেবেই দেখেছে।
গ্র্যান্ডিনের মতে, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা যখন বিভিন্ন প্রভাব বলয়ে বিভক্ত হচ্ছে, তখন প্রতিটি আঞ্চলিক শক্তি নিজেদের প্রভাবক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে। উদাহরণস্বরূপ—সাবেক সোভিয়েত আমলের অঞ্চলসমূহকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে, চীন চাইছে দক্ষিণ চীন সাগরসহ আশপাশে, আর যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায়। গ্র্যান্ডিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট মানে আগে নিজের গোলার্ধ।’
তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও হন্ডুরাসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া তারা কলম্বিয়া ও মেক্সিকোকে হুমকি দিচ্ছে, কিউবা ও নিকারাগুয়াকে চাপের মধ্যে রাখছে, পানামা খালে প্রভাব বাড়াচ্ছে এবং ভেনেজুয়েলার উপকূলে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছে।
অধ্যাপক গ্র্যান্ডিন স্মরণ করিয়ে দেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র লিগ অব নেশনসে যোগ না দিয়ে লাতিন আমেরিকায় অবাধ হস্তক্ষেপের স্বাধীনতা ধরে রাখতে চেয়েছিল। এই ধারণা এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে—জাপান, ব্রিটেন এমনকি নাৎসি জার্মানিও নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তারে একই ধরনের পথ বেছে নিয়েছিল।
গ্র্যান্ডিন সতর্ক করে বলেন—আজকের দিনে ট্রাম্প প্রশাসন অতীতের সেই একই বীজ বপন করছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে বহুমুখী শক্তির দ্বন্দ্ব, ইউরোপে বিভাজন এবং লাতিন আমেরিকায় হুমকির রাজনীতি শেষ পর্যন্ত আরও সংঘাত, আরও উত্তেজনা এবং সম্ভবত নতুন এক বিশ্বযুদ্ধের দিকে বিশ্বকে ঠেলে দিতে পারে।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন