রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৮ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাফল্য পেয়ে কফি চাষে ঝুঁকছে শেরপুরের তরুণরা

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:২৯ পূর্বাহ্ন, ১৫ই অক্টোবর ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

শেরপুর সীমান্তের নালিতাবাড়ী পাহাড়ি এলাকার মাটির আর্দ্রতা ও উর্বরতা কফি চাষের উপযোগী। এ অঞ্চলে ধারাবাহিক বৃষ্টিপাত ও মাটির গঠন বিন্যাস মিলে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের মাঝে কফি চাষে আগ্রহ বেড়েছে।

সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সহজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণে সহজ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কফি চাষকে আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা। 

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা সাজ্জাদ হোসেন তুলিপ। চার বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে কফি চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছেন। এখন তার কাছ থেকে বিনামূল্যে চারা নিয়ে কফি চাষে ঝুঁকছেন শতাধিক কৃষক। বান্দরবানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সময় পার্বত্য অঞ্চলে কফি চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। ২০২১ সালে চাকরি ছেড়ে নিজগ্রামে শুরু করেন কফি চাষ। পাঁচ কেজি কফির চারা থেকে গত তিন বছরে নিজের সমৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে কফির চারা সরবরাহ করেছেন। তার উৎপাদিত কফি যাচ্ছে ময়মনসিংহ, ঢাকা ও কক্সবাজারের বেশ কয়েকটি কফিশপে।

সাজ্জাদ হোসেন তুলিপ বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে কফির উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হলে কফির আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্ভব। শেরপুরের পাহাড়ি এলাকায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি একরে উৎপাদিত কফি ৩-৫ লাখ টাকা বিক্রি সম্ভব।’

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য ‘অ্যারাবিকা’ ও ‘রোবাস্টা’ জাতের কফি চাষ শুরু হয়েছে। রোবাস্টা জাতের কফি বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় চাষের উপযোগী। মার্চ-এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রতিটি পরিপক্ব গাছে ফুল ধরা শুরু হয়। মে-জুন মাসের মধ্যে ফুল থেকে গুটি গুটি ফলে পরিণত হয়। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ফল পরিপক্বতা লাভ করে। পরে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। বাজারজাত ও কফি পান করার জন্য উপযোগী করতে মেশিনের মাধ্যমে কফিবীজ গুঁড়া করে নিতে হয়। কফির বীজ থেকে চারাও উৎপাদন করা যায়।

আরও পড়ুন: টবেই লেটুস পাতার সহজ চাষ

কফি গাছ লাগানোর ৩ বছর পর ফল দেয়। যদিও বেশি পরিমাণ ফল পেতে ৬-৭ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গাছপ্রতি ৫-৭ কেজি কফি পাওয়া সম্ভব। প্রতি কেজির দাম ৮০-১০০ টাকা। প্রতি একরে ৬০০-৭০০ গাছ লাগানো যায়। সে হিসেবে বছরে ৬০০ কফি গাছ থেকে কমপক্ষে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কেজি ফলন পাওয়া যায়। এর ন্যূনতম মূল্য ২ লাখ ৪০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা। 

অপেক্ষাকৃত কম খরচে, যে কোনো ছায়াযুক্ত স্থানে, বাগানে বা পুকুরপাড়ে সাথী ফসল হিসেবে কফি চাষ করে সফলতার হাতছানি পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। তাই কফি চাষে কৃষকদের আগ্রহও বাড়ছে। এরই মধ্যে শতাধিক কৃষক শুরু করেছেন কফি চাষ। তাদের উৎপাদিত তাজা কফি প্রক্রিয়াজাত করছে ‘তুলিপ কফি ফার্মিং অ্যান্ড রোস্টারি’ নামের প্রতিষ্ঠান।

শিক্ষার্থী সাদিকুর রহমান খোকা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি কম খরচে আয়ের পথ খুঁজছিলাম। কোথাও পাচ্ছিলাম না। পরে তুলিপ ভাইয়ের পরামর্শে কফি চাষের সঙ্গে যুক্ত হই। তিনি আমাদের ১০০ জন কৃষককে নানাভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আমাদের কফি চাষের নির্দেশিকা ও সহায়ক বই সরবরাহ করেছেন। তার পরামর্শেই চাষ শুরু করেছি। অনেকেরই কফি উৎপাদন শুরু হয়েছে। আবার অনেকের শুরুর পথে। তুলিপ ভাই নিজেই সবার কাছ থেকে তাজা কফি কিনে নিয়ে প্রস্তুত করে বাজারজাত করেন।’

এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, কফির উৎপাদন বাড়াতে আগ্রহী কৃষকদের প্রশিক্ষণ আর প্রণোদনার মাধ্যমে সহযোগিতা অব্যাহত আছে। নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘নালিতাবাড়ীর আবহাওয়া ও ভূপ্রকৃতি কফি চাষের উপযোগী। স্থানীয় উদ্যোক্তা তুলিপ নিজে কফি চাষ করছেন বাণিজ্যিকভাবে। একই সাথে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে চারা বিতরণ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এরই মধ্যে শতাধিক আগ্রহী কৃষককে প্রশিক্ষণ ও সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি কফির চারা বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকদের প্রয়োজনে এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

এসি/ আই.কে.জে/

কফি চাষ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন