রবিবার, ১৯শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** আলোচনা-সমালোচনায় কবি-সাংবাদিক আলতাফ, সহকর্মীরা প্রতিবাদমুখর, সরব নারীনেত্রীরা *** জামায়াত সম্পর্কে কী এনসিপির নতুন উপলব্ধি *** খালেদা জিয়ার সংসদ নির্বাচনের প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়ে যা জানাল বিএনপি *** একের পর এক অগ্নিকাণ্ড নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জরুরি বৈঠক *** জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নতুন কর্মসূচি *** আন্দোলনের জবাবে ট্রাম্প বললেন, ‘আমি রাজা নই’ *** পুঁজিবাজার চাঙা করতে আইসিবিকে ১০০০ কোটি টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা *** অগ্নিনির্বাপণে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে, দাবি উপদেষ্টার *** নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন যেতে পারবেন পর্যটকেরা *** দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ

পূর্ববঙ্গ গীতিকা : বাঙলা নাটকের ক্রমবিকাশে এক স্বতন্ত্র নাট্যধারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৩৪ অপরাহ্ন, ১৯শে অক্টোবর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

রবিউল হক

মধ্যযুগের বাঙলা নাটকের ক্রমবিকাশের ইতিহাসে ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকা’ এক স্বতন্ত্র ঐতিহ্যবাহী নাট্যধারা হিসেবে বিবেচ্য। মূলত ষোড়শ শতকের দিকে একটি সুনির্দিষ্ট আঙ্গিক হিসেবে গীতিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে।

উদ্ভব ও বিকাশ: পূর্ববঙ্গ গীতিকা মূলত মুখে মুখে রচিত। কোনও কোনও গীতিকা, কিংবদন্তি বা সত্য নির্ভর ঘটনা গল্প-কিসসার আকারে লোকসমাজে প্রচলিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। গবেষকগণ ধারণা করেন, পূর্ববঙ্গ গীতিকার উদ্ভব পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি। পরবর্তীকালে এ সকল বাস্তব বা কাল্পনিক ঘটনা গীত ও নৃত্যসহযোগে অভিনয় কলার মাধ্যমে নাট্যমূলক পরিবেশনায় পূর্ণতা পেয়েছে।

পরিবেশনার সময় ও স্থান: বছরের যেকোনও সময় গীতিকার পরিবেশনা হয়ে থাকে। গীতিকা পরিবেশনের স্থান হিসেবে বাড়ির ভেতরের বা বাইরের আঙ্গিনা, বাজার, খেলার মাঠ, বিশালাকৃতির বটতলা এমনকি নদীর তীর ব্যবহৃত হতো। গীতিকা সাধারণত সারারাত অবধি পরিবেশিত হয়ে থাকে।

পোশাকের ব্যবহার: পূর্ববঙ্গ গীতিকা যে নাট্যমূলক তা বোঝা যায় গায়েনের রূপসজ্জা রীতি থেকে। সচরাচর গায়েনের নিম্নাংশে পুরুষের পোশাক লুঙ্গি ও ফতুয়ার উপর শাড়ি বা উড়ুনি জড়ানো থাকে। যেমন- মহুয়ার চরিত্রে অভিনেতা তার ঊর্ধ্বাংশের শাড়িকে ঘোমটার মতো করে পরিধান করা আবার নদ্যা চাদের পালায় শাড়ি বা উড়ুনিকে পেচিয়ে গীতিকা পরিবেশনের রীতি দেখা যায়। এছাড়া অলংকার হিসেবে বিশেষ মালার ব্যবহার করা হয়।

অভিনয়  উপকরণ : গীতিকা পরিবেশনের জন্য দুটো বালিশ বা তাকিয়ার ব্যবহার রয়েছে। অনেক পরিবেশনায় কোলবালিশকে ঘোড়া বানিয়ে পরিবেশনা উপস্থাপন করতে দেখা যায়। গামছা বা লম্বা লাল-সবুজের কাপড় পেচিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখতেও দেখা যায়।

বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার: গীতিকা পরিবেশনে হারমোনিয়াম, তবলা, জুরি, করতাল, মন্দিরা, নূপুর বা ঘুঙ্গুর এবং বাশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সুর ও ছন্দ: স্বরাঘাত-প্রধান গ্রাম্যছন্দে গীতিকার বেশ প্রচলন রয়েছে। পালাকারদের মধ্যে লোকছন্দের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার রীতি নেই বলা চলে। এছাড়া গীতিকার সুর দীর্ঘলয়ের, উজান, ভাটিয়ালী, মুর্শিদি প্রভৃতি গ্রাম্য সুরের ব্যবহার বিদ্যমান।

পরিবেশনা রীতি: গীতিকা পরিবেশনের রীতি মুসলমানদের মধ্যে বেশি প্রচলিত আর গ্রামের চাষা-মজুর লাঙ্গলের উপর ভর দিয়ে তা উপভোগ করতেন। তবে, গীতিকার পালায় চরিত্র অনুযায়ী সংলাপাত্মক গীতসমূহ কখনো বা মূল গায়েন ও দোহারদের মধ্যে ভাগ করে নিতে দেখা যায়।

বর্তমান অবস্থা: গীতকার পরিবেশনা আগের ন্যায় এখন আর খুব বেশি দেখা যায় না। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ঐতিহ্যবাহী এই পরিবেশনা তার জনপ্রিয়তা হারানোর পথে।

তথ্যসূত্র
১. সেলিম আল দীন, মধ্যযুগের বাঙলা নাট্য, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০১৮
২. তপন বাগচী, লোকসংস্কৃতির কতিপয় পাঠ, গতিধারা, ঢাকা, ২০০৮

রবিউল হক, লোক গবেষক ও শিল্পী

আই.কে.জে/

পূর্ববঙ্গ গীতিকা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250