ছবি: সংগৃহীত
বছরের শেষ প্রান্তে এসে সবচেয়ে বড় ওপেন এয়ার কনসার্টটি হয়ে গেল মহান বিজয় দিবসে। যার শুরুটা হয়েছিলো দিনের আলোয় এই প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী প্রীতম হাসানের পরিবেশনা দিয়ে। আর শেষটা হলো মধ্যরাতে, দেশের সর্বোচ্চ রকস্টার জেমসের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।
বিএনপির উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় সোমবার (১৬ই ডিসেম্বর) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এ কনসার্টের আয়োজন করে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন।
কনসার্টের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচারী কার্যক্রম নিয়ে লেখা প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেন ইথুন বাবু ও মৌসুমী চৌধুরী। মূল কনসার্ট শুরু হয় বেলা সোয়া দুইটায় প্রীতম হাসানের পরিবেশনা দিয়ে। তিনি পরিবেশন করেন ‘খোকা’, ‘হাতে লাগে ব্যথারে’, ‘উরাধুরা’।
এর আগে কনসার্টের শুরুতে গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’–এর আহ্বায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের কারণে ১৫-১৬ বছর বিজয় দিবসটি স্বাধীনভাবে উদযাপন করা যায়নি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর তাই এবারের বিজয় দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের গান ও শিল্পী এবং আমাদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে সবার আগে রাখতেই এই কনসার্টের আয়োজন করেছি আমরা।’
এরপর মঞ্চে ওঠেন আলম আরা মিনু। তিনি পরিবেশন করেন ‘যে মাটির বুকে’, ‘সোনা দানা দামি গহনা’ প্রভৃতি। এরপর মনির খান পরিবেশন করেন ‘চিঠি লিখেছে বউ আমার’ ও ‘এই বুকে বইছে যমুনা’। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মঞ্চে উঠে কনকচাঁপা পরিবেশন করেন ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’ ও ‘সাগরিকা বেঁচে আছে তোমারই ভালোবাসায়’ গান দুটি। এরপর বিকাল পৌনে চারটার দিকে বাউলশিল্পী আলেয়া বেগম এবং তার ছেলে শোভন ও চিশতী বাউল মঞ্চে ওঠেন। তারা পরিবেশন করেন ‘মিলন হবে কত দিনে’, ‘ফুল ফুটেছে গন্ধে সারা মন’, ‘বেহায়া মনটা লইয়া’, ‘যদি থাকে নসিবে’র মতো জনপ্রিয় গানগুলো।
আরও পড়ুন: ‘১২-১৩ বছর বয়সে বিয়ে করার জন্য অনেকে পাগল হয়ে যায়’
বিকাল সাড়ে চারটার দিকে মঞ্চে ওঠেন ইমরান মাহমুদুল ও দিলশাদ নাহার কণা। ইমরান পরিবেশন করেন ‘বলতে চেয়ে মনে হয়’ ও ‘দিয়েছি তোকে দিল দিল দিল’। আর কণা পরিবেশন করেন ‘ও হে শ্যাম’ ও ‘দুষ্টু কোকিল’। বিকাল সোয়া পাঁচটা নাগাদ পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ যেন লোকে লোকারণ্য। এসময় মঞ্চে ওঠেন আসিফ আকবর। তাকে পেয়ে দর্শকরা যেন উন্মাতাল। তিনি শুরু করেন ‘স্বাধীন দেশে উড়বেই স্বাধীন পতাকা’ দিয়ে। এরপর পরিবেশন করেন তার বিখ্যাত গান ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘বেশ বেশ বেশ’ প্রভৃতি। এরপর মঞ্চে আসেন এই দিনের অন্যতম চমক বেবী নাজনীন। যিনি দীর্ঘ দিন দেশের মঞ্চে গাইতে পারেননি রাজনৈতিক বিবেচনায়। তিনি মঞ্চে উঠে কণ্ঠে তোলেন ‘আমাদের বাংলাদেশ’ শিরোনামে নতুন একটি গান। এরপর ‘সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি’ ও ‘বন্ধু তুমি কই কই রে’।
রাফসান শাবাব ও শান্তা জাহানের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় সন্ধ্যার পর শুরু হয় কনসার্টে ব্যান্ড পারফরমেন্স অংশ। প্রথমে মঞ্চে ওঠে ডিফারেন্ট টাচ। তারা পরিবেশন করে ‘শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে’। এরপর জেফার। তার পর শিরোনামহীন, সোনার বাংলা সার্কাস ও আর্ক, সোলস, আর্টসেল ও অ্যাভয়েড রাফা। কনসার্টের শেষ চমক হিসেবে রাত ১০টার দিকে মঞ্চে ওঠেন নগর বাউল জেমস। পরিবেশন করতে থাকেন ‘বাংলাদেশ’সহ তার জনপ্রিয় গানগুলো। যে গানে পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পরিণত হয় সংগীত সমুদ্রে। রাত ১১টার দিকে শেষ হয় বিজয়ের এই অনন্য কনসার্ট।
সবার আগে বাংলাদেশ সংগঠনের পক্ষে জানানো হয়, কনসার্ট আয়োজন থেকে বেঁচে যাওয়া টাকা অসুস্থ শিল্পীদের চিকিৎসার কাজে ব্যয় করা হবে।
এসি/ আই.কে.জে/