শুক্রবার, ১৪ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্যাস সংকটে নাকাল শিল্পাঞ্চল, সরবরাহ বৃদ্ধির বিকল্প নেই

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০১:২২ অপরাহ্ন, ৯ই নভেম্বর ২০২৪

#

গ্যাস সংকটে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক কারখানার উৎপাদন হুমকিতে, আবার কোনো কোনোটি বন্ধের পথে আছে। বাধ্য হয়ে মালিকরা শ্রমিক ছাঁটাই করছেন। উৎপাদন কম হওয়ায় কমছে পণ্য রপ্তানি, বিদেশ থেকে বাড়ছে কাঁচামাল আমদানি। ফলে দেশের রিজার্ভ সংকট বৃদ্ধি পাবে।

নতুন করে গ্যাসের সরবরাহ না বাড়ায় দেশে সংকট বেড়েই চলছে। গ্যাস স্বল্পতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত হচ্ছে শিল্প খাত। দিনে গ্যাসের ঘাটতি প্রায় ১৩৫ কোটি ঘনফুট। শিল্পকারখানাগুলো চাহিদার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম গ্যাস পাচ্ছে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, নরসিংদী, চট্টগ্রামসহ দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে এই সমস্যা দিন দিন আরো প্রকট হচ্ছে। শিল্প খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, ভোগান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, কারখানা চালু রাখার চেয়ে বন্ধ রাখলেই লাভ বেশি।

বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে দিনে প্রায় ৪২০ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে এলএনজিসহ গড়ে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২৮৫ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে আমদানি করা গ্যাস (এলএনজি) ৮৯ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুতে দেয়া হচ্ছে ৯৩ কোটি, শিল্পে ১০২ কোটি, সার কারখানায় ২০ কোটি, সিএনজিতে ১ কোটি এবং আবাসিক ও বাণিজ্যে ৫৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস।

দেশের শিল্পকারখানার অবস্থা খুব শোচনীয়। এমনিতেই গ্যাসের চাপ থাকে না, তা আরো কমে গেছে। শিল্প মালিকরা বলছেন, গ্যাস সংকটে প্রতিদিন তাদের বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে। ডিজেল দিয়ে  কারখানা চালু রাখতে হলে বাড়তি খরচের কারণে শিল্প উৎপাদন গভীর সংকটে পড়বে। কারখানা বন্ধ হলে কিংবা বেতন দিতে না পারলে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে যাবেন।

শিল্পের মধ্যে পোশাক খাতেই বেশি গ্যাস ব্যবহার হয়ে থাকে। গার্মেন্টসে বাষ্প তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। নতুন করে গ্যাস সংকট উৎপাদন কাঠামোকে এলোমেলো করে দিয়েছে। গার্মেন্টসে কাজের সময় হঠাৎ গ্যাসের চাপ কমে গেলে যে কাপড় মেশিনে আছে, সেটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। উপযুক্ত পরিমাণে গ্যাসের চাপ না থাকলে যে কাপড়টি রং করা হলো, সেটি আবারও রং করতে হয়। গ্যাস সংকটের কারণে এভাবে ধাপে ধাপে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

দিনে গ্যাসের চাপ থাকে না বললেই চলে। গ্যাসের চাপ যেখানে ১৫ পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চি) থাকার কথা, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ১ থেকে ২ পিএসআই। এত কম চাপের কারণে জেনারেটর চালু হয় না। এ কারণে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে অনেক খানে। যেখানে পিএসআই একটু বেশি পাওয়া যায়, তার সঙ্গে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়িয়ে কোনো রকমে জেনারেটর চালু করা যায়। এ পদ্ধতিতে কিছু কিছু গার্মেন্টস চলছে। তবে তা উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের মতো। আবার জেনারেটর চালাতে অতিরিক্ত বিদ্যুতের ব্যবহার উৎপাদন ব্যয় বাড়াচ্ছে।

চট্টগ্রামে ছোট-বড় প্রায় ১ হাজার ২০০ কারখানায় গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৮ থেকে ১০ কোটি ঘনফুট। চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থাকছে প্রায় ৩০ শতাংশ। ইস্পাত শিল্পে রড তৈরির রোলিং মিলে গ্যাস লাগে। আবার রড তৈরির মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিলেট উৎপাদনেও দরকার হয় গ্যাসের। এটির জোগান ঠিকমতো না পেলে সমস্যায় পড়তে হয়। ইস্পাতের মতো সিমেন্ট ও কাচ শিল্পেও গ্যাস সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। সিমেন্ট শিল্পে জেনারেটর চালু রাখতে এবং কাঁচামাল শুকানোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দরকার।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, শিগগিরই গ্যাস সংকট দূর হবে না। বিগত সরকারগুলোর দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধানের চেয়ে আমদানিতেই ঝোঁক বেশি ছিল। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস অনুসন্ধানে বেশি নজর দেয়া হয়নি। এতে করে গ্যাসের উৎপাদন ও চাহিদার ব্যবধান দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে সংকট ঘনীভূত হয়েছে। অন্যদিকে উচ্চমূল্যের কারণে পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু দেশের শিল্প কারখানা বাঁচিয়ে রাখতে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের বিকল্প নেই। গ্যাস সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে দেশের অর্থনীতির জন্য  অশনিসংকেত বয়ে আনবে।
 
আই.কে.জে/

গ্যাস সংকট

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন