ছবি- সংগৃহীত
বেসরকারি কিংবা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বেশির ভাগ মানুষই নিয়োজিত। সরাসরি ব্যক্তি খাতেই কাজ করছেন ৪৭.৯ শতাংশ মানুষ। সুতরাং তথ্য-উপাত্ত বলছে, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিই বেসরকারি খাত। যার নেতৃত্ব দেন দেশের ছোট-বড় শিল্পোদ্যাক্তারা। অথচ তারাই এখন নানান সংকটের মুখোমুখি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২-২৩ সালের একটি জরিপে বলা হয়েছে, দেশের জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ২৩.১০ শতাংশ। এর মধ্যে বড় শিল্পের অবদানই ১১.২০ শতাংশ। বড় শিল্পে ভর করে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার আকারও বড় হচ্ছে। বিবিএসের ২০২২ সালের আরেকটি জরিপের তথ্য বলছে, দেশের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার আকার পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ৮৬ লাখ মানুষ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় জড়িত। ২০২৩ সালে বিবিএসের আরেকটি জরিপ বলছে, দেশের সাত কোটি ১০ লাখ মানুষ কর্মে নিয়োজিত রয়েছেন। যার মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশেরও কম সরকারি চাকরিতে আছেন।
একটা সময় ছিল হরতাল অবরোধের কারণে ব্যবসার বিপুল ক্ষতি হতো। ২০১৫ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বলেছিল, ২০১৩-২০১৫ সাল পর্যন্ত শুধু হরতাল-অবরোধের কারণে ব্যবসার ক্ষতি হয়েছিল এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এক গবেষণায় বলা হয়, করোনাকালে দেশের ৮৮ শতাংশ ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এছাড়া ঘুর্ণিঝড়, বন্যা, খরাসহ নানা ছোটখাটো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আন্দোলন, বিক্ষোভ, ধর্মঘট, শ্রমিক অসন্তোষসহ মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণেও ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়।
বেসরকারি খাতের সাফল্যের প্রধান তিন চালিকাশক্তি হলো-কৃষি, গার্মেন্টস এবং রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়)। মোট বৈদেশিক আয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে গার্মেন্টস ও রেমিট্যান্স থেকে।আর মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশের বেশি কৃষি থেকে। শুধু অর্থনীতি নয়, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে খাতগুলো। দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টিহীনতা দূর, শিক্ষা, চিকিৎসা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বাল্যবিয়ে রোধ, বিভিন্ন অপরাধ কমানো এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে খাতগুলোর অবদান সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ এই তিন খাতের ওপর ভর করে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এই তিন খাতকে আরও এগিয়ে নিতে সময়ের সঙ্গে মিল রেখে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জরুরি।
বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামো কৃষিভিত্তিক। শস্য, মাঠ এবং প্রাণিসম্পদ--তিন খাতকে কৃষির মধ্যে ধরা হয়। দেশের ৭০ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। খাদ্য সরবরাহের প্রধান উৎসই এ খাত। সরকারি তথ্য অনুসারে মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) কৃষির অবদান ১৪ শতাংশ। কিন্তু কর্মসংস্থানের দিক থেকে প্রথম অবস্থানে এ খাত। বর্তমানে প্রায় ৭ কোটি শ্রমশক্তির মধ্যে কৃষিতেই রয়েছে দুই কোটি ৬০ লাখের বেশি। অর্থাৎ মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশের বেশি কৃষিতে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির আরেক চালিকাশক্তি পোশাক শিল্প। আশির দশক পর্যন্ত মোট রপ্তানির ৫০ শতাংশ ছিল পাট ও পাটজাত পণ্য। এরপর পাটকে পেছনে ফেলে পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু। বর্তমানে বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। সারা পৃথিবীতে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাতি দিয়েছে এই পণ্য। শ্রমঘন এ শিল্পটি ৪৪ লাখ মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান করেছে। এ খাত থেকে রপ্তানি আয় প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা দেশে মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট সব দুর্যোগ মোকাবেলা করে ব্যবসা চালু রাখেন। মানুষ যাতে কর্মহীন না হয়, দেশ যাতে লাভবান হয় সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।
আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন