শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২৭ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া শাহীদা ফিরে এলেন বাড়িতে

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৬:২৩ অপরাহ্ন, ১৫ই এপ্রিল ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

মা-বাবার সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে ২৭ বছর আগে হারিয়ে যান ৮ বছর বয়সী শাহিদা আক্তার। আদরের ছোট মেয়েকে হন্যে হয়ে খুঁজেও সন্ধান পাননি তার মা-বাবা। গ্রামের বাড়ির ঠিকানা বলতে না পারায় ফিরতে পারেনি আপন ঠিকানায়। সেই হারানো শাহিদা দীর্ঘ ২৭ বছর পর মা-বাবার বাড়ি খুঁজে পেলেও পেলেন না জন্মদাতা মা-বাবাকে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, তার মা-বাবাই আর বেঁচে নেই। চার বছর আগে দুজনে মারা গেছেন। 

তবে, বাড়িতে ফিরে ভাই-বোনেদের সঙ্গে শাহিদার দেখা হয়েছে। দীর্ঘ ২৭ বছর পর তাদের পুনর্মিলনের মুহূর্তে সবাই হয়ে পড়েন আবেগআপ্লুত। সবার চোখ থেকে জড়তে থাকে আনন্দাশ্রু। 

জানা গেছে, জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার দিকপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম খলিল ও ছাবেদা বেগম দম্পতির মেয়ে শাহিদা। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে শাহিদা তৃতীয়। 

গ্রামবাসী গণমাধ্যমকে জানান, ইব্রাহিম খলিল ও ছাবেদা বেগম দম্পতির ছিল অভাবের সংসার। ১৯৯৭ সালে সপরিবারে ঢাকার উত্তরায় চলে যান তারা। ঢাকায় গিয়ে শাহিদার বাবা রিকশা চালানো শুরু করেন। মেয়ে শাহিদা লাকড়ি কুড়ানোর কাজ করে। ঢাকায় যাওয়ার কদিন পর শাহিদা হারিয়ে যায়। তার মা-বাবা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মেয়ের সন্ধান পাননি। এরপর থেকে শাহিদা নিখোঁজ ছিল। এরপর শাহিদা কিভাবে চট্টগ্রামে চলে যায় নিজেও কিছু বলতে পারে না। সেখানে এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তারাই তাকে গাজীপুরে সেলিম মিয়া নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেন। তারপর থেকে শাহিদা স্বামীকে নিয়ে সেখানেই বসবাস করেন। শাহীদার ৭ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।

শাহীদা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি জীবনেও ভাবিনি নিজের গ্রামে ফিরতে পারব। আমার ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করতে পারব। প্রায় সময় মা-বাবা ও পরিবারের কথা মনে পড়ত। কিন্তু ছোট বেলার কথা এমনকি গ্রামের নামও মনে করতে পারতাম না। সম্প্রতি আমার মেয়ে নানা-নানির কথা জানতে চাইলে হঠাৎ বকশীগঞ্জের দিকপাড়া নামটি মনে পড়ে যায়। তখন থেকে বকশীগঞ্জের দিকপাড়া খুঁজতে থাকি। মা-বাবাকে দেখার জন্যই খুঁজতে খুঁজতে নিজ গ্রামে চলে আসি। নিজের পরিবার ও বাড়ি ঠিকই খুঁজে পেলাম। কিন্তু মা-বাবাকে না পেয়ে মনে আশা পূরণ হলো না। বাড়িতে এসে শুনি ৪ বছর আগে মা-বাবা মারা গেছেন। 

তবে বোন, ভাইসহ পরিবারের অন্য সবাইকে পেয়ে সত্যিই অনেক ভালো লাগছে। গত রোববার সন্ধ্যায় তিনি ফিরে এসেছেন তার নিজ বাড়িতে। এ সময় তার বড় বোন খালেদা বেগম যখন চিনতে পারেন শাহিদাকে, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে তারা ডুকরে কাঁদতে শুরু করেন। বর্তমানে শাহিদা জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ভৌলাকীপাড়া গ্রামে তার বড় বোন খালেদার বাড়িতে অবস্থান করছেন।

২৭ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ছোট বোনকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বড় বোন খালেদা বেগম।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, মা-বাবার সঙ্গে তারা সবাই ঢাকায় চলে গিয়েছিলেন। ঢাকায় যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে তার ছোট বোন শাহিদা হারিয়ে যায়। তারপর তার আর কোনো সন্ধান পাননি তারা। তার কোনো দিন সন্ধান পাবেন তা চিন্তাও করেননি। দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছর পর বোনকে ফিরে পেয়ে তারা সবাই এখন আনন্দিত। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে শাহীদাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন গ্রামবাসী। শাহিদা নিজের ভাই-বোনকে খুঁজে পেয়েছেন, এতে খুশি তার স্বামী সেলিম মিয়া। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

বড় বোন খালেদা বেগম আরও বলেন, ছোট বোনের অনেক স্মৃতি তার মনে আছে। তবে তার বাবা বলতেন, ‘শাহিদা বেঁচে আছে, কোনো একদিন ফিরে আসবে। একদিন না একদিন ঠিকই মেয়েকে পাব।’ অবশেষে বাবার কথাই সত্য হলো। কিন্তু বাবা আর বেঁচে নেই। আজ মা-বাবা বেঁচে থাকলে কতই-না খুশি হতেন।’

ওআ/

সারাদেশ

খবরটি শেয়ার করুন