শুক্রবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১১ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** হজ ফ্লাইট শুরু ২৯শে এপ্রিল *** থাইল্যান্ডে প্রবেশে বিদেশিদের জন্য বাধ্যতামূলক নতুন নিয়ম *** পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ঢাকা সফরে আসছেন না *** কাশ্মীরের মানুষকে শত্রু ভাববেন না: মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ *** অভ্যুত্থানকারীরা কেন সংবিধান বাতিলের দাবি তুলেছেন, ব্যাখ্যা দিলেন রেহমান সোবহান *** ড. ইউনূসকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস কাতারের প্রধানমন্ত্রীর *** ‘ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করলেও রপ্তানি কমবে না’ *** শিক্ষার্থীদের ‘তিন-শূন্য মানুষ’ হিসেবে প্রস্তুত করার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টার *** কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক *** মুক্তি পেলেন খাগড়াছড়িতে অপহৃত পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী

শিক্ষকদের আর কত অপমান সইতে হবে?

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৬:৩৪ অপরাহ্ন, ২৪শে এপ্রিল ২০২৫

#

পদত্যাগপত্রে জোর করে সই নেওয়া হয় ভাটিয়ারী হাজি তোবারক আলি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্যের (মাঝে সাদা শার্ট) কাছ থেকে। ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

শিক্ষকদের অপমান-অপদস্থ করে পদত্যাগে বাধ্য করানোর ধারা দেশে এখনো চলমান। বিশেষ করে, ধর্মীয় বিশ্বাসের নিরিখে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধারাবাহিকতার সঙ্গে সংখ্যালঘু শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ করানোর ঘটনা ধারাবাহিকভাবেই ঘটে আসছে। সুখবর ডটকম এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও কোথাও আজ পর্যন্ত দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ফলে ঘটনাগুলো থামছে না। শিক্ষকদের লাগাতার অপমানের প্রভাব শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ছে। পদত্যাগ করানোয় ও তাদের স্থলে যোগ্য শিক্ষক না পাওয়ার কারণে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একপ্রকার স্থবির হয়ে আছে। সেসব প্রতিষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজমান।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী হাজি তোবারক আলি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্যকে ‘মব’ সৃষ্টি করে পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়। স্থানীয় বিএনপির একনেতা বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হতে না পারায় দলবল নিয়ে প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করান বলে অভিযোগ ওঠেছে।

সেখানে সভাপতি পদ নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। জামায়াতের নেতা সভাপতি হওয়ার কারণে বিএনপির নেতা দলবল নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘মব’ সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দেন।

ঘটনার বিষয়ে ২০১৯ সাল থেকে ওই বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসা কান্তি লাল আচার্য গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি এখন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিদ্যালয়ে যেতে পারছি না। জানি না, এখন আমি কী করব! তারা আমাকে বলেছিল লিখতে হবে, দুর্নীতির কারণে পদত্যাগ করেছি। আমি তো কোনো দুর্নীতি করিনি।’

তিনি বলেন, ‘প্রাণভয়ে বাধ্য হয়ে তাই দুই লাইনের পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত কারণের কথা লিখেছি। আমার ৩৫ বছরের  শিক্ষকতার জীবনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। এখন অসহায়ত্ব বোধ করছি। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের সঙ্গে বা কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। অথচ আমাকেই ভিকটিম করা হলো।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার সন্তানরা কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, কেউ যার যার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। জীবনের শেষবেলায় তারাও দেখল, তাদের শিক্ষক বাবাকে কীভাবে হেনস্তা করা হয়েছে।’

ওই শিক্ষকের মেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তার ফেসবুকে লেখেন, ‘জানেন, আমরা বাবার অপদস্থ হওয়ার ভিডিও দেখে রাতে ঘুমাতে পারছি না। ভাবুন, তিনি শিক্ষক নন শুধু, তিনি আমাদের বাবা। আপনার বাবার সঙ্গে এমন হলে আপনার কেমন লাগবে বলুন!’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘কী সুন্দর- তাই না! আমার বাবা কত মানুষকে ঘরে রেখে পড়িয়েছেন, কত মানুষকে টাকা ছাড়া পড়িয়েছেন, কত মানুষের ফি মওকুফ করেছেন। আজ এক শিক্ষকের এ অবস্থা! এ আকুতি শুধু এক মেয়ের নয়, এটি প্রতি শিক্ষক বাবার সন্তান, প্রতি বিবেকবান ছাত্রের আকুতি।’

গত বছরের ৫ই আগস্টের পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘মব’ সৃষ্টি করে শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করানোর ধারা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়- সর্বত্র এমন ঘটনা ঘটে। অনেক  শিক্ষক মারধর ও মামলা থেকেও রেহাই পাননি।

প্রথমদিকে ছাত্রদের মাধ্যমে এটা করানো হলেও পরে এর সঙ্গে নানা রাজনৈতিক ও স্বার্থান্বেষী মহল প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হয়। কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও অনেক শিক্ষক আছেন, যারা চাকরিতে বহাল থাকলেও তাদের ক্লাস নিতে দেওয়া হচ্ছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সারাদেশে এ পর্যন্ত অন্তত দুই হাজার শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষককে এভাবে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮০০ শিক্ষক চাকরি ফিরে পেতে আদালতে গিয়েছেন। শুধু ঢাকা শহরেই পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন দুই শতাধিক শিক্ষক। এসব শিক্ষক বেতনও পাচ্ছেন না। 

মন্ত্রণালয় বলছে, যাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, তাদের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যাবে না, তাদের  সবেতন চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। মুখে বললেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের কার্যক্রম এখনো দৃশ্যমান নয়।

এমন পরিস্থিতি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত। এভাবে চললে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার আইনগত প্রক্রিয়া আছে।

তা অনুসরণ না করে ‘মব’ তৈরি ও জোর করে শিক্ষকদের সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাই প্রশ্নের মুখে পড়ছে। এসব মোকাবেলা করতে রাষ্ট্র চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এভাবে আর কত শিক্ষককে অবমান সইতে হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন!

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিক্ষাঙ্গনকে আবারও সচল ও সজীব করে তুলতে এখন সবার ভূমিকা কাম্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক–শিক্ষার্থীর সম্পর্ক শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি। সেখানে অনভিপ্রেত ও অনাকঙ্ক্ষিত কিছু ঘটুক, আমরা চাই না। এ ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটিই কাম্য।

এইচ.এস/

শিক্ষক

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন