ছবি - সংগৃহীত
২০০১ সালে প্রথমে ব্রিকস জোটের চিন্তা আসে। তখন এর নাম ছিল ব্রিক। সদস্য ছিল চারটি দেশ—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন। ২০০৯ সালে এই দেশগুলোর প্রথম বৈঠক হয়েছিল। এরপর ২০১০ সালে তাদের সাথে যোগ দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকার এস অক্ষর ব্রিকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন নাম হয় ব্রিকস। ইংরেজি অক্ষর বি, আর, আই, সি এবং এস। এই অক্ষরগুলো পাশাপাশি বসিয়ে ‘ব্রিকস’ শব্দটির উৎপত্তি। এই অক্ষরগুলো নেওয়া হয়েছে জোটের দেশগুলোর নাম থেকে। আরও স্পষ্ট করে বললে, ব্রাজিলের বি, রাশিয়ার আর, ইন্ডিয়ার আই, চীনের সি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার এস। মূল প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের নামের আদ্যক্ষর দিয়েই সংগঠনের নামকরণ করা হয়েছে।
ব্রিকস দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩৫০ কোটি, যা বৈশ্বিক জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ। আর প্রতিষ্ঠাকালীন পাঁচ দেশেই আছে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ। জোটের সদস্য ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি। চীনের সংখ্যাও প্রায় একই। এ ছাড়া ব্রাজিলের জনসংখ্যা ২১ কোটি, রাশিয়ার ১৪ কোটি, দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ কোটি। জনসংখ্যার বিবেচনায় এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জোট।
২০টি দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এবারের সম্মেলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এবারের সম্মেলনে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ডলার কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প মুদ্রা চালু করা। এবারের সম্মেলনের আলোচ্যসূচির প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুইফটকে (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফাইন্যানশিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ব্রিকস-নেতৃত্বাধীন পেমেন্ট সিস্টেমের চালু করা। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের বিষয়েও এবারের সম্মেলনে আলোচনা করেন পশ্চিমা বিরোধী এই জোটের শীর্ষ নেতারা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মেরুকরণে ব্রিকস আলোচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ এই জোটের সদস্য ভারত, চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরান, সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইথিওপিয়া এই দশটি দেশ বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যই এই জোট নিয়ে পশ্চিমারা বরাবরই চিন্তিত। আর পশ্চিমাদের মোড়লগিরি বন্ধ করতেই এই জোটকে শক্তিশালী করতে চায় সদস্য দেশগুলো। আর তার কারণেই বিশ্বরাজনীতির ডামাডোলের মধ্যেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ডাকে বিশ্বের এতগুলো প্রভাবশালী নেতা এবারের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হয়েছেন।
তবে এবারের সম্মেলন রাশিয়া ও পুতিনের ক্ষেত্রে ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমারা রাশিয়াকে একঘরে করে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। কিন্তু ব্রিকস সম্মেলন তাদের গালে চপেটাঘাত। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত এটাই সর্বোচ্চ সম্মেলন। কাজানে ব্রিকস সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের একত্রিত করার মাধ্যমে রাশিয়া প্রমাণ করলো যে, রাশিয়া বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তাদেরও শক্তিশালী মিত্র বা অংশীদার রয়েছে।
ব্রিকস পশ্চিমাবিরোধী বৃহত্তম অর্থনৈতিক জোট। সে জন্যই পশ্চিমারা শুরু থেকেই ব্রিকসকে সন্দেহের চোখে দেখে। তাদের হুমকি মনে করে। তবে ভবিষ্যৎ বলে দিবে, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্রিকস কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে।
আই.কে.জে/