ছবি: সংগৃহীত
রবি হক
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্য নিরাপত্তার হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলো খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে পারলেও বাংলাদেশ এখনো পারছে না। বিশ্বব্যাংকের খাদ্য মূল্যস্ফীতির তালিকায় বাংলাদেশ ‘লাল’ শ্রেণিতে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশেই বেশি।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, ভারতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন ৫ শতাংশের একটু উপরে। পাকিস্তানেও খাদ্যপণ্যের দাম কমছে। শ্রীলঙ্কায়ও একই চিত্র। নেপাল ও মালদ্বীপে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কম। আফগানিস্তানেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন মাইনাসের দিকে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, মার্চ মাস শেষে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক সর্বশেষ ১০ থেকে ১২ মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্যনিরাপত্তা-বিষয়ক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে থাকে। এর আগের টানা এক বছর বাংলাদেশ লাল শ্রেণির তালিকায় ছিল। প্রতি ছয় মাস পরপর এ চিত্র প্রকাশ করে থাকে সংস্থাটি। সেই অনুসারে, প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাদেশ লাল তালিকায়, অর্থাৎ অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি।
বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও ১৪টি দেশ এক বছর ধরে লাল শ্রেণিতে আছে। এ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার ভারতও আছে। যদিও তাদের মূল্যস্ফীতি লাল তালিকার নিচের দিকে আছে। অন্য দেশের মধ্যে রয়েছে কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গিনি, মাদাগাস্কার, ঘানা, লাওস, লেসেথো, তিউনিসিয়া, জাম্বিয়া, বেলারুশ ও রাশিয়া।
খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোন দেশে কত বেশি, তা বোঝাতে বিভিন্ন দেশকে চার শ্রেণিতে ভাগ করেছে বিশ্বব্যাংক। যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ বা তার বেশি, সেসব দেশকে ‘বেগুনি’ শ্রেণিতে; ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি, তাদের ‘লাল’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘হলুদ’ ও ২ শতাংশের কম মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘সবুজ’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৭২টি দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে।
খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে সবচেয়ে ভালো আছে আটটি দেশ। সবুজ শ্রেণিভুক্ত দেশগুলো হলো সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সৌদি আরব, ম্যাকাও, চীন, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড ও বেনিন।অন্যদিকে উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বিশ্বব্যাংকের তালিকায় টানা এক বছর ধরে সবচেয়ে খারাপ শ্রেণি বেগুনিতে আছে ছয়টি দেশ। দেশগুলো হলো- মালাবি, দক্ষিণ সুদান, হাইতি, মিয়ানমার, আর্জেন্টিনা ও তুরস্ক।
২০২২ সালে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। তখন অনেক দেশ নিজেদের অর্থনীতি নিয়ে বিপদে পড়তে শুরু করে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা,পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতের মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। বেশি বিপাকে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। তারা এখন মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে পেরেছে।
ভারতও চাপ সামলে নিয়ে, একটি স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনো মতেই মুদ্রাস্ফীতি সামাল দিতে পারছে না। বিবিএসের তথ্যমতে, গত এক বছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অর্থাৎ, গত এক বছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ হওয়ার মানে হলো, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে যদি আপনার খাবার কিনতে ১০০ টাকা খরচ হতো; সেটা এক বছর পর অর্থাৎ ২০২৫ সালের এপ্রিলে কিনতে লাগছে ১১০ টাকা ৪৪ পয়সা। প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ১০ টাকা ৪৪ পয়সা।
বিশ্বব্যাংক মনে করে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সেটা করেনি, বরং উচ্চ মূল্যস্ফীতি, তথা খাদ্য মূল্যস্ফীতির বিষয়টি স্বীকার করতেই চায়নি।
এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকি নেই।চাঁদাবাজির উৎপাত বন্ধ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে নেই। সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির নিয়ন্ত্রণে নেই।
এইচ.এস./
খবরটি শেয়ার করুন