ছবি: সংগৃহীত
১৫ই মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস। ১৯৯৩ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ তারিখকে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৪ সালকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক পরিবারবর্ষ ঘোষণা করে। তবে ১৯৯৬ সাল থেকে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।
মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদা-দাদিকে নিয়ে একসঙ্গে বসবাসকে আদর্শ পরিবার বলা হয়। সুদীর্ঘ কাল থেকে বাংলায় যে যৌথ পরিবারের চিত্র দেখা যেতো, তা এখন অনেকটাই ম্লান। নগর জীবনে অনেক আগেই যৌথ পরিবারের চিত্র বিলীন হয়েছে। বংশ মর্যাদা, এমনকি ঐতিহ্যবাহী পরিবারেও একত্রে বাস করার ইতিহাস বিলীন হয়ে গেছে।
আমাদের সমাজব্যবস্থায় প্রচলিত পারিবারিক প্রথা যত দিন যাচ্ছে, ততই হারিয়ে যাচ্ছে। ক্রমেই যেন পরিবার ‘স্বামী-স্ত্রী-সন্তানে’ সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক মা-বাবাকে গ্রামের বাড়িতে নিঃসঙ্গ-অসহায় জীবন কাটাতে হয়। আবার অনেক মা-বাবার ঠিকানা হয় ‘বৃদ্ধাশ্রম’। শহুরে জীবন ব্যবস্থায় বিষয়টি আরেক নির্মম বাস্তবতা।
আজকের শিশু আগামী দিনের সুনাগরিক। শিশুকে উপযোগী করে গড়ে তোলে পরিবার। তাই মানবজীবনে প্রত্যেক মানুষের জন্য পারিবারিক শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নানা চারিত্রিক গুণ অর্জন করতে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। দেশপ্রেম, ভদ্রতা, নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা, কৃতজ্ঞতাবোধ শেখা, বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান দেখানো, কনিষ্ঠদের স্নেহ-আদর করা, অন্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করা, পরোপকারিতার মানসিকতা গড়ে তোলা এবং উদার মানসিকতাবোধ জাগ্রত করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যতটা না অর্জন করা যায়, তারচেয়ে বেশি পরিবার থেকে অর্জন করেন মানুষ।
একটি আদর্শ পরিবারে অন্যতম কাজ হলো পরিবারের সবাই মিলেমিশে বাস করা। পরিবারের সবাই একটি নির্দিষ্ট শৃঙ্খলার মধ্যে বাস করেন। তারা বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখেন এবং শান্তিতে বাস করেন।
পরিবারের কারও বিপদে পরিবারের অন্যরা তাকে মানসিকসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য করেন। ফলে তিনি তার বিপদ থেকে দ্রুত সেরে উঠতে পারেন। একটি আদর্শ পরিবারের লোকজন সর্বদা একে অন্যের প্রতি সহযোগী মনোভাব প্রকাশ করেন। কেউ বিপদে পড়লে তার সাহায্যে সবাই একসঙ্গে এগিয়ে আসেন।
আধুনিক যুগে অনেকে ‘যন্ত্র’ হয়ে গেছেন। যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তি দিতে পারে পারিবারিক বন্ধন। আমাদের সমাজে দিনদিন পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যাচ্ছে বলে নানা অস্থিরতা বাড়ছে। সব ধর্মীয় বিধানে রক্তের সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সমাজের মৌলিক ভিত্তি হলো পরিবার। একটি পরিবার একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান। পরিবার ভবিষ্যৎ জীবনের পথ নির্দেশনা দেখায়। জীবন আসলে গড়ে ওঠে পরিবার থেকে। পরিবারকেই মানুষের সর্বপ্রথম বিদ্যাপীঠও বলা হয়।
পারষ্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা ও দৃঢ় বন্ধনের মাধ্যমে পরিবারে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ সমাজের নেতৃত্বের জায়গায় পৌঁছাতে পারেন। তাই মানুষের জীবন গঠনে পরিবারের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসে প্রত্যাশা, প্রতিটি পরিবারের পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় হোক।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন