ছবি: সংগৃহীত
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে না। সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে এসবের প্রতিফলন বাজারে নেই। ফলে টানা দরপতনের মুখে পড়েছে বাজার। আস্থাহীনতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ কমছে। স্থানীয় অনেক বিনিয়োগকারীও নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না।
পরিস্থিতি এত জটিল যে, গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে ‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের’ (ডিএসই) সূচক। এর ফলে বাজারের গড় লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে একটানা দরপতন চলছে। গত সপ্তাহে শত পয়েন্টের বেশি দরপতন ঘটে।
শেয়ারের দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের’ (বিএসইসি) কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। অদৃশ্য শক্তির ইশারায় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছে না, বা রাখছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
আমরা মনে করি, শুধু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দিয়ে শেয়ার বাজার স্থিতিশীল হবে না। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে শেয়ার বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বাজার সংস্কারে নানা পদক্ষেপের কথা জানানো হলেও বাস্তবে কোনো উন্নতির লক্ষণ দেখা যায়নি। বাজারে বিদেশিরাও বিনিয়োগ কমিয়ে দিচ্ছেন। তালিকাভুক্ত শীর্ষ পাঁচ কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ কমছে।
সর্বশেষ ডিএসই-এর প্রধান সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালের ১৮ই এপ্রিল সূচকের অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৬৮৬ পয়েন্ট। অর্থাৎ, এক বছরে সূচক কমেছে প্রায় ৭০০ পয়েন্ট। গত একমাসের ব্যবধানে ডিএসই সূচক হারিয়েছে ২০৮ পয়েন্ট। অর্থাৎ, প্রতিদিনই সূচক হারাচ্ছে বাজার।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে গড় লেনদেন হয় ৪৫০ কোটি টাকার। ফেব্রুয়ারিতে ৪০০ কোটি টাকার। এপ্রিলে এখনো পর্যন্ত গড় লেনদেন ৩৫০ কোটি টাকায় নেমেছে। এভাবে প্রতি মাসে গড় লেনদেন কমছে, ক্রমাগতভাবে কমতে থাকলে শেয়ার বাজার আরো সংকটে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
বেশ কিছুদিন ধরে শেয়ার বাজারে ভালো কোম্পানিগুলোর শেয়ার অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। এর বিপরীতে দুর্বল মানের কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। কারসাজির মাধ্যমে এসব শেয়ারের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। এর ফলে ভালো বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
শেয়ার বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। আস্থা ফেরাতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না। উল্টো কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। যারা শেয়ার ধরে রেখেছিলেন, তারাও সেগুলো ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এটা বাজারের জন্য বড় রকমের অশনিসংকেত। যারা বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা লাভ তো দূরের কথা, মূলধন ফিরে পাবেন কী না, সেটা নিয়ে ভীত হয়ে পড়েছেন।
শেয়ার বাজারের অস্বাভাবিক দর পতনের ধারা থেকে বাজারকে বের করে আনার প্রধান উপায় হচ্ছে তারল্য ও আস্থার সংকট দূর করা। এজন্য প্রয়োজন এসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার উদ্যোগ। মনে রাখতে হবে, শেয়ার বাজারের সংকট আরো তীব্র হলে দেশের অর্থনীতিতেও অস্থিরতা বাড়বে।